Kali Puja 2025: বাংলার আমাদপুর গ্রামে চার বোন রূপে আজও পূজিতা মা কালী

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ২০:৪৫: পূর্ব বর্ধমান জেলার মেমারি থানার অন্তর্গত ছোট্ট গ্রাম আমাদপুর ‘কালীগ্রাম’ নামে পরিচিত। কালীপুজোর সময় এই গ্রামে তৈরি হয় উৎসবের আবহ। এখানকার কালী পুজো দেখতে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসেন হাজারো ভক্ত। কারণ, এখানে দেবী কালিকা পূজিতা হন এক নয়, চার বোন রূপে। প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো এই বিরল ও প্রাচীন ঐতিহ্য।
গ্রামে প্রবেশ করলেই প্রথম দর্শন মেলে ‘বড় মা’-র। বিশাল ২০ ফুট উচ্চতার প্রতিমা। এরপর একে একে দেখা মেলে মেজ মা, সেজ মা ও ছোট মায়ের। প্রতিটি প্রতিমাই বিশালাকার। নিষ্ঠা সহকারে এখানে মা কালীর পুজো হয়। এই চার বোনের পুজোই আমাদপুরের প্রধান আকর্ষণ।
লোককথা অনুযায়ী, একসময় বেহুলা নদীর তীরে অবস্থিত এই গ্রাম ছিল গভীর জঙ্গলে ঘেরা। নদীর ধারে ছিল মহাশ্মশান, যেখানে এক সাধু কালীসাধনায় লিপ্ত ছিলেন। তাঁর সাধনার ফলেই এখানে দেবীর আবির্ভাব ঘটে বলে বিশ্বাস।
প্রচলিত আছে, দস্যুদের হাত থেকে রক্ষা পেতে বণিকেরা এই দেবীর কাছে পুজো দিতেন। তাঁদের বিশ্বাস ছিল, মা কালী তাঁদের রক্ষা করেন। সেই বিশ্বাস থেকেই শুরু হয় কালীপুজোর প্রচলন। আজও দুর্গাপুজোর তুলনায় কালীপুজোতেই গ্রামে বেশি জাঁকজমক দেখা যায়।
কালীপুজোর (Kali Puja) পরদিন রাত ১২টার পর শুরু হয় বিসর্জন শোভাযাত্রা। চার বোনকে চতুর্দোলায় করে সারা গ্রাম পরিক্রমা করানো হয়। গ্রামের সমস্ত আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়, শুধুমাত্র মশালের আলোয় চলে ‘কালী নাচ’। ঢাক ও কাঁসরের তালে তালে বিশাল প্রতিমাগুলি কাঁধে নিয়ে উদ্দাম নৃত্য করেন ভক্তরা। তাঁদের বিশ্বাস, দেবীর শক্তিতেই এই নৃত্য সম্ভব।
সারা রাত গ্রাম পরিক্রমার পর ভোরে চার বোন মিলিত হন জমিদার পাড়ায়। সেখানে কিছুক্ষণ চলে তাঁদের সম্মিলিত নৃত্য। এরপর একে একে দেবীদের নিয়ে যাওয়া হয় ঘাটে, সম্পন্ন হয় বিসর্জন।
চার বোন ছাড়াও আমাদপুরে পূজিতা হন একশোরও বেশি কালীমূর্তি। সিদ্ধেশ্বরী, বুড়িমা, ডাকাত কালী প্রমুখ। কালীপুজোর দিন ভৈরবেরও বিশেষ পুজো হয়। এই অনন্য ঐতিহ্য ও ভক্তির আবহে প্রতিবছর দীপাবলির রাতে আলোকিত হয়ে ওঠে আমাদপুর।