ভারতের সংবিধানকে অলঙ্করণে সাজিয়ে তুলেছিলেন বাংলার নন্দলাল বসু

স্বাধীনতার পর সামান্য কয়েকটা বছর কেটেছে তখন। ব্রিটিশ শাসনের কবল থেকে বেরিয়ে মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টায় নতুন ভারত। কিন্তু এরপর? আইনকানুন দৃঢ় করার জন্য, স্বাধীন দেশে দরকার নতুন সংবিধান।

January 26, 2020 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi
ভারতের সংবিধান| ছবি সৌজন্যে: Facebook

স্বাধীনতার পর সামান্য কয়েকটা বছর কেটেছে তখন। ব্রিটিশ শাসনের কবল থেকে বেরিয়ে মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টায় নতুন ভারত। কিন্তু এরপর? আইনকানুন দৃঢ় করার জন্য, স্বাধীন দেশে দরকার নতুন সংবিধান। দেশের নেতারা এবার মন দিলেন সেই কাজেই। কিন্তু এমন ঐতিহ্যশালী দেশের সংবিধান ও তার গড়ন, গঠন, নকশা তো যেমন-তেমন করে হওয়ার নয়! হাতে লিখতে হবে। শুধু তাই নয়, সেই হাতে লেখা পৃষ্ঠার পাতায় পাতায় চাই ছবি ও নকশার বৈভব। ঠিক যেমনটি থাকত মুঘল পুঁথিচিত্রে কিম্বা পাল ও জৈন পুঁথি চিত্রকলায়।

কিন্তু এই কঠিন কাজের দায়িত্ব কে নেবে? নকশাদার হাতের লেখার জন্য তলব পড়ল প্রেমবিহারী নারায়ণ রায়জাদা-র(সাক্সেনা)। তিনি ব্রিজবিহারী নারায়ণ রায়জাদা-র পুত্র। রায়জাদা-রা দিল্লির বাসিন্দা। কিন্তু ব্যবসা রামপুরে। ইংরেজি রোমান ঢং-এর হাতের লেখার সুদক্ষ ক্যালিগ্রাফার প্রেমবিহারী। গোটা সংবিধানটি হাতে লেখার দায়িত্ব সঁপে দেওয়া হল তাঁর ওপর। আর হাতের লেখার পাশাপাশি ছবি ও নকশা দিয়ে সংবিধানের পাতাগুলিকে সাজানোর বিষয়টি নিয়ে বিন্দুমাত্র ভাবতে সময় নেননি ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। তাঁর কন্যা ইন্দিরার শান্তিনিকেতনের কলা ভবনের মাস্টারমশাই নন্দলাল বসু ছাড়া আর কেই বা সামলাতে পারেন এই গুরুভার!

খবর গেল শান্তিনিকেতনে। এমন দায়িত্ব পেয়ে নন্দলাল বসু তৎপর হলেন সঙ্গে-সঙ্গে। শান্তিনিকেতনের শিল্পীদের সহযোগিতায় শুরু করলেন ভারতের সংবিধানের অলঙ্করণের কাজ। পুরো সংবিধানটি ছাপা হয় ফোটো লিথোগ্রাফ পদ্ধতিতে, দেরাদুনের সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার তত্ত্বাবধানে।

এমন নকশামণ্ডিত সংবিধানের পৃষ্ঠা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। যে যে বিষয় নিয়ে ছবি আঁকা হয়েছে সেগুলি হল – মহেঞ্জোদারের সিল, গুরুকুল বা বৈদিক আশ্রমের দৃশ্য, রামায়ণের দৃশ্য, মহাভারতের দৃশ্য, বুদ্ধের জীবনী, মহাবীরের জীবনী, বৌদ্ধধর্মের প্রসার ও সম্রাট অশোকের ভূমিকা, গুপ্ত যুগের শিল্পধারার বিবিধ পর্যায়, বিক্রমাদিত্যে রাজসভা, ওড়িশার ভাস্কর্য শিল্প, নালন্দা, নটরাজের নৃত্য, মহাবলীপুরম ভাস্কর্য দৃশ্য, আকবর ও মুঘল স্থাপত্য, শিবাজি ও গুরু গোবিন্দ সিং, টিপু সুলতান ও ঝাঁসির রানি লক্ষ্মীবাঈ, জাতির পিতা গান্ধী ও তাঁর ডান্ডি মার্চ, গান্ধিজির নোয়াখালি ভ্রমণ, দাঙ্গার সময়, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ও আজাদ হিন্দ ফৌজের লড়াই, ভারতের বাইরে থেকে ভারত, হিমালয়ের দৃশ্য, মরুভূমির দৃশ্য, সমুদ্রের দৃশ্য। সব মিলিয়ে মোট বাইশটি ছবি।

ভারতের ঐতিহ্যের ছবি সংবিধানের পাতায় পাতায়। ধর্ম, ঐক্য, বোধ, সমাজ, ত্যাগ, জাতীয়তাবাদ, দেশের গঠন, জাতির স্বপ্ন সবকিছুর সম্পর্ক রয়েছে এই ছবিগুলির সঙ্গে।

আরও আকর্ষণীয় বিষয় হল, সংবিধানের বিষয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আঁকা হয়েছে সে-পাতার ছবি। যেমন, যে-পাতায় রয়েছে ইমার্জেন্সি প্রভিশনের কথা, সেই ১৫৪ নম্বর পৃষ্ঠার ছবির বিষয় হল গান্ধিজির নোয়াখালির দাঙ্গা কবলিত এলাকা ভ্রমণ। যেখানে রয়েছে কর্মোদ্যম দিয়ে দেশ গঠনের প্রসঙ্গ সেখানে এসেছে সম্রাট আকবরের ছবি। বাণিজ্যের প্রসঙ্গে এসেছে মহাবলীপুরমের ছবি, যেখানে রয়েছে গঙ্গা অবতারণের দৃশ্য। এরকমই বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে, তার সঙ্গে ইতিহাস ও পুরাণের প্রসঙ্গ মিলিয়ে ভারতের সংবিধান চিত্রিত। যার মূল অবদান নন্দলাল বসু’র।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen