গুমঘর লেনে সত্যিই কী ‘গুম’ করে দেওয়া হত?
১৭৯২ সালে অবশেষে প্রস্তাব উঠল আলাদা ভাবে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ভারতীয় কর্মীদের জন্য হাসপাতাল তৈরি হোক।
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: ‘গুমঘর লেন’ নামটা শুনলেই কেমন যেন গা শিউরে ওঠে। রহস্যময় কলকাতায় এখনও লোক মরে, তখনও মরত। তবে গুমঘর লেন সত্যিই কী ছিল সাক্ষাত যমপুরী? শোনা যায়, করোনাকালে যেমন ছিল কোয়ারেন্টাইন, সেই সময়েও ছিল ‘গুমঘর গলি’, যা নেটিভদের একঘরে করে রাখার একমাত্র ঠিকানা। বর্তমানে যার ঠিকানা চাঁদনি চকে সাবির রেস্তোরাঁর ঠিক উল্টোদিকের গলি।
অষ্টাদশ শতকের কলকাতায় বিশেষত ব্ল্যাক টাউনেও চিকিৎসা পরিষেবা বলতে ছিল ঝাড়-ফুঁক, তাবিজ-কবচ, হাকিমি, কবিরাজি। চিকিৎসার বেশিরভাগটাই হত উপরওয়ালার ভরসায়। ১৭৯২ সালে অবশেষে প্রস্তাব উঠল আলাদা ভাবে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ভারতীয় কর্মীদের জন্য হাসপাতাল তৈরি হোক। সাদা চামড়া আর কালো চামড়ার মানুষদের জন্য আলাদা বেড-এর কথাও বলা হয়েছিল। কিন্তু পরে দেখা গেল সেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের ঠিকানা হারিয়ে যাচ্ছে ক্রমশ। অর্থাৎ গুম হয়ে যাওয়াই ছিল নেটিভ হসপিটাল-এর ভবিতব্য। কারণ স্বাস্থ্যসম্মত খোলামেলা জায়গার অভাব। তাই কলুটোলায় ৪ বছর চিকিৎসা চলার পর ১৭৯৬ সালে হাসপাতাল স্থানান্তরিত করা হল ধর্মতলায় , অধুনা চাঁদনি চকে। আর এই সময় থেকেই কলকাতা পেল গুমঘর গলি। শোনা যায়, এই গলির এক বাড়িতেই আলাদা করে রাখা হত ছোঁয়াচে অসুখের রোগীদের। মূল হাসপাতাল থেকে গুম হয়ে যাওয়া, আর বেশিরভাগ অসুখ থেকে রোগীদের জীবন থেকে গুম হয়ে যাওয়া সমার্থক হয়ে উঠেছিল সেইসময়ে।
গুমঘর গলির ঠিক কত নম্বর বাড়িতে এই কোয়ারেন্টাইন ওয়ার্ড ছিল? সে কথা সবার অজানা। তবে সন-তারিখের হিসেব অনুযায়ী, টানা ৭৮ বছর ধরে গুমঘর লেন-এ চলেছে ছোঁয়াচে অসুখের চিকিৎসা। কলকাতার প্রাচীন ইতিহাস থেকে জানা যায় শুধু ঠিকানাই নয়, ধর্মতলার পর নেটিভ হাসপাতালের নামটাও বদল করা হয়েছিল। এর নাম হয়েছিল মেয়ো নেটিভ হসপিটাল। ধর্মতলা থেকে সরে গিয়ে যার ঠিকানা ছিল স্ট্রান্ড রোডে। এই হাসপাতালের উদ্যোক্তা ছিলেন সার্জিয়ন-মেজর এন সি ম্যাকনামারা। কিন্তু কোনও এক অজানা কারণে একদিন বন্ধ হয়ে গেল স্ট্রান্ড রোডের হাসপাতালও। থেকে গেল শুধু গুমঘর লেন। শহরবাসীর মুখে মুখে এই নামটা অবশ্য আজও জীবিত আছে। তবে আধুনিক মানুষের ব্যস্ত জীবনের মাঝে সত্যিই গুম হয়ে গিয়েছে ২০০ বছরেরও প্রাচীন রোগীদের সেই যন্ত্রণা আর বাঁচার আর্তি।
ভাষ্য পাঠ: মধুরিমা রায়
সম্পাদনা: প্রতীম বসাক
তথ্য গবেষণা: মানস মোদক