আগামী ২ মাসে শীর্ষে সংক্রমণ
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৯৯৭১ জন। এক দিনে নতুন আক্রান্তের সংখ্যায় এটাই এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এই নিয়ে দেশে মোট করোনা-আক্রান্তের সংখ্যাও পৌঁছে গেল প্রায় আড়াই লক্ষে।
আজ সোমবার থেকে লকডাউন তুলে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। আনলক-১ পর্যায়ে খুলছে ধর্মস্থান, শপিং মল, অফিস। কেন্দ্র জানিয়েছে, নির্দিষ্ট নিয়ম-নীতি মেনে এ সব জায়গায় যাওয়া যাবে। নিয়ম ভাঙলে কড়া পদক্ষেপ করা হতে পারে বলেও জানানো হয়েছে। প্রতিটি জায়গার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার আলাদা আলাদা গাইডলাইন বা নিয়মাবলী দিয়েছে।
যেমন শপিং মল খুলে দেওয়া হলেও সেখানে একসঙ্গে প্রচুর লোক ঢুকতে পারবেন না। শপিং মলের বাইরে লাইন দেওয়া, থার্মাল স্ক্রিনিং বাধ্যতামূলক। কোনও সংহত কারণ থাকলে মল কর্তৃপক্ষ যে কোনও ব্যক্তির ভেতরে ঢোকা আটকে দিতে পারেন। কাজ ছাড়া মলের ভিতর ঘুরে বেড়ানোর ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা থাকছে।
ধর্মস্থানের ক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম জারি করা হয়েছে। ধর্মস্থানের বাইরে ৬ ফুটের সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে লাইনের ব্যবস্থা করতে হবে। লাইন দেখার জন্য নির্দিষ্ট লোক নিয়োগ করতে হবে। যে সব ধর্মস্থানে মূর্তি আছে, তাতে হাত দেওয়া নিষেধ। চরণামৃত নিষিদ্ধ। মসজিদে নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। গির্জার প্রার্থনার ক্ষেত্রেও একই নিয়ম পালিত হবে। ধর্মস্থানের বাইরে জুতো খোলার ক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট নিয়ম জারি করা হয়েছে।

রেস্তোরাঁ এবং হোটেলের ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ আসন ফাঁকা রাখতে হবে। মেনুকার্ড থেকে শুরু করে ন্যাপকিন দেওয়া — সব ক্ষেত্রেই বিক্রেতার সঙ্গে ক্রেতার সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। টাকার বদলে কার্ডে কিংবা ডিজিটাল পদ্ধতিতে পেমেন্ট নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আর হোটেলে ডিক্লেরেশন ফর্মে সই করে ঢুকতে হবে।
শর্তসাপেক্ষে যেখানে এই আনলক-১ প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে, তার আগের দিনই দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে তীব্র উদ্বেগ প্রকাশ করলেন এইমসের ডিরেক্টর রণদীপ গুলেরিয়া। সংক্রমণে রবিবারই স্পেনকে টপকে ৫ নম্বরে উঠে এসেছে ভারত, আর সেদিনই গুলেরিয়া বললেন, ‘এখন যা পরিস্থিতি, তাতে ভারতে করোনা সংক্রমণের ঘটনা আরও বাড়তে চলেছে। আগামী দু’-তিন মাসে তা শীর্ষে পৌঁছতে পারে।’
তবে জাতীয় স্তরে এই সংক্রমণ এখনও পর্যন্ত গোষ্ঠী সংক্রমণের পর্যায়ে পৌঁছয়নি বলে জানিয়েছেন এইমস-এর অধিকর্তা। যদিও আগামী দিনে ভারতে গোষ্ঠী সংক্রমণের সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেননি গুলেরিয়া। তাঁর কথায়, ‘দেশের যে যে এলাকাগুলিকে হটস্পট বলে চিহ্নিত করা হয়েছে, সেই সব এলাকায় গোষ্ঠী সংক্রমণের যথেষ্টই আশঙ্কা রয়েছে।’
এমন একটি সময়ে গুলেরিয়ার এই সতর্কবার্তা এল, যখন গত ১৫ দিনে দেশে ১ লক্ষেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। আর রবিবার সকালে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের বুলেটিনে জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৯৯৭১ জন। এক দিনে নতুন আক্রান্তের সংখ্যায় এটাই এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এই নিয়ে দেশে মোট করোনা-আক্রান্তের সংখ্যাও পৌঁছে গেল প্রায় আড়াই লক্ষে। উদ্বেগ বাড়ছে মৃতের সংখ্যা নিয়েও। রবিবার সকালে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের হিসেব অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে মৃত্যু হয়েছে ২৮৭ জনের। এই নিয়ে দেশে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে হল ৬,৯২৯। মৃতের তালিকায় এখনও শীর্ষে মহারাষ্ট্র। সে রাজ্যে মোট মৃত্যু হয়েছে ২,৬৬৯ জনের। এর পর ক্রমান্বয়ে রয়েছে গুজরাত (১,২১৯), দিল্লি (৭৬১), মধ্যপ্রদেশ (৩৯৯), পশ্চিমবঙ্গ (৩৮৩), উত্তরপ্রদেশ (২৫৭), তামিলনাড়ু (২৫১), রাজস্থান (২৩১) এবং তেলঙ্গানার (১২৩) মতো রাজ্য।