মুখ্যমন্ত্রীর ওপরেই ভরসা বন্যাকবলিত এলাকার দুর্গতদের

ভগবানপুর-২ ব্লকের মুগবেড়িয়া পেরিয়ে উদবাদালে ট্রাক্টর থেকে খাবার নামাতেই রাস্তার দু’দিক থেকে গলাসমান জল উজিয়ে হাঁড়ি, বালতি মাথায় নিয়ে ত্রাণের খাবার, পানীয় জলের প্যাকেট নিতে এগিয়ে আসছেন মহিলারা

October 3, 2021 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

মাধাখালি থেকে ইটাবেড়িয়া যাওয়ার রাস্তার উপর টানা বেশ কয়েকদিন ধরে কোমরসমান জল। সেই জল ঠেলে সাইকেলে পানীয় জল, মুড়ি, ডাল, আলু-বেগুন, রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার নিয়ে এগিয়ে চলেছেন এলাকার বহু বাসিন্দা। দূরের বাসিন্দাদের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা ট্রলি লাগানো ট্রাক্টর। বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে সেই ট্রলি ও ইঞ্জিনের উপর বসে যাতায়াত করছেন এলাকার হাজার হাজার বাসিন্দা। সেই ট্রলিতেই আবার গ্রামের দিকে যাচ্ছে স্থানীয় যুবকদের উদ্যোগে রান্না করা খাবার। 

ভগবানপুর-২ ব্লকের মুগবেড়িয়া পেরিয়ে উদবাদালে ট্রাক্টর থেকে খাবার নামাতেই রাস্তার দু’দিক থেকে গলাসমান জল উজিয়ে হাঁড়ি, বালতি মাথায় নিয়ে ত্রাণের খাবার, পানীয় জলের প্যাকেট নিতে এগিয়ে আসছেন মহিলারা। এলাকার গৃহবধূ মিনতি জানা বলেন, ৮-১০দিন ধরে জলে হাবুডুবু খাচ্ছি, জল একটুও কমছে না। ঘরের নিচতলা ডুবে রয়েছে। উপরতলায় ত্রিপল খাটিয়ে স্বামী-স্ত্রী রয়েছি। বয়স্ক শ্বশুর, ছোট ছেলে সহ বাকিরা বাঁধে ত্রিপল খাটিয়ে রয়েছে। সেখানেই গবাদি পশু বেঁধে রাখা আছে। কতদিন এভাবে চলবে জানি না। 

গাড়ির টিউব ও থার্মোকলের উপর বালতি, ড্রাম বসিয়ে পানীয় জল নিয়ে গ্রামের ভিতরের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন বেশ কয়েকজন প্রৌঢ়। তাঁদেরই একজন বলেন, কেলেঘাইয়ের বাঁধ ভাঙা জল এসে ঘর ভেঙে গিয়েছে। পুকুরের মাছ, চাষের সব্জি বা ধান চাষ সব শেষ। আগামী দিনে আমাদের কীভাবে সংসার চলবে জানি না। দুবাই, রসিকনগর, পঁচহরি, নেলুয়া, উরুড়ি, ঈশ্বরপুর, লালবাজার, মাধবপুর, মাজনানের মতো প্রত্যন্ত এলাকায় পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছচ্ছে না বলে অভিযোগ। ওই এলাকার বাসিন্দারা বলেন, যে করেই হোক অতি দ্রুত কেলেঘাইয়ের ভাঙা বাঁধ মেরামত করা হোক। মুখ্যমন্ত্রী নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেবেন। গত কয়েকদিনে বহু কাঁচা বাড়ি ভেঙে গিয়েছে। আরও কয়েকটি বাড়ি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। উদবাদাল থেকে দুবাই যাওয়ার উঁচু রাস্তার দু’দিকে অসংখ্য ত্রিপলের তাঁবুতে সংসার। সেখানেই কোনওরকমে স্টোভ, গ্যাস জ্বেলে আলু সেদ্ধ, ডাল, ভাত রান্না করছেন মহিলারা। গবাদি পশুগুলিও সেখানে বাঁধা রয়েছে। তাঁবুতে থাকা এক যুবক বলেন, ২০০৮ সালে বন্যা হয়েছিল। তবে সেবার জল অনেক কম ছিল।

এবার যে কবে জল কমবে জানি না। কতদিন এভাবে থাকতে হবে কে জানে। পঁচহরির বাসিন্দা বুদ্ধদেব জানা, গুরুপদ জানা বলেন, এলাকায় ১৫দিন ধরে বিদ্যুৎ নেই। মোবাইল চার্জ দেওয়া যাচ্ছে না। ফলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছি। বাড়ির ছাদে কোনওরকমে কাটছে।মুগবেড়িয়া গঙ্গাধর হাইস্কুল, ভূপতিনগর গার্লসে ত্রাণশিবিরে অনেকে রয়েছেন। ডুমুরদাঁড়ি হাইস্কুলেও বহু পরিবার রয়েছে। মাধাখালি থেকে নন্দীচকের ব্রিজ যাওয়ার রাস্তার উপর দিয়েও বইছে জল। জাল, ছিপ ফেলে অনেকে মাছ ধরছেন। অর্জুননগর যাওয়ার রাস্তার দু’দিকে বিঘার পর বিঘা আমন ধানের জমি জলের তলায়। গাছে পচন ধরা শুরু হয়েছে। ডুমুরদাঁড়ির এক বাসিন্দা বলেন, বন্যায় আমরা সর্বস্বান্ত হয়ে গেলাম। ত্রিপল ছাড়া আমরা কিছুই পাইনি। ঘর ভেঙে গিয়েছে। কতদিনে জল কমবে বুঝতে পারছি না। ভগবানপুর-২ ব্লকের বিডিও জয়দেব মণ্ডল বলেন, ব্লকে ২৮টি ত্রাণশিবিরে বহু মানুষ রয়েছেন। প্রতিদিন প্রায় ৩৫-৩৬ হাজার মানুষকে ভাত, ডাল, সব্জি, খিচুড়ি প্রভৃতি খাওয়ানো হচ্ছে। সব এলাকায় শুকনো খাবার, শিশুদের জন্য গুঁড়ো দুধ, ওষুধ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। আমরা সবরকমভাবে মানুষকে সাহায্য করার চেষ্টা করছি। তবে জল জমে থাকায় এখনই বিদ্যুৎ ছাড়া সম্ভব হচ্ছে না।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen