জোড়সাঁকোর শিবকৃষ্ণ দাঁয়ের বাড়িতে শুরু কালীপুজোর পুরোহিত প্রশিক্ষণ শিবির

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১১:২৩: শনিবার থেকে জোড়সাঁকোর শিবকৃষ্ণ দাঁয়ের বাড়ির প্রাঙ্গণে শুরু হয়েছে এই বছরের কালীপুজোর পুরোহিত প্রশিক্ষণ শিবির। তিন দিনের এই শিবিরে পুরোহিতদের তন্ত্রশাস্ত্র অনুযায়ী মা কালীর পুজো প্রক্রিয়া শেখানো হচ্ছে। দুর্গাপুজো যেখানে শাস্ত্রনির্ভর, সেখানে কালীপুজো সম্পূর্ণ তন্ত্রনির্ভর, আর সেই পুজো প্রণালীই শেখানো হচ্ছে পুরোহিতদের।
এই বছর প্রায় ৪০ জন পুরোহিত এই প্রশিক্ষণে অংশ নিচ্ছেন। সর্বভারতীয় প্রাচ্যবিদ্যা একাডেমির অধ্যক্ষ জয়ন্ত কুশারী প্রায় ৩৯ বছর ধরে দুর্গাপুজোর আগে এবং গত এক দশক ধরে কালীপুজোর আগে এই প্রশিক্ষণ শিবির পরিচালনা করে আসছেন।
প্রশিক্ষণে মূল জোর দেওয়া হচ্ছে মন্ত্রের সঠিক উচ্চারণ, আচরণ, পুজোর আগে পোশাক পরিবর্তন ও মনোযোগ ধরে রাখার মতো বিষয়ে।
তন্ত্র অনুযায়ী, কালীপুজো শুরু হতে পারে নিশা বা রাত ন’টার পর, কিংবা মহা নিশায়, অর্থাৎ মধ্যরাতের পর। অভিজ্ঞ পুরোহিতের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ পুজো শেষ হতে ৪-৫ ঘণ্টা সময় লাগে, আর নতুনদের জন্য ৬-৭ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লেগে যায়। দুর্গাপুজোর মতো একাধিক দিনে নয়, কালীপুজো এক রাতেই সম্পূর্ণ হয়, তবে এর আচারবিধি অনেক দীর্ঘ ও গভীর।
তন্ত্রমতে কালীপুজোয় বলি দেওয়া আবশ্যক। আগে যেখানে পাঁঠা বলি প্রচলিত ছিল, এখন তার পরিবর্তে প্রতীকী বলি দেওয়া হয় লাউ, আখ বা অন্যান্য নিরীহ দ্রব্য দিয়ে।
পুজোর সময় দেবীকে তিন প্রকার নৈবেদ্য প্রদান করতে হয়, গুড় ও আদা, আট রকম ভাজা মুড়ি-চিঁড়ে-চিনাবাদামের মতো শুকনো নিবেদন, এবং শেষপর্যন্ত ভোগ হিসেবে সিঙ্গারা, ডালপুরি, খাস্তাকচুরি প্রভৃতি।
জোড়াসাঁকোর এই ঐতিহ্যবাহী প্রশিক্ষণ শিবির শুধু পুরোহিতদের শিক্ষার ক্ষেত্র নয়, তন্ত্রসংস্কৃতির ধারাকে টিকিয়ে রাখারও এক গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। কালীপুজোর আগমনী সুর বাজতেই এই সাধনার বাতাবরণ যেন কলকাতার বাতাসে এক বিশেষ ভক্তির আবহ ছড়িয়ে দিয়েছে।