শতবর্ষে মৃণাল সেন, পদাতিক থেকে কলকাতা ৭১ সময়ের দলিল বুনেছেন তিনি

সিনেমার মাধ্যমে সময়কে তুলে ধরার কাজ আজীবন করে গিয়েছেন মৃনাল সেন। চলচ্চিত্র তাঁর কাছে গণ আন্দোলনের হাতিয়ার। আজ শতবর্ষে মৃণাল সেন।

May 14, 2023 | 6 min read
Published by: Drishti Bhongi
মৃণাল সেন

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: চলচ্চিত্রের নিজস্ব ভাষা রয়েছে, কেবল কল্পনা নয়; সে ভাষায় ধরা থাকে বাস্তবের অখ্যান; তা সময়ের প্রতিফলন করে। এই সময়ের প্রতিফলন করা চলচ্চিত্রই হয়ে ওঠে কালোত্তীর্ণ। সিনেমার মাধ্যমে সময়কে তুলে ধরার কাজ আজীবন করে গিয়েছেন মৃনাল সেন। চলচ্চিত্র তাঁর কাছে গণ আন্দোলনের হাতিয়ার। আজ শতবর্ষে মৃণাল সেন।

মৃণাল সেনের চলচ্চিত্র কেবলই নিছক চলচ্চিত্র ছিল না। চলচ্চিত্র আন্দোলন থেকে সাংস্কৃতিক আন্দোলন, মৃণাল সেন ছিলেন সমাজ ও রাজনীতির অন্যতম শ্রেষ্ঠ পুরোধা। সমাজ, রাজনীতি, সংস্কৃতি, গণ আন্দোলন, জনতার ভাষ্য সমস্ত কিছুকে তিনি বিবেচনা করতেন চলচ্চিত্রের দলিল হিসেবে। মৃণাল সেনের চলচ্চিত্রের সবচেয়ে শক্তিশালী যে দিক হল গল্পের বাস্তবতা। কাল্পনিক কোনও গল্পের স্থান ছিল না মৃণাল সেনের চলচ্চিত্রে। অতিসাধারণ মানুষের জীবন যাপনের গল্প উঠে আসত পর্দায়। পারিপার্শ্বিক অবস্থান, রাজনীতির চিরন্তন বাস্তবতা, অভাব দৈনন্দিন চিত্র, মানুষের পরিভাষাই ছিল মৃণাল সেনের চলচ্চিত্রের মুখ্য উপজীব্য। যে গল্পগুলো সচেতনভাবেই বেশিরভাগ চলচ্চিত্রকাররা এড়িয়ে চলেন, সেগুলোই মৃনাল সেনের প্রধান হাতিয়ার। 

তাঁর চলচ্চিত্র নিয়ে তিনি নিজেই বলেন, “আমি অন্যদের মতো কাহিনিনির্ভর ছবি তৈরি করিনি। ডকুমেন্টারি ফিল্মমেকার আমি নই। আমার সিনেমা জ্ঞান ও প্রমাণ দিয়ে বুঝতে হবে।”
মৃনাল সেনের শিল্পবোধ তাঁর বেড়ে ওঠার মধ্যে দিয়েই তিনি অর্জন করেছিলেন। পরাধীন ভারত, ঔপনিবেশিক শাসন, স্বাধীনতার লড়াই ও দেশ ভাগ তাঁর চলচ্চিত্রকে দৃঢ় করে তোলে।

১৯২৩-এর ১৪ মে ফরিদপুরে তাঁর জন্ম। ছোট থেকেই দেখেছেন লড়াই সংগ্রাম, সমৃদ্ধ হয়েছেন পারিপার্শিক পরিস্থিতি দেখে। তাঁর অনেক ছবিতেই রাজনীতি উঠে এসেছে। তাঁর এই রাজনৈতিক সচেতনতার পিছনে ছিল তাঁর ফরিদপুরের জীবন। তাঁর বাবা দীনেশ সেন ছিলেন পেশায় উকিল, চরমপন্থী কংগ্রেসি, বিপিনচন্দ্র পালের ঘনিষ্ঠ। বিপ্লবীদের ফাঁসির হুকুম হলে তাঁর বাবা তাঁদের হয়ে কেস লড়তেন। এক বার গান্ধী গ্রেফতারের প্রতিবাদে সারা দেশে হরতাল। বাবা আদালতে তো গেলেনই না, জেলাশাসক কারণ জানতে চাইলে স্পষ্ট বলে দিলেন কারণটা। সে জন্যে শাস্তি পেতে হয়েছিল তাঁকে। এ সব দেখতে দেখতেই বড় হয়েছেন মৃণাল সেন।

সুভাষচন্দ্র বসু আর বিপিনচন্দ্র পালের স্নেহধন্য ছিলেন তাঁর মা। ব্রিটিশ-বিরোধী জনসভায় উদ্বোধনী গান গাইতেন মা। তিনি তা সামনে থেকে দেখেছেন। ছোট থেকে দেখেছেন কত অসংখ্য লোক তাঁদের বাড়িতে আসতেন। যাঁদের সঙ্গে সরাসরি রাজনীতির যোগ ছিল। তাঁদের পুলিশ খুঁজে বেড়াচ্ছে। ফলে বাড়িতে ক্ষণে ক্ষণে পুলিশের তল্লাশি চলত। তাঁর নিজের কথায়, “কী করে মানুষ পালিয়ে বেড়ায় এটা আমি খুব ছেলেবেলা থেকে দেখে আসছি। মানুষ ভয় পেয়ে পালায়, এক জন মানুষ অনেক মানুষের জন্যেই পালায়। ছোটবেলা থেকেই আমি পুলিশ চিনেছি।’’

বড় হওয়ার সময়ে কাজী নজরুল ইসলাম, জসীমউদদীনের মতো বিখ্যাত কবিদের পেয়েছিলেন মৃনাল সেন। স্কুলে পড়াকালীন অবস্থায় তাঁদের বাড়িতে প্রায়ই আসতেন তাঁর দাদার বন্ধু কবি জসীমউদদীন। মৃণাল সেনরা তাঁকে “সাধুদা” বলে ডাকতেন। একবার তাঁর বড়দা তাঁর বন্ধুর একটি কবিতা বাবাকে পড়তে দিলেন। দশ লাইনের কবিতাটি পড়ে মৃণাল সেনের বাবা বললেন “ভালো হয়েছে কবিতাটি। কিন্তু অনেক বানান ভুল।” সেটিই ছিল জসীমউদদীনের বিখ্যাত  “কবর” কবিতার প্রাথমিক খসড়া। স্কুলে পড়াবস্থায় কৈশোরে এক মিছিলে ব্রিটিশবিরোধী স্লোগান দেওয়ার অপরাধে কিশোর মৃণাল সেনকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। ছাত্রাবস্থায় কমিউনিস্ট পার্টির সাংস্কৃতিক শাখার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি, কিন্তু তখনও কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হননি। কলকাতায় কলেজে থাকার সময় তিনি গণনাট্য সংঘের সদস্য হয়েছিলেন।

তাঁর ছবিতে এই সব স্মৃতিই ধরা দিয়েছে। সময়কে সুনিপুনভাবে পুনর্নির্মাণ করেছেন মৃণাল সেন। ধরাবাঁধা জীবনের গল্প বলতে চাননি। ফিল্মের ফর্মকে ভেঙেছেন, গড়েছেন। কেতাবি কায়দায় ক্যামেরা চলেনি তাঁর ফিল্মে। অনেক সময় ক্যামেরার ফ্রেম স্লিপ করেছে। ফ্রেমলাইন ক্যামেরার মাঝখানে চলে এসেছে। পুলিশের লাঠি চালানো বা বিভিন্ন মারামারির শট তুলতে গিয়ে যা ঘটেছে। কিচ্ছু তিনি বদল করেননি। কলকাতা ৭১, পদাতিক, ইন্টারভিউতে তা ছড়িয়ে রয়েছে।

১৯৬৯-এ তৈরি ভুবন সোম হিন্দি ছবির ভাবনাকে, বানানোর রীতিকে বদলে দিয়েছিল। মাত্র দেড় ঘণ্টার এই ছবিটি সরকারি ফিল্ম সংস্থা তদানিন্তন এফএফসির (আজকের এনএফডিসি) ইতিহাস বদলে দিয়েছিল। ছবির তুমুল জনপ্রিয়তা সংস্থাটিকে সাহস জুগিয়েছিল, পরে নতুন ধারার ছবিতে অর্থ বিনিয়োগের। ভুবন সোমকে ভারতীয় নতুন ধারার চলচ্চিত্রের পথিকৃৎ বলা হয়। ভুবন সোম শ্রেষ্ঠ অভিনেতা, শ্রেষ্ঠ পরিচালক ও শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার এই তিনটি শাখায় ভারতের জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিল। এই চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠ পরিচালক হিসেবে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন মৃণাল সেন। তাঁর শেষ ছবি আমার ভুবন।

প্রথম ছবি ১৯৫৫-এর ২১শে অক্টোবর, রাতভোর থেকে মৃনাল সেনের যাত্রা শুরু হয়েছিল। উত্তম কুমার এবং সাবিত্রী চট্টপাধ্যায়কে নিয়ে বানানো ছবিটি চূড়ান্ত ফ্লপ। বিখ্যাত অভিনেতা ছবি বিশ্বাসও ছিলেন। পরবর্তী ছবি নীল আকাশের নীচে, কালী বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে তিনি বানিয়েছিলেন এই ছবি। এই ছবির প্রযোজক ছিলেন গায়ক এবং সুরকার হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। নীল আকাশের নীচে হল প্রথম ভারতীয় ছবি যার উপর ভারত সরকার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল, যদিও পরে তা তুলে নেওয়া হয়। এই চলচ্চিত্রে উৎপল দত্ত অভিনয় করেছিলেন। এই চলচ্চিত্রে ব্রিটিশ ভারতের শেষ দিকের পটভূমিকায় কলকাতায় সমাজের নানা স্তরের মানুষের জীবন তুলে ধরা হয়েছিল। যেখানে ফেরিওয়ালা ও বাসন্তী নামের এক নারীর মধ্যে প্রেম চিত্রায়িত করা হয়েছে।

মৃণাল সেনের “বাইশে শ্রাবণ” মুক্তি পেয়েছিল ১৯৬০ সালে। আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিতি পান মৃণাল সেন। এই চলচ্চিত্র নির্মাণ নিয়ে ভীষণ তৃপ্তি পেয়েছিলেন মৃণাল সেন। বাইশে শ্রাবণ ছবিতে উঠে এসেছিল প্রত্যন্ত এক গ্রামের অজস্র সমস্যার কথা। যেখানে এসেছিল তেতাল্লিশের দুর্ভিক্ষ, অভাবের গল্প, এরপর একে একে মুক্তি পেতে থাকে মৃণাল সেনের চলচ্চিত্র পুনশ্চ, অবশেষে, প্রতিনিধি।

১৯৬৩ সালে মৃণাল সেন বানালেন, আকাশ কুসুম। যার কড়া সমালোচনা করেছিলেন সত্যজিৎ রায়। প্রায় দুমাস ধরে দু-জনের মধ্যে চিঠি-যুদ্ধ চলেছিল। ১৯৬৫ সালে “কাঁচ কাটা হীরে” চলচ্চিত্র পরিচালনার মধ্য দিয়ে হিন্দি চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে মৃণাল সেনের। আর এর পরের বছর মাটির মনীষা চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে ওড়িয়া ভাষার চলচ্চিত্রে অভিষেক হয়েছিল মৃণাল সেনের। তেলেগু ভাষাতেও তিনি ছবি করেছেন। নানা ভারতীয় ভাষায় অন্তত গোটা আটেক ছবি করেছেন, ওড়িয়ায় মাটির মনিষ, তেলুগুতে ওকা উরি কথা, হিন্দিতে ভুবন সোম, এক আধুরি কহানি, মৃগয়া, খণ্ডহর, জেনেসিস, একদিন অচানক, যা আন্তর্জাতিকতার কথা বলে। টেলিফিল্ম, শর্টফিল্ম এবং ডকুমেন্টারি বাদ দিলে তাঁর পূর্ণদৈর্ঘ্যের ফিচার ফিল্মের সংখ্যা সাতাশ। বিদেশে রাশিয়া ও ফ্রান্স থেকে সম্মানিত হয়েছেন, রাজ্যসভার সাংসদ হয়েছেন, পদ্মভূষণ, দাদাসাহেব ফালকেতেও ভূষিত হয়েছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধের বছর মুক্তি পেয়েছিল মৃণাল সেনের বিখ্যাত চলচ্চিত্র ইন্টারভিউ। যে চলচ্চিত্রে মৃণাল সেন তুলে ধরেছিলেন কলকাতার এক সাধারণ তরুণের চাকরির সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গ। ইন্টারভিউ ছিল মৃণাল সেনের কলকাতা ত্রয়ীর প্রথম চলচ্চিত্র। একই বছর মুক্তি পেয়েছিল মৃণাল সেনের কলকাতা ত্রয়ীর বিখ্যাত চলচ্চিত্র কলকাতা ৭১। চলচ্চিত্রটি ছিল চারটি আলাদা আলাদা গল্পের সমষ্টি। সমরেশ বসু, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রবোধ সান্যাল ও মৃণাল সেনের চারটি গল্পের ওপর ভিত্তি করে চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করা হয়েছিল। কলকাতা ট্রিলজির শেষ ছবি ছিল পদাতিক। পদাতিক মুক্তি পেয়েছিল ১৯৭৩ সালে। চলচ্চিত্রটির কাহিনীকার মৃণাল সেন স্বয়ং ও আশীষ বর্মণ। কলকাতার ত্রয়ী চলচ্চিত্রের মাধ্যমে মৃণাল সেন তৎকালীন কলকাতার অস্থির অবস্থাকে তুলে ধরেছিলেন।​
১৯৭৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এক দিন প্রতিদিন-এ উঠে এল মধ্যবিত্ত সমাজের নীতিবোধ। মধ্যবিত্ত পরিবারের এক কর্মজীবী মেয়ে মেয়ে চিনু। একদিন সে রাতে বাড়ি ফিরতে পারে না। সেই রাতে গোটা পরিবারের উৎকণ্ঠা, ভয় আতঙ্ক সবমিলিয়ে একটি মেয়ের পরিবার যে কলকাতা শহরে কতোটা অসহায় তা তুলে ধরা হয়েছে। একদিন প্রতিদিন জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিল তিনটি বিভাগে। সেবার শ্রেষ্ঠ পরিচালক নির্বাচিত হয়েছিলেন মৃণাল সেন। এর পরের বছর মুক্তি পেয়েছিল মৃণাল সেনের আরেক বিখ্যাত চলচ্চিত্র “আকালের সন্ধানে”। আকালের সন্ধানে চলচ্চিত্রে দেখা যায় একটি চলচ্চিত্রের কলাকুশলীরা শুটিংয়ের জন্য দল বেঁধে একটি গ্রামে আসে। চলচ্চিত্রটির বিষয়বস্তু ছিল তেতাল্লিশের মন্বন্তর। আকালের সন্ধানে মৃণাল সেনের সবচেয়ে বিখ্যাত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি। ভারতের জাতীয় পুরস্কার, বিশ্বখ্যাত বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে রৌপ্য ভল্লুক পেয়েছিল আকালের সন্ধানে।

চলচ্চিত্রের সঙ্গেই গণনাট্য, স্টুডিও পাড়ার ট্রেড ইউনিয়ন ইত্যাদির সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছিলেন মৃণাল সেন, চলচ্চিত্র সংক্রান্ত লেখালেখির কাজও চালিয়ে যাচ্ছিলেন পুরদমে৷

১৯৮২ সালে মুক্তি পেয়েছিল খারিজ, খারিজের কাহিনীকার ছিলেন প্রখ্যাত সাংবাদিক ও সাহিত্যিক রমাপদ চৌধুরী। খারিজ চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছিল ১৯৮২ সালে। কান চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কারে পেয়েছিল খারিজ। শিকাগো চলচ্চিত্র উৎসবে ব্রোঞ্জ হুগো পুরস্কার আর ভ্যালাডয়েড চলচ্চিত্র উৎসবে গোল্ডেন স্পাইক পুরস্কার পেয়েছিল খারিজ।

বাঙালি মধ্যবিত্তের দ্বন্দ্বে আকীর্ণ, রুক্ষ, স্ববিরোধী আর স্বপ্ন ভাঙা জীবন যেমন ঠাঁই পেত তাঁর ছবিতে, তেমনই নকশাল আন্দোলন থেকে জরুরি অবস্থা অবধি বামপন্থী আন্দোলনের শক্তি ও দুর্বলতার ইতিহাসও ধরা পড়ত তাঁর এই সব ছবিতে। অসম্ভব দারিদ্র আর ভয়ঙ্কর শোষণ ধরা পড়ত তাঁর ছবিতে। পুলিশ-প্রশাসন-সরকার রাষ্ট্র যন্ত্রের সশস্ত্র সন্ত্রাস। গণতন্ত্রের নেপথ্যে রাষ্ট্র বা আইন আদালত শাসন নিয়ে প্রায়ই সপ্রশ্ন হয়ে উঠতেন তিনি, সেই সময়কার প্রায় প্রতিটি ছবিতেই। সে দিক থেকে দেখলে মৃণাল সেনকে রাজনৈতিক চলচ্চিত্রকার বললে মোটেও বাড়িয়ে বলা হবে না।

আশি থেকে নব্বইয়ের গোড়া পর্যন্ত যে ধরনের ছবি তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে উঠলেন মৃণাল সেন, সেখানে মধ্যবিত্ত বাঙালির জীবন যেন আরও বেআব্রু। আত্মরক্ষার আর কোনও অস্ত্র রইল না, প্রায় প্রতিটি ছবির চরিত্রদের তিনি চুল ধরে টেনে এনে দাঁড় করিয়ে দিলেন আয়নার সামনে। একদিন প্রতিদিন, আকালের সন্ধানে, খারিজ, খণ্ডহর, জেনেসিস, মহাপৃথিবী ছবিতে আত্মসমালোচনা আর নিজেকে প্রশ্ন করা শুরু করলেন তিনি। কতটা বাস্তবনিষ্ঠ হতে পারছেন বা হওয়ার চেষ্টা করছেন শিল্পকর্মীরা, কিংবা বাস্তবের ধাপ বেয়ে চলতে চলতে কোনও ইচ্ছাপূরণের মোহে আটকে পড়ছেন না তো তাঁরা, এ সব প্রশ্নেরই যেন উত্তর পাওয়ার একটা দুর্মর চেষ্টা ছবিগুলিতে।
১৯৯২ সালে মহাপৃথিবীর পর নিয়মিত ছবি করা ছেড়ে দিয়েছিলেন। দীর্ঘ দশ বছরের ব্যবধানে যেদুটি ছবি করেছিলেন, অন্তরীণ আর আমার ভুবন। ১৯৯৪ সালে মুক্তি পেল অন্তরীন। ২০০২-তে মৃণাল সেনের সর্বশেষ চলচ্চিত্র আমার ভুবন মুক্তি পেয়েছিল। এর পরে আর ছবি করেননি মৃনাল সেন। তাঁর জীবন, তাঁর ছবি চলচ্চিত্র যাপনের কথা বলে। চলচ্চিত্রকে তিনি মানুষের কথা বলতে হাতিয়ার করেছিলেন, যা আজীবন তিনি করে গিয়েছেন।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen