অবৈধ লোহা ও কয়লার কারবারিরাই বিজেপিতে

কয়লা, বালি নিয়ে সরব থাকার পর দলের হঠাৎ ভোলবদলে বেকায়দায় স্থানীয় নেতারা। এই সুযোগে বিজেপির বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শুরু করেছে তৃণমূল।

December 23, 2020 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

কয়েক বছর ধরে অবৈধ কয়লা, লোহা ও বালির কারবার নিয়ে সরব হয়েছে বিজেপি (BJP)। কিন্তু তারা সত্যি কি কারবার বন্ধ করতে চায় নাকি কারবারের হাত বদলই লক্ষ্য? শিল্পাঞ্চলজুড়ে এনিয়েই শুরু হয়েছে গুঞ্জন। কয়েক দশক ধরে আসানসোল ও দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে এই কারবারের মাথারা ভিড় করছেন গেরুয়া শিবিরে। যোগদান মেলার নামে বিজেপির সভাস্থল ভরাচ্ছেন তাঁদের অনুগামীরা। তা থেকেই জেলাবাসী মধ্যে এই গুঞ্জন আরও তীব্র হচ্ছে। অরাজনৈতিক ব্যক্তিরা বিজেপির এই ভূমিকা যেমন সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করেছেন, তেমনই ক্ষোভে ফুঁসছেন নিচুতলার কর্মীরা। অনেকের অভিযোগ, এক সময় যাদের অনুগামীদের হাতে মার খেয়েও দলের পতাকা তুলে ধরেছিলাম, তারাই এখন বিজেপির মুখ। তাই কয়লা, বালি নিয়ে সরব থাকার পর দলের হঠাৎ ভোলবদলে বেকায়দায় স্থানীয় নেতারা। এই সুযোগে বিজেপির বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শুরু করেছে তৃণমূল।

তৃণমূলের (BJP) রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন দাসু বলেন, শেষ দু’বছরে বিজেপিতে কোনও ভালো লোক যোগদান করেনি। এতদিন যারা অবৈধ কারবার নিয়ে অভিযোগ করত, তারাই তো এই কারবারের এক সময়ের মাথাদের দলে নিচ্ছে। এবার কী বলবে বিজেপি?

বিজেপির জেলা সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোড়ুই বলেন, আগে কে কী কারবার করত আমরা দেখতে যাব না। এখন ওঁরা সবাই প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। তৃণমূলে থাকলে সাধু, বিজেপি঩তে গেলেই মাফিয়া বলা হচ্ছে। নিচুতলায় কোনও ক্ষোভ নেই। সবার সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

রাজ্যের কালো কারবারের স্বর্গরাজ্য পশ্চিম বর্ধমান। এই জেলার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে রয়েছে কয়লাখনি অঞ্চল। বৈধর পাশাপাশি অবৈধ কয়লা কারবারের রমরমা বাম আমল থেকেই। যা তৃণমূল আমলেও রয়েছে। লোহার অবৈধ কারবারের যথেষ্ট বিস্তার রয়েছে দুর্গাপুর, বার্নপুরের মতো স্টিল সিটিতে। বড় স্টিল ইন্ডাস্ট্রিতে মাফিয়াদের দাপাদাপির পাশাপাশি যে সব কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সেখানেও দিনেদুপুরে লুটের ইতিহাস বহু পুরনো। তার উপর শিল্পাঞ্চলের দু’পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে অজয়, দামোদর। সব নিয়ম নীতি ভেঙে সেখানকার উৎকৃষ্ট মানের বালি নিয়ে সিন্ডিকেট কারবারেও হয় কোটি কোটি টাকা লুট। এর পাশাপাশি জমি হাঙরদের তাণ্ডবও রয়েছে আসানসোল, দুর্গাপুরের মতো উন্নত শহরে। তাই শিল্পাঞ্চলে ভোট এলেই বিরোধীরা এই কারবার নিয়ে শাসক দলকে আক্রমণ করে মানুষের মন পাওয়ার চেষ্টা করে। ক্ষমতায় যখন বামেরা ছিল, বিরোধী তৃণমূল সেই কাজ করেছে। ক্ষমতায় তৃণমূল আসার পর বিজেপি প্রধান বিরোধী হয়ে ওঠে। তারাও একই ইস্যুতে শাসক দলের যোগসাজশের অভিযোগ তুলে আক্রমণ শানিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে ভোট বাক্সে তার ফলও পড়েছে। কিন্তু রাজ্যে পালা বদলের স্বপ্ন দেখা বিরোধী বিজেপির যেন ভোল বদল হচ্ছে। সবরকম ছুৎমার্গ

সরিয়ে যোগদান মেলায় সবার হাতে বিজেপি পতাকা তুলে দিচ্ছে। এতে এক সময়ের এইসব অবৈধ কারবারের মাথারা অনুগামীদের নিয়ে বিজেপির ছত্রছায়ায় আসছে। তাই রাতারাতি প্রশ্নের মুখে গেরুয়া শিবিরের অবস্থান। বিভিন্ন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা যখন এসব কারবার নিয়ে জোরকদমে তদন্ত চালাচ্ছে, তখন বিজেপিই আবার একসময় এই কারবারের শাহেনশাদের আশ্রয় দিচ্ছে। তৃণমূল ইতিমধ্যেই প্রচার শুরু করে দিয়েছে, কারবারের রাশ বিজেপি নিজের হাতে নিতে চাইছে।

তাই উপরতলার নেতাদের চাপ ও মানুষের মনে দলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নের মাঝে পড়ে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ নিচুতলার বিজেপি নেতা কর্মীরা। সংবাদ মাধ্যমের সামনে প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও বহু নেতা কর্মী এনিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen