বাঁচার লড়াই চালাচ্ছেন হাওড়ার যৌনকর্মীরা

হাওড়ার আমতা কলাতলা থেকে একটি পাকা রাস্তা সোজা আমতা বাজার হয়ে চলে গেছে সিনেমাতলার মোড়ে। এই মোড় থেকে একটি পাকা রাস্তা ডান দিক দিয়ে সোজা মুন্সিরহাটের দিকে ও একটি পাকা রাস্তা আমতা থানার দিকে চলে গেছে। সিনেমাটা থেকে যে রাস্তাটি আমতা থানার দিকে চলে গেছে সেই রাস্তার একটি অংশ ঢালমাথা হিসাবে পরিচিত।

April 11, 2020 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

হাওড়ার আমতা কলাতলা থেকে একটি পাকা রাস্তা সোজা আমতা বাজার হয়ে চলে গেছে সিনেমাতলার মোড়ে। এই মোড় থেকে একটি পাকা রাস্তা ডান দিক দিয়ে সোজা মুন্সিরহাটের দিকে ও একটি পাকা রাস্তা আমতা থানার দিকে চলে গেছে। সিনেমাটা থেকে যে রাস্তাটি আমতা থানার দিকে চলে গেছে সেই রাস্তার একটি অংশ ঢালমাথা হিসাবে পরিচিত।

এই ঢালমাথার ডানদিক দিয়ে একটি পাকা রাস্তা সোজা পেঁড়োয় বাস রাস্তায় মিলিত হয়েছে। এই ঢালমাথার চিত্রটা গত পনের দিনে পুরো পাল্টে গেছে। চারিদিক জুড়ে নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। দেশব্যাপী করোনা ভাইরাসের সাঁড়াশি আক্রমণ ও তার মোকাবিলায় লকডাউনে দেখা নেই খদ্দেরদের। তার ফলে বেঁচে থাকাটাই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে গ্ৰামীণ হাওড়ার দেড় শতাধিক যৌনকর্মীর। গ্ৰামীণ হাওড়ায় মূলত দুটি যৌনপল্লী আছে।

একটি উলুবেড়িয়া গঙ্গা নদীর ধারে কালীবাড়ীর কাছে,আর একটি আছে আমতা সিনেমাতলার ঢালমাথার কাছে। এছাড়াও কিছু যৌনকর্মী বাউড়িয়া,সাঁকরাইল,ফুলেশ্বর, উলুবেড়িয়া,কুলগাছিয়া,বীরশিবপুর,বাগনান রেল স্টেশন এলাকায় অপেক্ষা করে খদ্দেরদের নিয়ে স্থানীয় কোনো হোটেল, কোনো নির্জন এলাকায় চলে যায়। 

এই সংখ্যাটাও প্রায় পঞ্চাশের অধিক। উলুবেড়িয়া ও আমতার যৌনপল্লীতে প্রতিদিন দুপুরের পর থেকেই যুবক থেকে বয়স্ক মানুষ ভিড় জমাতে শুরু করে। রেট ঠিক করে যৌনকর্মীরা তাদের ঘরে নিয়ে যায়। দিনের শেষে যৎসামান্য রোজগারে কোনোরকমে হাঁড়ি চড়ে যৌনকর্মীদের ঘরে।

করোনা ও লকডাউনের সাঁড়াশি আক্রমণে এক ধাক্কায় আজ সেই চিত্রটা বদলে গেছে। দুই যৌনপল্লী মিলিয়ে রয়েছেন প্রায় শতাধিক যৌনকর্মী ও ফ্লায়িং যৌনকর্মী আছে প্রায় পঞ্চাশের অধিক। এই পেশার উপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কয়েকশো পরিবার নির্ভরশীল। 

বাঁচার লড়াই চালাচ্ছেন হাওড়ার যৌনকর্মীরা সংগৃহীত চিত্র

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক উলুবেড়িয়ার এক যৌনকর্মী বিষন্ন কন্ঠে বলেন, গতবার নোট বাতিলের জেরে কিছুদিনের জন্য ব্যবসার আংশিক ক্ষতি হয়েছিল। এবার করোনা ভাইরাস ও লকডাউনে ব্যবসা পুরোপুরি ক্ষতিগ্ৰস্ত । এই পরিস্থিতিতে দীর্ঘ এক পক্ষকাল খদ্দেরদের দেখা না মেলায় চরম‌ আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হয়ে কোনো রকমে অর্ধাহারে দিন কাটছে এই সমস্ত যৌনকর্মী ও এই পেশার উপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল পরিবারগুলি। 

করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় করমর্দন করতে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু যৌনপেশায় সংস্পর্শ এড়ানো সম্ভব নয়। তাই আতঙ্কে যৌনপল্লী মুখী হওয়া ছেড়েছেন খদ্দেররা। এর পাশাপাশি লকডাউনের জেরে মানুষ সচারাচর বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না, সঙ্গে আর্থিক সমস্যাতো রয়েছে। যার ফলেই একদম ফাঁকা যৌনপল্লী ও রেলস্টেশন গুলি। 

অন্নসংস্থানের পাশাপাশি আছে বাড়িভাড়া, বিদ্যুতের বিল, সন্তান-সন্ততিদের খরচ-কিভাবে অর্থ জোগাবেন তা ভেবেই কপালে চিন্তার ভাঁজ মাধ্যমিক পাশ বছর চল্লিশের অনিমা-র (নাম পরিবর্তিত)। অনিমা-র কথায় “করোনা ভাইরাসের আক্রমণ ও লকডাউনে আমাদের যৌনপেশার সংসারে বজ্রপাত ফেলে দিয়েছে। কিভাবে সন্তান-সন্ততি ও পরিবারের অন্যান্যদের খরচ চলাবো ভেবে পাচ্ছি না”।

১৫ থেকে ২০ বছর বয়সী চম্পা, ইলা, সম্পা, মালতি, কেতকি (সকলেরই নাম পরিবর্তিত)দের জীবনের জলসাঘরটা বড়ই বৈচিত্র্যময়। জীবন জুড়ে লড়াই আর লড়াই। এই যুদ্ধক্ষেত্রে ওরা হারতে শেখেনি। প্রত্যেক মুহুর্তে পরিস্থিতির বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে সগর্বে ওরা লড়াই চালাচ্ছে। তাই ওদের দৃঢ় বিশ্বাস-করোনা যুদ্ধে ওরা জয়ী হবেই হবে। লকডাউন শেষ হয়ে গেলে আবার ও খদ্দেররা ভিড় জমাবে এই জলসাঘরের পল্লীতে। আবার আলো জ্বলে উঠবে ওদের ছোট্ট এক চিলতে সংসারে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আবারও সুখের দিন ফিরে আসবে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen