শুধু আনন্দোৎসবই নয়, বাংলার দুর্গাপূজা ১৫,০০০ কোটি টাকার ব্যবসাও
শিল্পী, শ্রমিক মিলিয়ে প্রায় ৪ লক্ষ মানুষের আগামী ৬ মাসের আয়ের পথ প্রশস্থ করে এই দুর্গা পুজো।
পৃথিবীর সব থেকে বড় উৎসব কলকাতার দুর্গাপুজো। শুধু তাই নয়, এই উৎসব প্রায় এক লক্ষ মানুষের আগামী ৬ মাসের রোজগারের উপায়ও। বাংলার প্রায় ৪০,০০০ বারোয়ারি এবং ২,৫০০ বাড়ি/আবাসনের পুজো কুটির শিল্পকে বেশ খানিকটা প্রভাবিত করে। মূর্তি তৈরি থেকে প্যান্ডেল তৈরি বা লাইটের কাজ, ঢাক বাজানো বা পৌরহিত্য সব জীবিকার মানুষই সারা বছর তাকিয়ে থাকে এই উৎসবের দিকে।
শুধুমাত্র কলকাতাতেই ৪,৫০০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়। আর গোটা বাংলা জুড়ে দুর্গা পুজোকে কেন্দ্র করে প্রায় ১৫,০০০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়ে থাকে। কলকাতার ২০০ টি বড় পুজো প্রতি বছর প্রায় ৫০জন করে মানুষকে কাজ দেয়, আর বাকি ৪,৩০০ টি পুজো ২০ জন করে ব্যক্তির আয়ের ব্যবস্থা করে। শিল্পী, শ্রমিক মিলিয়ে প্রায় ৪ লক্ষ মানুষের আগামী ৬ মাসের আয়ের পথ প্রশস্থ করে এই দুর্গা পুজো।

কর্পোরেট সংস্থাগুলোই গোটা কলকাতায় দুর্গা পুজোতে প্রায় ৫০০- ৬০০ কোটি টাকা ঢালে। বাকি ১৫০ কোটি টাকা আসে বিজ্ঞাপণ থেকে।
১৯৯৯- এ মাটির কাপ দিয়ে প্যান্ডেল তৈরির হাত ধরেই কলকাতার ঐতিহ্যশালী এই পুজো শুধু ঐতিহ্য থেকে শিল্প প্রদর্শনের জায়গায় পরিণত হয়। উৎসবের পুরো রূপরেখাকেই বদলে দেয়।
কোন বড় পুজোই আর পাড়ার চাঁদার ওপর নির্ভরশীল না। যেখানে ছোট পুজো গুলোর বাজেট ১৫ লক্ষ, সেখানে বড় পুজোগুলোর বাজেট ১ কোটিকেও ছড়িয়ে যায়। আর এই বিপুল রাশির সিংহ ভাগই আসে কর্পোরেট ফান্ডিং এবং বিজ্ঞাপণ থেকে।
প্রতিটি সংস্থাই বিজ্ঞাপণ দেওয়ার জন্যে দুর্গা পুজোকে আকর্ষণীয় মনে করে। এমনকি হাউজিং সোসাইটির পুজোগুলোতেও কমিউনিটি কিচেনে স্পন্সর করে তেল বা মশলা তৈরির কোম্পানি। আর বড় পুজোয় ঢাকির পোশাক থেকে প্রতিমার পোশাক, বা ভলিন্টিয়ারদের অ্যাপ্রোন সবই স্পন্সর করে কোন না কোন বড় সংস্থা।
এরকমও মনে করা হচ্ছে যে আগামী ১০ বছরে কলকাতার এই ১৫,০০০ কোটি টাকার টার্ন ওভার, ১ লক্ষ কোটি টাকার কুম্ভ মেলাকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। তাই যারা নাক উঁচিয়ে বলেন যে দুর্গা পুজো মানেই টাকার ধ্বংশ, তাদের জেনে রাখা ভালো এই উৎসবই বাংলার প্রায় ৫ লক্ষ পরিবারের রুজি রুটি।