অপুষ্টিতে শিশুমৃত্যুতে উত্তাল মধ্যপ্রদেশ, BJP সরকারের ‘অবহেলা’র অভিযোগে সরব তৃণমূল

October 22, 2025 | 2 min read
Published by: Saikat

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৯:০০: বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশে (Madhya Pradesh) একের পর এক বাড়ছে শিশুমৃত্যু (Child Mortality)। সতনা, শিবপুরি, শেওপুর এবং ভিন্ড- এই চার জেলায় সম্প্রতি অপুষ্টির (Malnutrition) কারণে একাধিক শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা চার মাসের হুসেন রাজার মৃত্যু, যা মধ্যপ্রদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুর্বলতা ফের সামনে এনেছে।

হুসেন রাজার মৃত্যু হয়েছে সতনা জেলার মারওয়া গ্রামে। মঙ্গলবার গভীর রাতে জেলা হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে সে। চার দিন ধরে PICU-তে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছিল এই শিশু। তার শরীর ছিল হাড়সর্বস্ব, চোখ বসে যাওয়া, রঙহীন ঠোঁট সব মিলিয়ে এক করুণ চিত্র। চিকিৎসকদের মতে, তার ওজন ছিল মাত্র ২.৫ কেজি, যেখানে এই বয়সে একটি সুস্থ শিশুর ওজন হওয়া উচিত কমপক্ষে ৫ কেজি। এমনকি সে এতটাই দুর্বল ছিল যে কান্নার শক্তিও ছিল না।

শিশুটির মা আস্মা বানো গত শনিবার তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। শিশু বিশেষজ্ঞ সন্দীপ দ্বিবেদী প্রথম দেখাতেই শিশুটির অবস্থা দেখে স্তম্ভিত হয়ে যান। সঙ্গে সঙ্গে তাকে ‘সিভিয়ারলি ম্যালনরিশড’ (Severely malnourished) হিসেবে চিহ্নিত করে নিউট্রিশন রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারে পাঠানো হয়, পরে PICU-তে স্থানান্তরিত করা হয়। কিন্তু চার দিনেও অবস্থার উন্নতি হয়নি। হাসপাতালের নথি বলছে, হুসেনের জন্ম হয়েছিল ২ জুলাই, ওজন ছিল ৩ কেজি। জন্মের পর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে সে আরও দুর্বল হয়ে পড়ে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয়, জন্মের পর থেকে একটিও টিকাকরণ হয়নি, ফলে তার শরীর আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে।

হুসেনের মৃত্যুর পর স্বাস্থ্য দপ্তর (Health Dept) তিনজন কর্মী চিকিৎসক এস পি শ্রীবাস্তব, স্বাস্থ্যকর্মী লক্ষ্মী রাওয়াত এবং আশা কর্মী উর্মিলা সতনামীকে শোকজ করেছে। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা সময়মতো শিশুটির অবস্থা শনাক্ত ও পর্যবেক্ষণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তবে এই পদক্ষেপ অনেক দেরিতে এসেছে। হুসেনের মৃত্যু ফের তুলে ধরেছে গ্রামস্তরের নজরদারি, অঙ্গনওয়াড়ি পর্যবেক্ষণ এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুর্বলতা।

সরকারি হিসেবে NRC-এ প্রতি শিশুর জন্য বরাদ্দ ৯৮০ টাকা, অঙ্গনওয়াড়িতে প্রতিদিন ৮ টাকা, আর গুরুতর অপুষ্ট শিশুদের জন্য ১২ টাকা। কিন্তু বাস্তবে এই বরাদ্দ শিশুদের কাছে পৌঁছচ্ছে না। সরকারি তথ্য বলছে, ২০২০ থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত ৮৫,৩৩০ শিশু অপুষ্টিজনিত কারণে নিউট্রিশন রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারে ভর্তি হয়েছে। বার্ষিক ভর্তি সংখ্যা ২০২০-২১ সালে ছিল ১১,৫৬৬, যা ২০২৪-২৫ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ২০,৭৪১-এ। বর্তমানে ১০ লক্ষের বেশি শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে, যার মধ্যে ১.৩৬ লক্ষ শিশু ‘সিভিয়ার ওয়েস্টিং’-এর শিকার। ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের মধ্যে ৭.৭৯ শতাংশ গুরুতর ও মাঝারি অপুষ্টিতে আক্রান্ত, যা জাতীয় গড় ৫.৪০ শতাংশের অনেক উপরে। মে মাসে দেখা গেছে, ৫৫টি জেলার মধ্যে ৪৫টি ‘রেড জোন’-এ, যেখানে ২০ শতাংশের বেশি শিশু অত্যন্ত কম ওজনের।

এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল কংগ্রেস (TMC) একাধিক টুইটে এই শিশু মৃত্যুর ঘটনাকে “প্রশাসনিক অপরাধমূলক অবহেলা” বলে অভিহিত করেছে। তাঁদের দাবি, এই মৃত্যুগুলি শুধু বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং একটি বৃহত্তর সংকটের অংশ। তৃণমূলের অভিযোগ, “ডাবল ইঞ্জিন সরকার”-এর নামে শিশুদের জীবন বিপন্ন হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদব (Mohan Yadav) এবং বিজেপি (BJP) সরকারের বিরুদ্ধে অদক্ষতা, উদাসীনতা ও দুর্বলতমদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ তুলেছে তারা। তৃণমূলের মতে, এই মৃত্যুগুলি শুধু পরিসংখ্যান নয়, প্রতিটি ঘটনা এক একটি নির্মম বাস্তবতা, যেখানে মায়েরা প্রশাসনের উদাসীনতার সামনে সন্তান হারাচ্ছেন।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen