বাংলাদেশে ভাঙা হচ্ছে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি, কড়া প্রতিক্রিয়া মমতার
Mamata Banerjee-reacts-to-upendrakishore-house-demolition in bangladesh

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৯:৩৬: বাংলাদেশের ময়মনসিংহে ভাঙা হচ্ছে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর বসতবাটি। বাংলাদেশের ময়মনসিংহ (Mymensingh) শহরের হরিকিশোর রায় রোডে অবস্থিত দেড় শতাব্দী প্রাচীন একটি ঐতিহাসিক ভবন ভাঙার সিদ্ধান্তে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এই বাড়িটিই উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর (সত্যজিৎ রায়ের ঠাকুরদা) স্মৃতিবিজড়িত বাসভবন ছিল। বাড়িটির মালিক ছিলেন হরিকিশোর রায়, যিনি উপেন্দ্রকিশোরের পালক পিতা ছিলেন।
এই ঐতিহাসিক ভবনটি বহু বছর ধরে বাংলাদেশ শিশু অ্যাকাডেমি, ময়মনসিংহ জেলা শাখা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। সম্প্রতি শিশু অ্যাকাডেমি ভবনটি ভেঙে সেখানে বহুতল স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এবং ইতিমধ্যেই ভবনের সামনের বড় একটি অংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে।
বিষয়টি জানার পর বাংলাদেশ (Bangladesh) সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ভাঙার কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। বিভাগের ময়মনসিংহ জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাবিনা ইয়াসমিন জানিয়েছেন, ভবনটি যদিও প্রত্নতাত্ত্বিক তালিকাভুক্ত নয়, তথাপি ১০০ বছরের বেশি পুরনো যে কোনও ভবন ভাঙার আগে বিভাগকে জানানো বাধ্যতামূলক। বিশেষত, ভবনটির সঙ্গে ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বের স্মৃতি জড়িত থাকায় হস্তক্ষেপ করা হয়েছে।
ভবন ভাঙার খবর ছড়িয়ে পড়তেই নাগরিক সমাজ ও ইতিহাসপ্রেমীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। অনেকেই বলছেন, এই ধরনের হেরিটেজ বিল্ডিং যদি রক্ষা না পায়, তাহলে ধীরে ধীরে দেশের ইতিহাস মুছে যাবে।
বাংলাদেশের ময়মনসিংহ শহরে সত্যজিৎ রায়ের ঠাকুরদা, সাহিত্যিক ও সম্পাদক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর (Upendrakishore Ray Chowdhury) স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি ভেঙে ফেলার খবর প্রকাশ্যে আসতেই তীব্র প্রতিক্রিয়া জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। মঙ্গলবার নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডেলে এক আবেগঘন বার্তা দিয়ে তিনি জানান, এই খবর অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও গভীর উদ্বেগজনক।
মুখ্যমন্ত্রী লেখেন— “খবরে প্রকাশ, বাংলাদেশের ময়মনসিংহ শহরে সত্যজিৎ রায়ের ঠাকুরদা, স্বয়ং স্বনামধন্য সাহিত্যিক-সম্পাদক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর স্মৃতিজড়িত তাঁদের পৈতৃক বাড়িটি নাকি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। ভাঙার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছিল বলে খবর প্রকাশিত। এই সংবাদ অত্যন্ত দুঃখের।”
তিনি আরও বলেন— “রায় পরিবার বাংলার সংস্কৃতির অন্যতম ধারক ও বাহক। উপেন্দ্রকিশোর বাংলার নবজাগরণের একজন স্তম্ভ। তাই আমি মনে করি, এই বাড়ি বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাসের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।”
এই ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য রক্ষায় আন্তরিক আহ্বান জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর আবেদন— “আমি বাংলাদেশ সরকার ও ওই দেশের সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের কাছে আবেদন করব, এই ঐতিহ্যশালী বাড়িটিকে রক্ষা করার জন্য। ভারত সরকারকেও অনুরোধ করব, বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়ে নজর দিন।”
উল্লেখ্য, উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী শুধু সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষ নন, তিনি নিজে একজন বিশিষ্ট লেখক, চিত্রকর, সংগঠক ও ‘সন্দেশ’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। বাংলার নবজাগরণ-যুগে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। তাঁর স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি ভেঙে ফেলার পরিকল্পনায় ক্ষুব্ধ বাংলা ও আন্তর্জাতিক বাঙালি সমাজ। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের নানা প্রান্ত থেকে বিষয়টি রক্ষার দাবি উঠেছে।