কলকাতায় বন্ধ বাজি বাজার, নির্দেশ পুলিশের
নবান্নও চায় এবার অন্তত বাজির শব্দ-ধোঁয়া ছাড়াই কালীপুজোর উৎসবে শামিল হোক রাজ্যবাসী।

শব্দবাজি হোক কিংবা পটকা অথবা রংমশাল—মহামারীর বছরে সব ধরনের বাজি নিষিদ্ধ হোক রাজ্যে। মঙ্গলবার এই মর্মে নবান্নে সুপারিশ পাঠাল রাজ্য মানবাধিকার কমিশন। নবান্নও চায় এবার অন্তত বাজির শব্দ-ধোঁয়া ছাড়াই কালীপুজোর উৎসবে শামিল হোক রাজ্যবাসী।
শুধু তাই নয়, এদিন গ্রিন ট্রাইবুন্যালও বাজি পোড়ানো সম্পূর্ণ বন্ধ করা নিয়ে হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি ও রাজস্থান সরকারের মতামত জানতে চেয়েছে। আগামীকাল মামলার শুনানি। ট্রাইব্যুনাল কী নির্দেশ দেয়, সেদিকে তাকিয়ে গোটা দেশ। কারণ, রায় যা হবে, তা কেন্দ্র এবং সেন্ট্রাল পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ড (সিপিসিবি)-এর উদ্দেশে। সেই রায় কার্যকর হবে প্রতিটি রাজ্যেই। তবে, নির্দেশ যাই হোক না কেন, অন্তত এবারের মতো কোনওভাবেই বাজি ফাটানোর পক্ষে নয় নবান্ন। প্রশাসনের তরফে রাজ্যবাসীকে সহযোগিতা করার আবেদন রেখেছেন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় (Alapan Bandopadhyay)। সব মিলিয়ে সচেতন মানুষ মাত্রই বাজি পোড়ানোর বিপক্ষে। বাজি বিক্রির লাইসেন্স সরকার যাতে না দেয়, তার জন্য হাইকোর্টে মামলাও করেছেন অনুসূয়া ভট্টাচার্য নামে এক গৃহবধূ। ফলে এবার কালীপুজো কিংবা দীপাবলি উৎসব আলো বর্জিত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কোভিডের এও এক অভিঘাত!
রাজ্যে সংক্রমণ (COVID 19) রুখতে বদ্ধপরিকর প্রশাসন। সেদিক থেকে কড়া নিয়ন্ত্রণে সফল দুর্গোৎসব। কালীপুজোতেও রাজ্যবাসীর সংযমী আচরণ চায় নবান্ন (Nabanna)। সে ক্ষেত্রে কমিশনের সুপারিশকে গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। সুপারিশে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য-সুরক্ষার খাতিরে বাজি তৈরি, বিক্রি, মজুত সহ সমস্ত ধরনের কার্যকলাপ এ বছরের জন্য বন্ধ রাখার উদ্যোগ নিক রাজ্য। নির্দেশ অমান্য করলে সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। কমিশনের চেয়ারম্যান গিরীশচন্দ্র গুপ্ত বলেন, ‘রাজ্যবাসীর সুস্বাস্থ্যের উপর আঘাত হেনেছে করোনা। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, বাজির জেরে মানুষের একাধিক সমস্যা তৈরি হয়। তাই চলতি বছরে সব বাজির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হোক। মানুষের স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে তা কার্যকর করার সুপারিশ করেছি।’ করোনা মোকাবিলায় কমিশনের ভূমিকাও বেশ সদর্থক। জেলায় জেলায় খাদ্য, ওষুধ, মাস্ক সহ একাধিক প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করেছে তারা। মূলত এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই বাজি নিষিদ্ধ করতে তৎপর কমিশন। নবান্নের এক শীর্ষ কর্তার প্রতিক্রিয়া, সরকারিভাবে এখনও কমিশনের প্রস্তাব হাতে পাইনি। সুপারিশটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে বাজি শিল্পের সঙ্গে বহু মানুষ জড়িত। সর্বোচ্চ স্তরে আলোচনা করে এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিন নবান্নে আলাপনবাবু বলেছেন, ‘সব ধরনের বাজি পোড়ানো থেকে রাজ্যবাসীকে সরে আসার আবেদন করছি। আশা করি, মানবিকতার খাতিয়ে সকলেই সহযোগিতা করবেন। দুর্গাপুজোয় সাধারণ মানুষ সংযত ছিলেন। কালীপুজোর (Kali Puja 2020) ক্ষেত্রেও তা বজায় রাখতে হবে। প্রতিমার মাথায় আচ্ছাদন রেখে প্যান্ডেল করতে হবে। চারদিক খোলা থাকবে। বিসর্জনের শোভাযাত্রা করা যাবে না। কমিটিগুলিকে পুলিস ও প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় রাখতে হবে।’