বিজেপি শাসিত হরিয়ানা কি ২০০২-এর গুজরাত দাঙ্গার ভয়ানক স্মৃতি ফিরিয়ে আনছে?

বিজেপি শাসিত হরিয়ানা কি ২০০২-এর গুজরাত দাঙ্গার ভয়ানক স্মৃতি ফিরিয়ে আনছে? হরিয়ানার বর্তমান পরিস্থিতি দেখে অনেকেরই মনে এই প্রশ্ন জাগছে

August 8, 2023 | 3 min read
Published by: Drishti Bhongi
ছবি সৌজন্যে PTI

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: বিজেপি শাসিত হরিয়ানা কি ২০০২-এর গুজরাত দাঙ্গার ভয়ানক স্মৃতি ফিরিয়ে আনছে? হরিয়ানার বর্তমান পরিস্থিতি দেখে অনেকেরই মনে এই প্রশ্ন জাগছে। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে মেরুকরণের রাজনীতির ‘ল্যাবেটরি’ উয়ে উঠবে না তো গুরুগ্রাম।

সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা অব্যাহত রয়েছে রাজ্যে। সরকার-প্রশাসন একদিনে যেমন বুলডোজার দিয়ে উচ্ছেদ, বাড়িঘর, হোটেল ভাঙচুর চালিয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে মুসলিম বিরোধী জিগির জোরালো করতে হিন্দুত্ববাদীদের উদ্যোগে কর্মসূচি চলছে। নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে করে, শত শত মানুষ রবিবার গুরুগ্রামের সেক্টর ৫৭-এ একটি ‘হিন্দু মহাপঞ্চায়েতে’ জড়ো হয়েছিল এবং সেখানে মুসলমানদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভাবে বয়কটের ঘোষণা করা হয়েছে। এই সেই এলাকা যেখানে গত সপ্তাহে সাম্প্রদায়িক হিংসার সময় একটি মসজিদে হামলা চালানো হয়েছিল এবং একজন ইমামকে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা হত্যা করেছিল।

আঞ্জুমান মসজিদের কাছে অবস্থিত টিগরা গ্রামে এই মহাপঞ্চায়েতের আয়োজন করা হয়েছিল।

মহাপঞ্চায়েতে যোগদানকারীদের দাবি, মসজিদে হামলার জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিরা “নিরপরাধ”। তারা হুমকি দিয়েছে, সাত দিনের মধ্যে মামলা থেকে অভিযুক্তদের নাম বাদ দেওয়া না হলে চাক্কা-জ্যাম করা হবে।

বজরং দলের সদস্য কুলভূষণ ভরদ্বাজ সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন “গুরুগ্রামে শত শত মুসলিম কাঠমিস্ত্রি, ক্ষৌরকার, সবজি বিক্রেতা, মেকানিক এবং ক্যাব চালক হিসাবে কাজ করছেন এবং আমরা সবসময় তাদের সমর্থন করেছি, কিন্তু এখন আমরা নিশ্চিত করব যে তারা কোথাও থেকে কোনো সমর্থন পাবে না। কারণ, তারা হিংসার জন্য দায়ী। তারা শহরের শান্তি বিঘ্নিত করছে। মুসলমানদের শহরে প্রেম বা কাজ করতে দেওয়া উচিত নয়। আমরা শহরের জনগণকে তাদের ঘর বা বস্তি ভাড়া না দেওয়ার জন্য আবেদন করছি।”

নিষেধাজ্ঞা জারি থাকা সত্ত্বেও কীভাবে এদিন মহাপঞ্চায়েত অনুষ্ঠিত হল সে বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনের তরফে কোন সদুত্তোর পাওয়া যায়নি।

রবিবার নিয়ে নূহতে পরপর চারদিন ধরে বুলডোজার চালানো হচ্ছে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, দোকান, রেস্তোরাঁ, হোটেলে। দাঙ্গাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার নামে নূহতে লাগাতার সংখ্যালঘুদের টার্গেট করা হচ্ছে। এসডিএম জানিয়েছেন রবিবার সাহারা পরিবারের একটি রেস্তোরাঁ কাম হোটল সহ মোট ১৬টি দালান বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়েছে। হোটেলটিতে বুলডোজার চালানোর কারণ দেখানো হয়েছে গন্ডগোলের দিন নাকি ওই হোটেল থেকে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বজরঙ দলের শোভাযাত্রায় পাথর ছোঁড়া হয়েছে। সেখানেই নাকি দুষ্কৃতীরা আশ্রয় নিয়েছিল। একই সঙ্গে এতদিনে প্রশাসন জানতে পেরেছে যে হোটেলটি ‘বেআইনিভাবে’ নির্মাণ করা হয়েছিল। নূহর ডেপুটি কমিশনার ধীরেন্দ্র খাদগাতা জানিয়েছেন, মোট ১৬২টি দালান এবং ৫৯১টি অস্থায়ী কাঠামো ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এর অধিকাংশই ছোটোখাটো দোকান, রেস্তোরাঁ, হোটেল বা রুটি-রুজির সংস্থানের কোনও ব্যবসার কেন্দ্র। আচমকাই এগুলিকে প্রশাসনের ‘বেআইনি’ মনে হচ্ছে। ডেপুটি কমিশনারের দেওয়া হিসেব অনুযায়ী, নূহতে ৩৭টি জায়গায় এই ধরনের উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। মোট ৫৭.৫ একর জমিতে এই উচ্ছেদ চালানো হয়েছে।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে যখন সরকারিভাবে ধ্বংসলীলা চালানো হচ্ছে সংখ্যালঘুদের উপরে, তখন হিন্দুত্ববাদীদের পক্ষ থেকে উস্কানি ছড়াতে সভা-সমাবেশ অব্যাহত আছে। গত বৃহস্পতিবার গুরগাঁওয়ের সেক্টর ৫৭-তে অঞ্জুমান মসজিদে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল হিন্দুত্ববাদীরা। সেখানে গুলি চালিয়ে ২৬ বছরের তরুন ইমামকে হত্যাও করে তারা। এই ঘটনায় পুলিশ চার জনকে গ্রেপ্তার করে। অঙ্কিত, রাহুল, রবিন্দর এবং রাকেশ নামে চার যুবককে কাছের টিগরা গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রবিবার সেই চার হিন্দুত্ববাদী দুষ্কৃতির মুক্তির দাবিতে টিগরা গ্রামে মহাপঞ্চায়েত করা হয়। সেখান থেকে চার জনের মুক্তির দাবির পাশাপাশি উসকানিও ছড়ানো হয়। হিন্দুত্ববাদীদের অবাধে এই জমায়েত করতে দেয় পুলিশ প্রশাসন। মহাপঞ্চায়েতে দাবি করা হয় ইমাম হত্যা এবং মসজিদে আগুন দেওয়ার ঘটনায় এরা নাকি যুক্ত নয়। এই নিয়ে প্রশাসনের উপরে চাপ তৈরি করতে ১০০ জনের দল সোমবার জেলা প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দিতে যাবে বলেও ঘোষণা করা হয়েছে। এলাকা থেকে ওই মসজিদও সরিয়ে ফেলতে হবে বলে দাবি করা হয়েছে। হিন্দুত্ববাদীদের দাবি, এটা হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা। এখানে মসজিদ রাখা যাবে না!

এদিকে নূহের ঘটনায় বিজেপি’র নানা নেতা-মন্ত্রী নানা কথা বলেছেন। এরফলে নিজেদের প্রশাসনিক ব্যর্থতা এবং হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলির দায়ভার সামনে চলে এসেছে। এই ঘটনাকে বহু চেষ্টা করেও মুসলিমদের আক্রমণ বলে প্রতিষ্ঠিত করা যায়নি। এর পরিণতিতেই সম্ভবত মুখ বন্ধ করতে বলা হয়েছে। নূহের পরিস্থিতি নিয়ে এদিন প্রশ্ন করা হলে, রাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অনিল বিজ জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি এই নিয়ে আর কিছু বলবেন না। যা বলার মুখ্যমন্ত্রী বলবেন। রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলবেন না স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী! এমন ঘটনারও সাক্ষী থাকতে হচ্ছে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen