বিশ্বে বিজ্ঞানচর্চায় বাঙালির কৃতিত্ব, Perkin Prize পেয়ে ইতিহাস গড়লেন অধ্যাপক শুভব্রত সেন
অধ্যাপক সেনের নেতৃত্বে ‘AEEon Collective’ নামে একটি গবেষক দল AEE প্রযুক্তি, যা জৈব রসায়নে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে।

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৫:৪৭: বিজ্ঞানজগতে ইতিহাস গড়লেন কলকাতার সন্তান! শ্যামবাজারে বেড়ে ওঠা অধ্যাপক শুভব্রত সেন হলেন প্রথম ভারতীয়, যিনি পেলেন রয়্যাল সোসাইটি অফ কেমিস্ট্রির (RSC) ‘পারকিন পুরস্কার’। রাসায়ন বিজ্ঞানে যুগান্তকারী অবদানের জন্য RSC তাঁকে এই সম্মান দিয়েছে।
২০২৫ সালের ২৫ জুন RSC-র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয় খবরটি। ২০২০ সালে শুরু হওয়া এই পুরস্কার আধুনিক রসায়নের অন্যতম সেরা সম্মান, যা প্রথম সিন্থেটিক রঞ্জক আবিষ্কারক স্যার উইলিয়াম হেনরি পারকিনের নামে প্রবর্তিত। অর্গানিক কেমিস্ট্রিতে যুগান্তকারী গবেষণার জন্যই দেওয়া হয় এই পুরস্কার।
অধ্যাপক সেন সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, “আমি সত্যিই উচ্ছ্বসিত এবং গভীরভাবে সম্মানিত! এই পুরস্কার শুধুমাত্র একটি স্বীকৃতি নয় — এটি কৌতূহল, অধ্যবসায় এবং আবিষ্কারের রোমাঞ্চ থেকে উৎসারিত আনন্দের এক শক্তিশালী স্মারক। আমার কাছে, এটি প্রমাণ করে যে ভারতীয় বিজ্ঞান এখন ক্রমেই বিশ্বব্যাপী উদ্ভাবনের প্রেক্ষাপটে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে আমরা আর শুধুমাত্র দর্শক নই — আমরা এখন এক শক্তিশালী বৈজ্ঞানিক শক্তি, যাকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে,”
কী গবেষণা?
অধ্যাপক সেনের নেতৃত্বে ‘AEEon Collective’ নামে একটি গবেষক দল ‘অল্টারনেট ইলেক্ট্রোড ইলেক্ট্রোলাইসিস’ বা AEE প্রযুক্তি, যা জৈব রসায়নে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। ছোট আকারের চার ইলেক্ট্রোডবিশিষ্ট বিশেষ কোষ তৈরি করে নির্ভুলভাবে বিদ্যুৎ প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে রাসায়নিক বিক্রিয়া চালানো সম্ভব হয়েছে, যা আগের পদ্ধতির তুলনায় বেশি পরিচ্ছন্ন, দ্রুত এবং পরিবেশবান্ধব। দলের আট সদস্যের মধ্যে পাঁচ জনই বাঙালি, যার মধ্যে অন্যতম পোস্টডক্টরাল গবেষক দেবজিৎ মাইতি।
কলকাতার সংস্কৃতি থেকে অনুপ্রেরণা
নারেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন কলেজ ও কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পর অধ্যাপক সেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরি বিশ্ববিদ্যালয়-কলম্বিয়া থেকে পিএইচডি ও কলোরাডো স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে পোস্টডক্টরাল ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর কাজ করেছেন ফাইজার ও GVK Biosciences-এ। বর্তমানে তিনি শিব নাদার বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়নের অধ্যাপক। তিনি জানান, বিজ্ঞান আর শিল্পকে একত্রে দেখে শেখার অভ্যাস কলকাতাই তাঁকে দিয়েছে। কলেজ স্ট্রিট, রবীন্দ্র সদন, কফি হাউস, বিজ্ঞান মঞ্চ – এই শহরের বাতাসেই রয়েছে তাঁর সব প্রশ্নের উত্তরের খোঁজ।
ভবিষ্যতের দিশা
এই গবেষণাপত্র ইতিমধ্যেই Chemical Science (2023), Cell Press (2024), এবং Journal of the American Chemical Society (2024)-এর মতো নামী আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণা সংস্থা হিসেবে যুক্ত রয়েছেন শিব নাদার বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি আইআইটি বম্বের বিজ্ঞানীরাও। AEE প্রযুক্তির মাধ্যমে ভবিষ্যতে তৈরি হতে পারে ওষুধ, কৃষি-রাসায়নিক, কার্বন ডাই-অক্সাইড হ্রাস প্রযুক্তি এবং জলের বিভাজন ইত্যাদি। পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ী রাসায়নিক উৎপাদনের ক্ষেত্রে এই উদ্ভাবন হতে পারে এক যুগান্তকারী ধাপ। বিশ্ববিজ্ঞান মানচিত্রে কলকাতার বিজ্ঞানচর্চার পরিচয় আরও একবার উজ্জ্বল করলেন অধ্যাপক শুভব্রত সেন। তাঁর এই কৃতিত্ব শুধু ব্যক্তিগত নয়, গোটা দেশের গর্ব।