প্রয়াত পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত

বৃহস্পতিবার ভোর ৬টায় দক্ষিণ কলকাতায় নিজের বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। কেবল পরিচালনা নয়, সাহিত্য জগতেও সমান ভাবে প্রসিদ্ধ ছিলেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত।

June 10, 2021 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

বাংলা চলচ্চিত্র ও সাহিত্য জগতে এক সোনালি অধ্যায়ের অবসান। প্রয়াত হলেন পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত (Buddhadeb Dasgupta)। বৃহস্পতিবার সকাল ছ’টা নাগাদ ঘুমের মধ্যেই দক্ষিণ কলকাতায় নিজের বাসভবনে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বয়স হয়েছিল ৭৭।

দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত অসুখে ভুগছিলেন। কিডনির সমস্যাও ছিল তাঁর। পরিবার সূত্রের খবর, বুধবার তাঁর ডায়ালিসিস হয়েছিল। বৃহস্পতিবার আরও এক দফায় ডায়ালিসিস হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সকালে বুদ্ধদেবাবুর স্ত্রী সকালে দেখেন যে সাড়া মিলছে না প্রখ্যাত পরিচালকের। পরে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।

১৯৪৪ সালে ১১ ফেব্রুয়ারি পুরুলিয়ার আনাড়ার জন্মগ্রহণ করেছিলেন বুদ্ধদেববাবু। তাঁর বাবা রেলে চাকরি করতেন। ১২ বছরে হাওড়ার স্কুলজীবন শুরু করেন। তারপর অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন স্কটিশ চার্চ কলেজ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। অর্থনীতির অধ্যাপক হিসেবেই কর্মজীবন শুরু করেছিলেন।

বুদ্ধদেববাবুর প্রয়াণে চলচ্চিত্র জগতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পরিচালক তরুণ মজুমদার বলেন, ‘খুবই বড় ক্ষতি। আমি হতবাক।’ পরিচালক গৌতম ঘোষ বলেন, ‘এই ভয়ংকর সময় এই খবরটা আরও মর্মান্তিক। শরীর খারাপ ছিল। তবে কবিতা লিখছিলেন। ফোনে কথা বলছিলেন। একসঙ্গে স্বপ্ন দেখছিলাম। তাঁর চলচ্চিত্র যাতে সংরক্ষিত হয়, সেই আর্জি জানাব।’

বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর প্রয়ানে শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি লেখেন, সিনেমার ভাষাকে আরও কাব্যিক করে তুলেছিলেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। ওনার মৃত্যু বাংলা চলচ্চিত্র জগতের জন্য বিরাট ক্ষতি। ওনার পরিবার, সহকর্মী এবং গুণগ্রাহীদের সমবেদনা জানাই।

দক্ষিণ পুরুলিয়ার অনারা গ্রামে ১৯৪৪ সালে জন্মেছিলেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। শ্যামসুন্দর কলেজে অর্থনীতির লেকচারার হিসেবে কেরিয়ার শুরু করেছিলেন এই স্বনামধন্য পরিচালক। এই কাজ করার ফাঁকেই সিনেমার প্রতি তাঁর ভালোবাসা জন্মায়। ধীরে ধীরে সিনেমার জগতে প্রবেশ করেন তিনি। তারপর বাকিটা ইতিহাস। একের পর এক উল্লেখযোগ্য সিনেমা উপহার দিয়ে গিয়েছেন দর্শকদের। সঙ্গে ঝুলিতে পুরেছেন একের পর এক পুরস্কার।

জাতীয় পুরস্কারের মঞ্চে তার নাম হয়তো লেখা থাকবে সোনার অক্ষরে। খুব কম পরিচালক তাঁর মতো এত জাতীয় পুরস্কারের সম্মানে ভূষিত হয়েছিলেন। বুদ্ধবাবু পরিচালিত ‘বাঘ বাহাদুর’, ‘চরাচর’, ‘লাল দরজা’, ‘মন্দ মেয়ের উপাখ্যান’, ‘কালপুরুষ’ নির্বাচিত হয়েছিল সেরা ছবি হিসেবে জাতীয় পুরস্কারের মঞ্চে। সেরা পরিচালক হিসেবে দু’বার জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন বুদ্ধবাবু– ‘উত্তরণ’, ‘স্বপ্নের দিন’ ছবির জন্য। সেরা চিত্রনাট্যের জন্য জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিল তাঁর ছবি ‘ফেরা’।

পাশাপাশি বিদেশের মাটিতেও ছাপ ফেলেছিলেন নিজের। ২০০৮ সালে স্পেন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে তাঁকে Lifetime Achievement Award-এর সম্মানে সম্মানিত করে। ২০০৭ সালে গ্রিসের ‘অ্যাথেন্স ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’ -র তরফে তাঁকে দেওয়া হয়েছিল ‘গোল্ডেন অ্যাথেনা’ পুরস্কার। ২০০০ সালে ‘উত্তরা’ ছবির জন্য বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত পেয়েছিলেন ‘গোল্ডেন লায়ন’ পুরস্কার। দামাস্কাস ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘গোল্ডেন প্রাইজ’ পেয়েছিল তাঁর ছবি ‘নিম অন্নপূর্ণা’।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen