অরুণাচলপ্রদেশের পাঁচ যুবককে অপহরণ করল চিনা বাহিনী

এমন সন্দেহ উঠে আসছে যে, লাদাখের থেকে নজর ঘোরাতেই চিন এখন অরুণাচলের দিকে
প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় অস্থিরতা তৈরি করতে চাইছে।

September 6, 2020 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

লাদাখে চিন-ভারত সংঘাতের পরিস্থিতি। রাশিয়ায় বৈঠক করছেন দুই দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। এরই মধ্যে দেশের পূর্ব সীমান্তে, অরুণাচলপ্রদেশ থেকে পাঁচ তরুণকে অপহরণ করল চিনা বাহিনী। অন্তত পরিবারের তেমনটাই দাবি। এমন সন্দেহ উঠে আসছে যে, লাদাখের থেকে নজর ঘোরাতেই চিন এখন অরুণাচলের দিকে
প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় অস্থিরতা তৈরি করতে চাইছে।

কংগ্রেসের বিধায়ক নিনং এরিং জানান, আপার সুবনসিরি জেলার নাচো সেক্টরের কাছে জঙ্গলে শিকারে গিয়েছিলেন টাগিন জনজাতির সাত তরুণ। সেখানে সেরা-৭ এলাকা থেকে পিএলএ বাহিনী পাঁচ তরুণকে অপহরণ করে সীমান্তের ও-পারে নিয়ে গিয়েছে। তাঁদের সঙ্গে থাকা দুই যুবক কোনও ভাবে পালিয়ে আসতে পেরেছেন। তাঁরাই ফিরে খবর দিয়েছেন গ্রামবাসীদের।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, চিনা বাহিনীর হাতে আটক হওয়া তরুণদের নাম টোচ সিংকাম, প্রসাদ রিংলিং, ডোংটু এবিয়া, টানু বাকের ও গারু দিরি। সেনার কাছে অপহৃতদের পরিবারগুলির আর্জি, অবিলম্বে চিনা সেনার সঙ্গে আলোচনা করে তরুণদের ছাড়িয়ে আনা হোক।

অবশ্য আপার সুবনসিরি জেলার এসপি কেনি বাগরা জানাচ্ছেন, বিষয়টি নিয়ে পরিবার বা গ্রামের তরফে সরকারি ভাবে পুলিশে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। খবর নিয়ে জেনেছেন, ওই তরুণেরা শিকারে গিয়েছিলেন। তখনই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে ঘটনাটি ঘটেছে। কিন্তু তাঁদের যে চিনা সেনাই নিয়ে গিয়েছে— তা সরকারি ভাবে বলা যাচ্ছে না।

নাচো থানা জানাচ্ছে, থানা থেকে ঘটনাস্থল ১৩০ কিলোমিটার দূরে। গাড়ি যত দূর যায়, তার পরেও ২ দিন পায়ে হেঁটে পাহাড় পার করে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে পৌঁছতে হয়। পুলিশ অনুসন্ধান শুরু করলেও তিন দিনের আগে কিছুই নিশ্চিত করে বলা যাবে না।

অপহৃতদের অন্যতম প্রসাদ রিংলিং। তাঁর দাদা প্রশান্ত রিংলিং শিকারে যাওয়ার কথা অস্বীকার করে দাবি করেছেন, তাঁর ভাই ছাত্র। করোনায় স্কুল বন্ধ থাকায় মাঝেমধ্যে হাতখরচার জন্য পোর্টারের কাজ করেন। ভারতীয় সেনার সঙ্গে সে চিন সীমান্ত দেখতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকেই খবর আসে, ভাই ও তাঁর বন্ধুদের চিনারা নিয়ে গিয়েছেন। এর বেশি কিছু জানেন না কেউ।

প্রশান্তের দাবি উড়িয়ে দিয়ে সেনা মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল হর্ষবর্ধন পাণ্ডে জানান, ওই সীমান্তে কোনও সেনা গতিবিধি হয়নি। তাই পোর্টারদের সঙ্গে নিয়ে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। তরুণদের দলটি জঙ্গলে শিকার করতেই গিয়েছিল। জঙ্গলে সীমান্ত নির্দিষ্ট না-থাকায় হয়তো তাঁরা চিনা বাহিনীর মুখোমুখি পড়েছেন। কিছুই এখনও নিশ্চিত নয়। পরিবারের লোকও নির্দিষ্ট করে কিছু জানাতে পারেননি। সেনাবাহিনী পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে।

প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে চিনা সেনা পিএলএ-র হাতে গ্রামবাসীদের ধরা পড়ার ঘটনা অবশ্য নতুন নয়। চলতি বছরেই গত ১৯ মার্চ আপার সুবনসিরি জেলার আসাপিলা সেক্টর থেকে ২১ বছরের টংলে সিনকামকে অপহরণ করেছিল চিনা সেনা। ভারতীয় সেনার হস্তক্ষেপে ৭ এপ্রিল তাঁকে মুক্ত করে পিএলএ।

সেনাবাহিনীর বক্তব্য, অপহৃতদের পরিবারকে ধৈর্য ও সংযম রাখতে হবে। তাঁরা যদি বলেন, তরুণেরা কেউ সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত, তা হলে অপহৃতদের মুক্তির সম্ভাবনা কমে, অত্যাচারের আশঙ্কাও বাড়ে।

নিনং এরিং বলেন, “চিনা সেনারা বারবার ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকছে, ভারতীয়দের তুলে নিয়ে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের অবিলম্বে এ নিয়ে হস্তক্ষেপ করা উচিত।” তাঁর সন্দেহ, লাদাখ থেকে নজর ঘোরাতেই হয়তো চিন এ বার অরুণাচল সীমান্ত অস্থির করতে চাইছে।

চিনা অনুপ্রবেশ নিয়ে শুধু বিরোধীরা নয়, সরব শাসক দলের সাংসদ তাপির গাও-ও। তিনি দাবি করেন, সেনাবাহিনী সবই জানে। কিন্তু সত্যি বলার ক্ষমতা নেই তাদের। তাপিরের দাবি, বহু বছর ধরেই চিনা সেনা অরুণাচলের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা দিয়ে অনুপ্রবেশ চালাচ্ছে। চিনারা ২০১৭ সালে আপার সিয়াং দিয়ে ভারতের ২০০ মিটার ভিতর পর্যন্ত রাস্তা তৈরি করে ফেলেছিল। ২০১৯ সালে দিবাং উপত্যকায় ১২ কিলোমিটার ভিতর পর্যন্ত চলে এসেছিল তারা। ছাগলম সেক্টরে ডিয়োমরু নালার উপরে তারা সেতুও তৈরি করে। আনজাও, মেচুকায় সীমান্তগ্রামে চিনাদের সঙ্গে গ্রামবাসীদের হামেশা মোলাকাত হয়।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen