প্রতিপক্ষকে পিছনে ফেলে ছুটছে কাঞ্চনের জনতা এক্সপ্রেস

বিকেল ৫টায় কোন্নগর বাটার মোড়ে পদযাত্রা শুরুর কথা ছিল।

April 4, 2021 | 3 min read
Published by: Drishti Bhongi

আপনাকে আর ‘দিদি নাম্বার ওয়ানে’ দেখা যাচ্ছে না কেন? ভোট প্রচারে বিকেলের পদযাত্রায় বেরিয়ে প্রথম এই প্রশ্নটিরই মুখোমুখি হলেন কাঞ্চন মল্লিক। তর্জনী তুলে বললেন, সেটা তো আছেই। আপাতত নাম্বার ওয়ান মাথায় রাখুন। এক নম্বর বোতাম টিপবেন। ওটায় আমি আছি।


বিকেল ৫টায় কোন্নগর বাটার মোড়ে পদযাত্রা শুরুর কথা ছিল। সওয়া ৫টা নাগাদ যখন সেখানে এবারের উত্তরপাড়া বিধানসভার তৃণমূল(TMC) প্রার্থী এলেন, ততক্ষণে রাস্তার দু’ধারে মাসিমা, কাকিমা, জ্যেঠু বা বউদিরা ভিড় জমিয়ে ফেলেছেন। ঠিক যেমনটি তাঁরা দাঁড়িয়ে থাকতেন বহু বছর আগে। পাড়ায় পাড়ায় তখন ‘জনতা এক্সপ্রেস’ নিয়ে হাজির হতেন ‘রোগা কাঞ্চন’। টিভির সেই জনপ্রিয় অনুষ্ঠানের গন্ধ নিয়েই ফের হাজির কাঞ্চন মল্লিক(Kanchan Mallik)। তবে এবার তিনি নতুন অবতারে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) আশীর্বাদ নিয়ে। তাঁর এবারের উপস্থিতি যতই রাজনীতির চাদর জড়ানো থাক না কেন, তিনি তো আসলেই সেই পাশের বাড়ির ছেলেটি, যিনি সবার সঙ্গে মিশে যেতে পারেন অনায়াসে। রগড় করেন। আহ্লাদ করেন। গোটা পদযাত্রায় তিনি আগাগোড়া সেই ইমেজটুকুই ধরে রাখলেন ভোটারদের জন্য। তা সে স্টেশন যাওয়ার রাস্তা থেকে চণ্ডীতলার সরু গলি হোক, বা এস সি চ্যাটার্জি স্ট্রিটের মতো জমজমাট এলাকা। কখনও বারান্দায় বয়স্ক মানুষকে দেখতে পেয়ে সটান চলে গেলেন উঠোনে, আবার কখনও চলার পথে আচমকা পেছন দিকে তাকিয়ে দেখে নিলেন ফ্ল্যাটবাড়িগুলির ছাদে বা ব্যালকনিতে কেউ অপেক্ষায় আছেন কি না। নমস্কার, প্রতি নমস্কার, হ্যান্ডশেক, সেলফি আর পায়ে হাত দিয়ে প্রণামটুকু আগাগোড়া ‌জিইয়ে রইল ভোটভিক্ষের বাঁকে বাঁকে।  


সন্ধ্যা হয়ে আসছিল। প্রার্থী যাতে আলোকিত থাকেন, সেই জন্য তাঁর আগে আগে একটি ভ্যানরিকশয় ফ্ল্যাশ লাইট জ্বালানো হয়েছিল। ফোকাস ছিল প্রার্থীর মুখে। সঙ্গে আকাশ কাঁপানো ঢাকের বাদ্যি। আর পথে অনেক মানুষ। কিন্তু এভাবে তো বিসর্জনের প্রতিমা যায়! কাঞ্চনের উত্তর, শুধু বিসর্জনই দেখলেন? বিগ্রহের আবাহনও যে এভাবেই হয়, সেটা দেখলেন না? চলতি পথে কাঞ্চনের গলায় কেউ পরালেন রজনীগন্ধার মালা, কখনও কারও মুঠো থেকে পুষ্পবৃষ্টি হল। কেউ-বা বিকেলের ফোঁটা টাটকা গন্ধরাজ ফুল গাছ থেকে ছিঁড়ে উপহার দিলেন জোড়াফুলের প্রার্থীকে। হাসিমুখে সেসব উচ্ছ্বাসকে সযত্নে গ্রহণ করলেন তিনি। গলি, তস্যগলি পেরিয়ে যখন এগচ্ছিলেন কাঞ্চন, তাঁর সারথি ছিলেন কোন্নগর পুরসভার সদ্য প্রাক্তন চেয়ারম্যান বাপ্পাদিত্য চট্টোপাধ্যায়। প্রার্থী দুয়ারে পৌঁছতেই  পাড়ায় পাড়ায় গৃহকর্তাদের হাঁকডাক করে ডেকে দোর খোলালেন তিনি। পরিচয় করালেন কাঞ্চনের সঙ্গে। হাত বাড়িয়ে আশীর্বাদ করলেন অনেকে। 


জানেন, কত অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হচ্ছে, বললেন কাঞ্চন। এক অশীতিপর বৃদ্ধা তাঁকে চোখ পাকিয়ে বলেছিলেন, যদি দলবদল করো, তাহলে মেরে তক্তা করে দেব। মানুষের এই বিশ্বাস আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর অপার ভরসাকে কখনও উপেক্ষা করা যায়? প্রশ্ন প্রার্থীর। উত্তরপাড়া বিধানসভা এলাকার তৃণমূল বিধায়ক প্রবীর ঘোষাল এবার বিজেপি থেকে দাঁড়িয়েছেন। ভোটারদের উঠোনে গিয়ে ভোট চাইলেও, প্রবীরবাবুর রাজরাজেশ্বরীতলার বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে সটান চলে গেল পদযাত্রা। থামলেন না কাঞ্চন। কেন? উত্তর দিলেন, এখানে ওঁর বাড়ি, সেটা আমি জানব কী করে? এলাকার সঙ্গে এখনও তেমন পরিচিত নই যে!


কৌতুকবিলাসী কাঞ্চনকে চেনেন মানুষ। ভোটও হয়তো পাবেন সেই ফচকে কাঞ্চনই। কিন্তু রাজনীতির অন্দরে নিজেকে পুরদস্তুর বদলে রেখেছেন কাঞ্চন, তা বোঝা গেল। এলাকার ছোট, মেজো—নানা মাপের নেতারা তাঁকে ঘিরে রেখেছিলেন। সেলিব্রিটি ও আনকোরা প্রার্থী হিসেবে যে তাঁকে দিয়ে যা ইচ্ছা করানো যায় না, তা পদে পদে বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন তিনি। ভোটারদের জন্য মুখে হাসি জিইয়ে রাখলেও, কর্মীদের প্রতি ছিলেন কঠোর শৃঙ্খলাপরায়ণ। স্পষ্ট বললেন, আমাকে ব্যবহার করে কেউ নিজের দর বাড়াবে, তা হতে দেব না আমি।


বড্ড জোরে হাঁটেন কাঞ্চন মল্লিক। তাঁর সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পা মেলাতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠছিল অনেকের। ঘেমে, হাঁফিয়ে নাজেহাল অনেকেই। শুধু ফুরফুরে ছিলেন একমাত্র কাঞ্চন। বললেন, ছোটবেলা থেকে ক্রিকেট খেলেছি। তাই দৌড়টা বুঝি। লড়াইটাও। যখন কথাগুলো বললেন, তখন পদযাত্রার দৈর্ঘ্য বেড়ে গিয়েছে বহু গুণ। কাতারে কাতারে মানুষ ছুটছেন তাঁর পায়ে পা মিলিয়ে। ঠিক যেন জনতা এক্সপ্রেস।  

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen