কলকাতার শাহীন বাগের দাবী আচ্ছে দিন’ ফেরত নিয়ে আমাদের সেই পুরনো ‘খারাপ দিন

হাড় কাঁপানো শীত উপেক্ষা করে পাশাপাশি বসে জোর গলায় ‘সরফারোশি কি তমন্না’ গেয়ে উঠছিলেন ৭০ পার করা নাজো বেগম, সুব্বুই আজিজ ও নুরজাহান জুনাইদ।

January 10, 2020 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

হাড় কাঁপানো শীত উপেক্ষা করে পাশাপাশি বসে জোর গলায় ‘সরফারোশি কি তমন্না’ গেয়ে উঠছিলেন ৭০ পার করা নাজো বেগম, সুব্বুই আজিজ ও নুরজাহান জুনাইদ। গায়ে অতি সাধারণ সোয়েটার, ওপরে শাল মুড়ি দিয়ে বসে স্লোগান দিতে থাকা এই মহিলারা কোনও রাজনৈতিক দলের সদস্য নন। কোনও জনকল্যাণকর সংস্থার নিয়মিত কর্মীও নন। মঙ্গলবার দুপুরের আগে এঁরা যে পরস্পরকে চিনতেন, তা-ও নয়। 

একেবারে সাধারণ এই গৃহবধূরা কয়েক দিন আগেও ভাবতে পারেননি এমন ভাবে তাঁরা কখনও বাড়ির চৌকাঠ পার করে পার্ক সার্কাস ময়দানে এসে প্রকাশ্যে এমন ভাবে আন্দোলন শুরু করবেন। কিন্তু তিন বৃদ্ধার বক্তব্য, ‘এখনও যদি না বেরোই তবে আর কবে বেরোব?’ দেশজোড়া প্রতিবাদে শুধু যে সামিল হয়েছেন ওঁরা তাই-ই নয়, সারা রাত এমন ভাবেই বসে ধরনা দেওয়ার প্রতিজ্ঞা ওঁদের মুখে।

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন, নাগরিক পঞ্জীকরণ ও এনপিআর-এর বিরুদ্ধে ক্রমাগত স্লোগান দিতে থাকা শাহিন হুসেন সঙ্গে এনেছিলেন তাঁর ছ’ বছরের ছেলেকে। একবছরের শিশু ও শাশুড়ি ফিরদৌসিকে সঙ্গে নিয়ে জমায়েতে এসেছিলেন নিলোফার সাদিকও। দু’জনেই বললেন, ‘এটা আমাদের সবার অস্তিত্বের লড়াই। ছোট বলে ওদের বাইরে রাখা যাবে না। বিপদ তো ছোটদের কোনও ছাড় দেবে না। তাই ওদেরও থাকতে হবে।’

অজানা, অপরিচিত এই ‘সাধারণ’ গৃহবধূদের মঙ্গলবার দুপুরে মিলিয়ে এক করে দিয়েছিল যে ঘটনা, আপাতত গোটা দেশ তাতে উত্তাল। পথে নেমে সংশোধিত নাগরিক আইন এবং নাগরিক পঞ্জীকরণ ও এনপিআর-এর প্রতিবাদ করতেই এ দিন পার্ক সার্কাস ময়দানে এক হয়েছিলেন প্রায় ৭০ জন মুসলিম গৃহবধূ। সচরাচর ঘরের চৌহদ্দির মধ্যেই স্বচ্ছন্দ বোধ করা এই মহিলারা ‘আর বিলম্ব নয়’ সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেননি। 

আর যাই হয়ে যাক, নিজেদের ‘ভারতীয়’ পরিচয়ে কোনও মতেই দাগ লাগাতে দিতে রাজি নন ওঁরা। দিল্লির শাহীন বাগ থেকে কলকাতার পার্ক সার্কাস ময়দান, দুই জায়গার মধ্যের দেড় হাজার কিলোমিটারের দূরত্ব যেন মুহূর্তে উবে গেল। পার্ক সার্কাস ময়দানই হয়ে উঠল কলকাতার শাহীন বাগ।

আগাম কোনও পরিকল্পনা ছিল না। মঙ্গলবার দুপুর থেকে নিতান্ত মুখে মুখেই রটে গিয়েছিল পার্ক সার্কাস ময়দানে এই জমায়েতে কথাটা। কিছুক্ষণের মধ্যে বিপুল উৎসাহে এখানে জমা হতে শুরু করলেন মুসলিম গৃহবধূরা। কারও হাতে জাতীয় পতাকা, কারও হাতে ব্যানার পোস্টার। মুখে স্লোগান। কেউ বেরিয়ে এসেছেন সদ্য হাঁটতে শেখা সন্তানের হাত ধরে। কারও বা কোলে শিশু। কেউ ভালো করে চলতে পারেন না – সঙ্গীর কাঁধে ভর করে এসেছেন প্রতিবাদ জানাতে। কলেজ স্ট্রিট, তালতলা, তোপসিয়া, তিলজলা, খিদিরপুর, পার্ক সার্কাস — শহরের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসে জমা হতে শুরু করেছিলেন তাঁরা।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen