খাদ্যসুরক্ষায় বহু রাজ্যের ভরসা এখন মমতার রেশন নীতি
জাতীয় খাদ্যসুরক্ষা প্রকল্পের আওতায় থাকা সুবিধা প্রাপকের সংখ্যা প্রতি রাজ্যে নির্দিষ্ট করে রেখেছে কেন্দ্র। প্রকল্প চালু হওয়ার পর জনসংখ্যা বাড়লেও রাজ্যগুলির কোটা আর বাড়ায়নি মোদি সরকার।

পাঁচ বছর আগের কথা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, জাতীয় খাদ্যসুরক্ষা প্রকল্পের বাইরে থাকা রাজ্যবাসীদের জন্য নিজস্ব ভর্তুকিতে রেশনে খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ করবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। সেই সময় মুখ ফেরালেও এবার দেশের একাধিক রাজ্য তাঁর দেখানো পথেই হাঁটতে বাধ্য হল। এর কারণ একটাই—করোনার সংক্রমণ। যে সঙ্কটে রেশন থেকে খাদ্য নেওয়ার চাহিদা দেশজুড়ে বেড়ে চলেছে। কিন্তু জাতীয় খাদ্যসুরক্ষা প্রকল্পের আওতায় থাকা সুবিধা প্রাপকের সংখ্যা প্রতি রাজ্যে নির্দিষ্ট করে রেখেছে কেন্দ্র। প্রকল্প চালু হওয়ার পর জনসংখ্যা বাড়লেও রাজ্যগুলির কোটা আর বাড়ায়নি মোদি সরকার।
এই পরিস্থিতিতে ঝাড়খণ্ড সরকার জাতীয় প্রকল্পের বাইরে থাকা গরিব মানুষদের জন্য নয়া রেশন প্রকল্প চালু করছে। নতুন ‘গ্রিন রেশন কার্ডের’ জন্য আবেদনপত্র নেওয়ার কাজও ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। ১৫ লক্ষ মানুষকে এর আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে হেমন্ত সোরেনের প্রশাসন। পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য সরকারের নিজস্ব খাদ্যসুরক্ষা প্রকল্পে আগামী জুন মাস পর্যন্ত বিনা পয়সায় চাল-গম দেওয়া হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছেন। ঝাড়খণ্ডের প্রকল্পটিতে অবশ্য প্রতি মাসে মাথাপিছু পাঁচ কেজি করে খাদ্যশস্য দেওয়া হবে। কেজি প্রতি এক টাকা দরে তা কিনতে হবে গ্রাহকদের।
অন্যদিকে, পড়শি রাজ্য ওড়িশায় জাতীয় প্রকল্পের পাশাপাশি রাজ্য সরকারের নিজস্ব খাদ্যসুরক্ষা প্রকল্পও রয়েছে। অবশ্য তার আওতায় থাকা গ্রাহকের সংখ্যা পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় অনেক কম (১০ লক্ষের মতো)। করোনা পরিস্থিতির পর সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের অধীনে আরও প্রায় ৫ লক্ষ মানুষকে আনা হয়েছে। সেখানেও রাজ্য সরকার রেশন বাবদ এক টাকা কেজি দরে চাল দিচ্ছে। মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাত, হিমাচল প্রদেশ, বিহার সহ বিভিন্ন রাজ্যে গত কয়েক মাসে রেশন গ্রাহকদের সংখ্যা বেশ কয়েক লক্ষ করে বেড়েছে। কিন্তু ওই সব রাজ্যগুলিতে জাতীয় প্রকল্পের কোটার থেকে কম রেশন গ্রাহক ছিল। ফলে ওই প্রকল্পে নতুন গ্রাহকদের অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া সম্ভব হয়েছে। কিন্তু আগামী দিনে সব রাজ্যে রেশনের খাদ্য পাওয়ার চাহিদা মানুষের মধ্যে বাড়তে পারে। তাই রাজ্যগুলিকে গরিব মানুষদের জন্য পৃথক রেশন প্রকল্প চালু করার পরামর্শ দিচ্ছে কেন্দ্র।
পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ৬ কোটি মানুষের কোটা জাতীয় প্রকল্প চালু হওয়ার সময়ই পূরণ হয়ে যায়। রাজ্যের দু’টি খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পের আওতায় থাকা মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪ কোটি। খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানিয়েছেন, রাজ্যে ডিজিটাল রেশন কার্ড ও খাদ্যসাথী কুপনধারী গ্রাহকের মোট সংখ্যা ১০ কোটি অতিক্রম করেছে। অক্টোবর মাস থেকে ব্যবহারের জন্য প্রায় ৪৬ লক্ষ কুপন ইস্যু করা হয়েছে। হাতে কার্ড না পাওয়া পর্যন্ত প্রয়োজনে জুন মাস পর্যন্ত কুপন ব্যবহার করা যাবে।