দেশে এক বছরে ৮৪ শতাংশ বেড়েছে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ, বেশিরভাগ ঘটনাই ঘটেছে বিজেপি শাসিত রাজ্যে, বলছে রিপোর্ট
যে রাজ্যকে মডেল বানিয়ে দেশকে বিশ্বগুরুতে পরিণত করার স্বপ্ন দেখেন প্রধানমন্ত্রী, সেখানেই চরম অরাজকতা।

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: গত লোকসভা ভোটে বারাণসীতে মনোনয়ন পেশের দিন এক সাক্ষাৎকারে নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, ‘আমি হিন্দু-মুসলিম বিভাজন করি না। যেদিন করব, সেদিন রাজনীতিই ছেড়ে দেব।’ অথচ তার একমাস আগে থেকে তিনি খুল্লমখুল্লা ধর্মীয় মেরুকরণের তাস খেলতে শুরু করেছেন। কখনও কংগ্রেসের ইস্তাহারকে বলেছেন ‘মুসলিম লিগের ঘোষণাপত্র’, কখনও আবার ‘ওরা ক্ষমতায় এলে মা-বোনেদের মঙ্গলসূত্র কেড়ে অনুপ্রবেশকারীদের হাতে তুলে দেবে’। এসসি, এসটি, ওবিসিদের সংরক্ষণ কেড়ে নিয়ে মুসলিমদের দেওয়া কিংবা রামমন্দিরে ‘বাবরি তালা’ লাগানোর দাবিও করেছেন বারবার। ‘আচ্ছে দিন’, ‘সব কা সাথ, সব কা বিকাশ’ ভুলে এভাবে আম জনতাকে ধর্মের টনিক গেলানোর ফল মিলেছে হাতেনাতে। গত এক বছরে দেশে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ বেড়েছে ৮৪ শতাংশ। মোট ৫৯টি এমন ঘটনা ঘটেছে ২০২৪ সালে। আর এরমধ্যে ৪৯টিই বিজেপি শাসিত ‘ডবল ইঞ্জিন’ রাজ্যে। সেন্টার ফর স্টাডি অব সোসাইটি অ্যান্ড সেকুলারজিমের সাম্প্রতিক রিপোর্টে উঠে এসেছে সেই তথ্য।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে সাম্প্রদয়িক সংঘর্ষের সংখ্যা ছিল ৩২। ২০২৪ সালে তা এক লাফে বেড়ে ৫৯-এ পৌঁছেছে। অর্থাৎ, এক বছরে ৮৪ শতাংশ বেড়েছে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিশানা করা হয়েছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে। মারা গিয়েছেন মোট ১৩ জন। তাঁদের মধ্যে ১০ জন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এবং তিনজন হিন্দু। বছরভর চলা এমন ধর্মীয় হিংসার আঁতুড়ঘর মহারাষ্ট্র। বিজেপির নেতৃত্বে মহাযুতি জোট সেখানে ক্ষমতায়। গত বছর সে রাজ্যে মোট ১২টি সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা ঘটেছে। এরপর যৌথভাবে রয়েছে বিহার ও উত্তরপ্রদেশ। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী ‘দলবদলু’ নীতীশ কুমার এখন মোদীর কাছে সোনার ডিম পাড়া রাজহাঁস। প্রায়শই স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বলেন, ‘সব ঠিক হ্যায়’। কিন্তু তাঁর সময়কালে গৌতম বুদ্ধের বিহারের আসল চিত্রটা মোটেই ঠিক নেই। বিগত লোকসভা নির্বাচনে রামের নামে উত্তরপ্রদেশে কোনওক্রমে পার হয়েছে নির্বাচনী বৈতরণী। রামমন্দির ইস্যুকে সামনে রেখে আখের গুছিয়েছেন যোগী ও মোদী। আর সেই রামরাজ্যেই বর্তমানে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ চরমে। পিছিয়ে নেই মোদীর সাধের গুজরাত। যে রাজ্যকে মডেল বানিয়ে দেশকে বিশ্বগুরুতে পরিণত করার স্বপ্ন দেখেন প্রধানমন্ত্রী, সেখানেই চরম অরাজকতা। মধ্যপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, ওড়িশা ও রাজস্থানেও পরিস্থিতি প্রায় এক।
এছাড়াও সামনে এসেছে এক চমকপ্রদ তথ্য। বছরের ৫৯টি সংঘর্ষের ঘটনার মধ্যে ২৬টি ঘটেছে কোনও না কোনও ধর্মীয় উৎসব বা ধর্মীয় মিছিলকে কেন্দ্র করে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অযোধ্যায় রামমন্দিরের প্রাণপ্রতিষ্ঠার অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে পৃথক পৃথক চারটি হিংসার ঘটনা ঘটে। একইভাবে ফেব্রুয়ারি মাসের সরস্বতী প্রতিমার নিরঞ্জনকে ঘিরে সাতটি, গণেশ পুজোয় চারটি ও বকরি-ইদে দু’টি হিংসার ঘটনা সামনে এসেছে। বর্তমানে উপাসনাস্থল নিয়েও দানা বাঁধছে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প। মন্দিরের অস্তিত্ব, মসজিদের সমীক্ষা নিয়ে ক্রমবর্ধমান বিতর্কের জেরে প্রায় ছ’টি হিংসার ঘটনা ঘটেছে।