করোনার ধাক্কা সামলাতে সফল মোদী, শাহী মন্তব্যে বিতর্ক তুঙ্গে

বিশেষজ্ঞদের মতে, এত দ্রুত অমিতের ‘জয়’ ঘোষণায় হিতে বিপরীতের সম্ভাবনা। ধাক্কা খেতে পারে করোনার দ্বিতীয় ঢেউকে বেঁধে ফেলার চেষ্টা।

June 4, 2021 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

নরেন্দ্র মোদীর (Narendra Modi) নেতৃত্বে করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা সামলাতে ভারত সফল হয়েছে বলে প্রচার শুরু করে দিলেন প্রধানমন্ত্রীর প্রধান সেনাপতি অমিত শাহ (Amit Shah)। আজ গুজরাতে ন’টি অক্সিজেন প্লান্টের শিলান্যাস অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই দাবি করেন। তবে দেশে দৈনিক সংক্রমণ যখন এখনও দেড় লক্ষের কাছাকাছি, দৈনিক মৃত্যু প্রায় তিন হাজার, প্রায় গোটা দেশ লকডাউনে, করোনাভাইরাস যখন চরিত্র পরিবর্তন করে আরও ঘাতক রূপ নিচ্ছে বলে বিজ্ঞানীরা শঙ্কিত— তখন তড়িঘড়ি অমিতের এই ঘোষণা যুক্তিযুক্ত কি না, সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

করোনার প্রথম ঢেউয়ের পরেও অতিমারি রোখার সাফল্যের প্রচারে নেমে পড়েছিল সরকার। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ওই প্রচারে মূলত দু’ভাবে সমস্যা তৈরি হয়। প্রথমত, পরবর্তী ধাক্কা সামলানোর জন্য স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে যে বড় মাপের পরিকাঠামো গড়ে তোলার প্রয়োজন ছিল, তা গতি হারায়। বহু ক্ষেত্রে কাজ কার্যত থমকে যায়। হাসপাতালের শয্যা, জীবনদায়ী ওষুধ, অক্সিজেনের অভাবে মারা যান বহু মানুষ। দ্বিতীয়ত, সরকারের অতি-উৎসাহী প্রচারে জনমানসেও ভুল বার্তা যায়। দ্বিতীয় ঢেউ আসার পরে এ সবেরই খেসারত দিতে হয়। করোনার প্রথম ঢেউয়ে যেখানে দৈনিক সর্বাধিক সংক্রমণ এক লক্ষের নীচে ছিল, দ্বিতীয় ঢেউয়ে তা পেরিয়েছে চার লক্ষের গণ্ডি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এত দ্রুত অমিতের ‘জয়’ ঘোষণায় হিতে বিপরীতের সম্ভাবনা। ধাক্কা খেতে পারে করোনার দ্বিতীয় ঢেউকে বেঁধে ফেলার চেষ্টা।

দেশে সংক্রমণ আগের চেয়ে কমলেও এখনও দিনে দেড় লক্ষের কাছাকাছি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। সামান্য গা-ছাড়া মনোভাবে সংক্রমণের সূচক ফের ঊর্ধ্বমুখী হতে পারে। সেই আশঙ্কা থেকেই এখনও লকডাউন জারি রেখেছে অধিকাংশ রাজ্য। এই পরিস্থিতি সত্ত্বেও গুজরাত সরকার ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে রাজ্যের ন’টি হাসপাতালে অক্সিজেন প্লান্ট বসানোর শিলান্যাস অনুষ্ঠানে আজ অমিত বলেছেন, ‘‘অক্সিজেনের চাহিদা ১০ হাজার টন থেকে কমে ৩৫০০ টনে নেমে আসা প্রমাণ করছে, দেশে করোনার সংক্রমণ কমছে। নরেন্দ্র মোদীর সুদক্ষ নেতৃত্বের কারণেই সাফল্যের সঙ্গে করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা সামলাতে সক্ষম হয়েছে দেশ।’’ তাঁর আরও দাবি, করোনা মোকাবিলায় উন্নত দেশগুলি হিমশিম খেলেও ভারত ধৈর্য ও পরিকল্পনার জোরে এগিয়েছে। অন্য দেশগুলিতে সরকার যেখানে একক ভাবে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করছে, সেখানে ভারতে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ১৩৫ কোটি দেশবাসী লড়াইয়ে যোগ দিয়েছিলেন। সেই কারণেই ‘জয়’ সম্ভব হয়েছে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, বছরের শেষে করোনার তৃতীয় ঢেউ আরও ঘাতক রূপ নিতে পারে এবং তাতে মূলত ছোটদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ‘যুদ্ধ জেতা হয়ে গিয়েছে’ বলে ঘোষণা করা হলে পরিকাঠামোগত খামতিগুলি মেরামত ও নতুন পরিকাঠামো গড়ে তোলার কাজ ফের শ্লথ হয়ে পড়তে পারে। বিশেষ করে, শিশুদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে উন্নতির কাজ থমকে যেতে পারে। এক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘এখন সময় হল সংক্রমণের পরিধিকে একেবারে গুটিয়ে আনা। কারণ, সামান্য ত্রুটি হলেই সংক্রমণ ফের মাথাচাড়া দিতে পারে। সরকারের উচিত আত্মতুষ্টির পথে না-হেঁটে সংক্রমণকে একেবারে কমিয়ে আনা এবং দেশের সবাইকে প্রতিষেধক দেওয়া নিশ্চিত করা।’’

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen