World Social Media Day: ভারতের ডিজিটাল বিপ্লব, গুজবের কারখানা এবং প্রতিবাদের প্ল্যাটফর্ম
ভারতের মতো দেশে, যেখানে সর্বত্র ভাষা, ধর্ম ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্য – সেখানে সোশ্যাল মিডিয়ার দায়িত্বশীল ব্যবহার অত্যন্ত জরুরি।

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৬:৩৫: প্রতি বছর ৩০ জুন পালিত হয় বিশ্ব সোশ্যাল মিডিয়া দিবস (World Social Media Day) – একটি দিন যা শুধু প্রযুক্তির অগ্রগতি নয়, বরং মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে আরও বলিষ্ঠ করে।
ভারতের প্রেক্ষিতে এই দিনটির তাৎপর্য খুব বেশি। স্যোশাল মিডিয়া কেবল যোগাযোগের একটি মাধ্যম নয় – এটি হয়ে উঠেছে ডিজিটাল রেভলিউশনের মেরুদণ্ড। ফেসবুক (Facebook), এক্স (X, formerly Twitter), ইনস্টাগ্রাম (Instagram), ইউটিউব (YouTube), হোয়াটসঅ্যাপের (WhatsApp) মতো প্ল্যাটফর্ম আজ তথ্যের স্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং নাগরিক অধিকার রক্ষার এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ।
গত এক দশকে ভারত ডিজিটাল জগতে যে বিপুল রূপান্তরের মধ্য দিয়ে গেছে, তা নজিরবিহীন। রিলায়েন্স জিওর (Jio) মত টেলিকম সংস্থার দৌলতে কম খরচে ইন্টারনেট আজ শহর থেকে গ্রাম – সর্বত্র পৌঁছে গেছে। স্মার্টফোন ও সামাজিক মাধ্যম সাধারণ মানুষকে দিয়েছে এক নতুন কণ্ঠস্বর।
আগে যেখানে তথ্য পাওয়া ছিল শুধু শহুরে এলিটদের (urban elite) “অধিকার”, আজ সেই তথ্য পৌঁছে যাচ্ছে একজন কৃষকের হাতে, একজন কলেজ পড়ুয়া বা একজন গৃহবধূর স্ক্রিনে। সোশ্যাল মিডিয়া হয়ে উঠেছে শিক্ষা, ব্যবসা, সচেতনতা ও প্রতিবাদের এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। জন্ম দিয়েছে এক নব্য অর্থনীতির – ক্রিয়েটর ইকোনমি (Creator Economy)।
গুজব, মিথ্যা প্রচার ও ক্ষমতাবানদের ফেক নিউজ মেশিনারি
সোশ্যাল মিডিয়া যেমন আশীর্বাদ, তেমনই এর অপব্যবহারও চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে বিজেপি আইটি সেলের ভূমিকা বারবার প্রশ্নের মুখে পড়েছে। হোয়াটসঅ্যাপ ফরোয়ার্ড (WhatsApp forwards), হেরফের করা ভিডিও (manipulated videos), বিকৃত তথ্য এবং সাম্প্রদায়িক উস্কানি – এগুলোকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে বহুবার।
ঘৃণা ভরা প্রচার, মিথ্যা ইতিহাস, এবং “হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটি”-র ভুয়ো খবর এখন বাস্তবে হিংসা ছড়াচ্ছে। কখনও গোরক্ষা, কখনও ধর্মীয় বিদ্বেষ – সোশ্যাল মিডিয়াকে একটি প্রোপাগান্ডা মেশিনে পরিণত করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে, যেখানে উদ্দেশ্য একটাই: বিভাজন তৈরি করা ও সত্য চাপা দেওয়া।
প্রতিরোধ
তবে এই একই প্ল্যাটফর্ম আবার হয়ে উঠেছে প্রতিরোধের হাতিয়ার। যখন মূলধারার সংবাদমাধ্যম চাপের মুখে পড়ে, তখন সোশ্যাল মিডিয়াতেই দেখা মিলেছে সত্যের। Alt News, Boom Live, Factly বা The Wire-এর মত স্বাধীন ফ্যাক্ট-চেকার সংস্থাগুলি উঠেছে জনসাধারণের ভরসা।
ছাত্র আন্দোলন, কৃষক আন্দোলন, মহিলা অধিকার, বা নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA)-র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ – প্রতিটা আন্দোলনের মূল চালিকা শক্তি হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া।
ভারতের মতো দেশে, যেখানে সর্বত্র ভাষা, ধর্ম ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্য – সেখানে সোশ্যাল মিডিয়ার দায়িত্বশীল ব্যবহার অত্যন্ত জরুরি।
বিশ্ব সামাজিক মাধ্যম দিবসে আমাদের উচিৎ এই প্রযুক্তিকে শুধুই বিনোদন বা ট্রেন্ডের মাধ্যম হিসেবে না দেখে, এটিকে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে ব্যবহার করার প্রতিশ্রুতি নেওয়া।
কারণ আজকের ভারতে, স্ক্রোল করা শুধু নয় – সত্যকে চিনে নেওয়া, মিথ্যার বিরুদ্ধে সত্যকে তুলে ধরা এবং গণতন্ত্রকে রক্ষা করাও সোশ্যাল মিডিয়ার অন্যতম ভূমিকা।