সুন্দরবন লাগোয়া মোহানায় জাল ফেললেই মিলছে ইলিশ, পৌষমাস মৎস্যজীবীদের

এক কিলো সাইজের ইলিশও উঠছে হরদম। সাগরের ঘোড়ামাড়া দ্বীপের দক্ষিণে গা ঘেঁষা মুড়িগঙ্গা, বটতলি ও হুগলি নদীর সঙ্গম এখন রুপোলি শস্যের খেতে পরিণত হয়েছে।

March 31, 2022 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

রাখে হরি মারে কে! সুন্দরবন লাগোয়া নদীর মোহানায় যাঁরা মাছ ধরেন, ভরা চৈত্রতেও তাঁদের এখন পৌষমাস। বছরভরের খরা কাটিয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ এসে ধরা দিচ্ছে জালে। জল ভেঙে সাগরেও যেতে হচ্ছে না, বরং তারাই এসে আত্মসমর্পণ করছে মৎস্যজীবীদের দুয়ারে। লাভই লাভ। মোহানায় জাল ফেললেই উঠে আসছে রুপোলি শস্য। করোনার কারণে গত দু’বছর যা ক্ষতি হয়েছিল মৎস্যজীবীদের, তা এক লহমায় পুষিয়ে দিচ্ছে ইলিশের ঝাঁক। তাও আবার অসময়ে। বর্ষা নামার অনেক আগেই নদীপথে তাদের আনাগোনা শুরু হওয়ায় খুশির ঝিলিক ধীবর পরিবারে।

কোনও ইলিশের ওজন ৫০০ গ্রাম, কোনওটা আবার ৭০০। এক কিলো সাইজের ইলিশও উঠছে হরদম। সাগরের ঘোড়ামাড়া দ্বীপের দক্ষিণে গা ঘেঁষা মুড়িগঙ্গা, বটতলি ও হুগলি নদীর সঙ্গম এখন রুপোলি শস্যের খেতে পরিণত হয়েছে। এই স্থানটি হল মোহানার মুখ। ফলে জোয়ার এলেই তিন নদীতেই হানা দিচ্ছে ইলিশের দল।

করোনা ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে আর্থিকভাবে বিপন্ন হয়ে পড়েছিলেন সাগর, ঘোড়ামারা, কাকদ্বীপের মৎস্যজীবীরা। তার মধ্যে গত তিন বছর ধরে খরা চলছে ইলিশের। এবার প্রাক-মরশুমেই মৎস্যজীবীদের সেই হতাশাকে মুছে দিয়েছে ইলিশের ঝাঁক। শুধু ইলিশ নয়, সঙ্গে জালে উঠছে ভোলাও। নদীতে জাল ফেললেই উঠে আসছে সম্পদ। স্থানীয় মৎস্যজীবীদের মতে, গত দু’মাস আর গভীর সমুদ্রে পাড়ি দিতে হয়নি। যন্ত্রচালিত ছোট ও মাঝারি বোট নিয়ে মোহানা পর্যন্ত গেলেই মিলছে মাছ। ইতিমধ্যে অনেকেই কয়েক লক্ষ টাকা রোজগার করেছেন এভাবে।

ঘোড়ামাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সঞ্জীব সাগর বলেন, ইলিশ সাধারণত বর্ষার সময় পাওয়া যায়। এটা ইলিশের সিজন নয়। এবার সবকিছু উল্টে গিয়েছে। ছোট ছোট মৎস্যজীবীদের রোজগার অনেকটাই বেড়েছে। লাভ হয়েছে ভুটভুটির মালিকেরও। তবে অসময়ের মাছ বলে এখন দামটা একটু চড়া। ৮০০-৯০০ গ্রামের ইলিশের দাম প্রতি কেজি প্রায় ১২০০ টাকা। সুন্দরবন সামুদ্রিক মৎস্যজীবী শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক ও ইলিশের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সতীনাথ পাত্র বলেন, গত ৩০ বছরে ভরা চৈত্রে নদীতে ইলিশ দেখা গিয়েছে বলে আমার জানা নেই। পরিবেশের তারতম্যের কারণেই হয়তো অসময়ে ইলিশের আগমন। তবে ছ’-সাত বছর আগে এই সময়ে রায়দিঘির খাঁড়িতে একবার ইলিশের বড় ঝাঁক দেখা গিয়েছিল। এবার সব হিসেবই উল্টে দিয়েছে এই রুপোলি শস্য। আসলে একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উস্কে দিয়েছেন সতীনাথবাবু। পরিবেশের তারতম্য নাকি, সমুদ্রে জীববৈচিত্র্যের পরিবর্তন, কার দৌলতে ইলিশ জুটতে চলেছে বাঙালির পাতে?

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen