কলকাতা ও শহরতলিতে বাড়ছে করোনায় মৃত্যু

গত এক সপ্তাহ ধরেই প্রতিদিন ৩০০-৪০০ জন করে আক্রান্ত বেড়েছে। রবিবার মোট সংক্রামিতের সংখ্যা ১১ হাজারের গণ্ডি ছাড়িয়েছে।

June 15, 2020 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

রাজ্যে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ। গত এক সপ্তাহ ধরেই প্রতিদিন ৩০০-৪০০ জন করে আক্রান্ত বেড়েছে। রবিবার মোট সংক্রামিতের সংখ্যা ১১ হাজারের গণ্ডি ছাড়িয়েছে। দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুমিছিলও। রাজ্য সরকারের বুলেটিন বলছে, এখনও পর্যন্ত করোনার কারণে প্রাণ হারিয়েছেন ৪৭৫ জন। যার মধ্যে ৪২৫টি মৃত্যুই নথিভুক্ত হয়েছে মাত্র তিনটি জেলায়—কলকাতা, হাওড়া ও উত্তর ২৪ পরগনা। রাজ্যের মোট মৃত্যুর ৪৯ শতাংশেরও বেশি তিন জেলাতেই। কলকাতায় ২৯৩, হাওড়ায় ৬১ এবং উত্তর ২৪ পরগনায় ৭১ জন মারা গিয়েছেন। অথচ ১০টি জেলায় এখনও করোনায় একজনেরও মৃত্যু হয়নি। এই পরিসংখ্যানে আরও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে নবান্ন। তিনটি জেলার পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্যভবনেও আলোচনা শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্যদপ্তরের বিশেষজ্ঞরা প্রতিটি মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখছেন। তিন জেলায় মৃত্যুর ঘটনা কমাতে আরও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।

স্বাস্থ্য আধিকারিকদের নিয়ে সরকারি স্তরে উচ্চপর্যায়ের একদফা বৈঠক হয়েছে বলে সূত্রের খবর। এরই মধ্যে আজ, সোমবার ফের জীবাণুমুক্ত করা হবে গোটা নবান্ন। এদিকে, এদিন পিজি হাসপাতালের কার্ডিওথোরাসিক সার্জারি বিভাগের তিনজন রোগীর করোনা ধরা পড়েছে। এদিন পর্যন্ত মেডিসিন, অর্থোপেডিক, প্লাস্টিক সার্জারি ও নিউরো সার্জারি—এই চার বিভাগের ১৪ জন রোগী করোনায় আক্রান্ত হলেন। অন্যদিকে, বাগবাজারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ১২ জন কর্মীর কোভিড ধরা পড়ায় ইনডোর পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। আউটডোর, রোগপরীক্ষা ও ডায়ালিসিস অবশ্য চালু থাকবে। এদিন কলকাতা মেডিক্যালে ৩২০ জন (করোনা ও সারি) ও আইডি কোভিড হাসপাতালে ৭২ জন করোনা রোগী ভর্তি ছিলেন। গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড সংখ্যক রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন। মোট ৫১৮ জন। যা ছাপিয়ে গিয়েছে নতুন আক্রান্তের সংখ্যাকেও।

কলকাতা ও শহরতলিতে বাড়ছে করোনায় মৃত্যু

অন্যদিকে, মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখতে প্রথম দিকে অডিট কমিটি গড়েছিল রাজ্য। সেই কমিটি বর্তমানে না থাকলেও, তাদের তৈরি করা রিপোর্ট খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সরকারি নথি বলছে, কলকাতা, হাওড়া ও উত্তর ২৪ পরগনায় মৃতদের গড় বয়স ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে। এর মধ্যে কলকাতায় মৃত্যু সংখ্যা বৃদ্ধির একটি কারণ মোটামুটিভাবে চিহ্নিত করাও গিয়েছে। তা হল, বিভিন্ন জেলা থেকে প্রচুর সংখ্যায় কোভিড রোগী শহরের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া।

সবচেয়ে বিস্ময়ের কথা, কলকাতার ঘিঞ্জি বস্তি এলাকায় সংক্রমণ-মৃত্যু যথেষ্ট কম। বরং মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্ত পরিবার বা অভিজাত আবাসনে বেড়েছে করোনার প্রকোপ। বৃদ্ধি পেয়েছে কন্টেইনমেন্ট জোনও। আবার পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে মৃত্যুর ঘটনা নেই বললেই চলে। পরিকল্পনা ছাড়া ট্রেনে গাদাগাদি করে শ্রমিকদের ফেরানোর কারণে জেলায় জেলায় সংক্রমণ বাড়ছে বলে বারবার অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, দুই দিনাজপুর, মালদহ, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম এবং পূর্ব বর্ধমানে এখনও করোনায় কারও মৃত্যু হয়নি। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, পরিযায়ী শ্রমিকদের বয়স কম হওয়ায় তাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। এর মধ্যে ২০০ সেফ হাউসে ১০ হাজার পরিযায়ী শ্রমিককে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনাও করেছে সরকার।

অন্যদিকে, রাজ্যের হাসপাতালগুলিতে মোট ৯ হাজার শয্যা রয়েছে। বুলেটিন বলছে, এর মধ্যে সর্বাধিক ৩০ শতাংশ বেডে রোগী রয়েছেন। কলকাতায় মোট দেড় হাজায় শয্যার মধ্যে ৬০০ খালি। হাওড়ায় ফাঁকা রয়েছে ৪৫০ শয্যা। ফলে রোগী বাড়লেও বেডের অভাব হবে না বলে মনে করছ নবান্ন।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen