ভারতের সংবিধান সাজিয়েছিলেন এক বঙ্গসন্তান, জানেন কে?

এমন নকশা মন্ডিত সৌন্দর্য্যময় সংবিধানের পৃষ্ঠা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।

January 26, 2021 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi
নন্দলাল বসু

ভারতবর্ষ(India) ১৯৪৭ সালে স্বাধীন তো হল। কিন্তু স্বাধীন দেশের একটি সংবিধান (Constitution) না থাকলে চলে! দেশের মহান নেতারা একজোট হয়ে তৈরি করলেন ‘ভারতের সংবিধান’ (Indian Constitution)। কিন্তু এই মহান দেশের সংবিধান তার গড়ন, গঠন ও নকশা সে তো যেমন তেমন ভাবে হওয়ার নয়। তা হাতে লিখতে হবে। শুধু কী তাই? সেই হাতে লেখা পৃষ্ঠার পাতায় পাতায় চাই ছবি ও নকশার বৈভব। ঠিক যেমনটি থাকতো মুঘল পুঁথি চিত্রে কিংবা পাল ও জৈন পুঁথি চিত্রকলায়।
এই মহান কাজটি করবে কে? নকশাদার হাতের লেখার জন্য তলব পড়ল প্রেমবিহারী নারায়ণ রায়জাদার (সাক্সেনা)। তিনি ব্রিজবিহারী নারায়ণ রায়জাদার সন্তান। ইংরেজি রোমান ঢং-এর হাতের লেখার সুদক্ষ ক্যালিগ্রাফার প্রেমবিহারী। গোটা সংবিধানটি হাতে লেখার দায়িত্ব সঁপে দেওয়া হল তাঁর ওপর। আর হাতের লেখার পাশাপাশি ছবি ও নকশা দিয়ে সংবিধানের পাতাগুলিকে সাজানোর বিষয়টি নিয়ে বিন্দুমাত্র ভাবতে সময় নেননি ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু(Jawaharlal Nehru)। তাঁর কন্যা ইন্দিরার শান্তিনিকেতনের কলা ভবনের মাস্টারমশাই নন্দলাল বসু(Nandalal Bose) ছাড়া আর কেই বা নিতে পারতেন এই মহান দায়িত্ব।

এবার খবর গেল শান্তিনিকেতনে। এমন দায়িত্ব পেয়ে নন্দলাল বসু শান্তিনিকেতনের শিল্পীদের সঙ্গে নিয়ে শুরু করলেন ভারতের সংবিধানের অলঙ্করণের কাজ। আজ আমরা ভারতের সংবিধানের কথা জানি, কিন্তু ক’জন জানতাম যে ভারতের সংবিধানের পাতায় পাতায় ছবি এঁকে রেখে গিয়েছেন এক বাঙালি সন্তান! পুরো সংবিধানটি ছাপা হয় ফোটো লিথোগ্রাফ পদ্ধতিতে দেরাদুনের সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার তত্ত্বাবধানে।

এমন নকশা মন্ডিত সৌন্দর্য্যময় সংবিধানের পৃষ্ঠা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। ভারতের সংবিধানের মূল পাণ্ডুলিপির অলঙ্করণ নন্দলাল বসুর ও তাঁর সহ শিল্পীদের। এটাও বাঙালির গর্ব।

যে যে বিষয় নিয়ে ছবি আঁকা হয়েছে সেগুলি হল মহেঞ্জোদারের সিল, গুরুকুল বা বৈদিক আশ্রমের দৃশ্য, রামায়ণের দৃশ্য, মহাভারতের দৃশ্য, বুদ্ধের জীবনী, মহাবীরের জীবনী, বৌদ্ধধর্মের প্রসার ও সম্রাট অশোকের ভূমিকা, গুপ্ত যুগের শিল্পধারার বিবিধ পর্যায়, বিক্রমাদিত্যে রাজসভা, ওড়িশার ভাস্কর্য শিল্প, নালন্দা, নটরাজের নৃত্য, মহাবলীপুরম ভাস্কর্য দৃশ্য, আকবর ও মুঘল স্থাপত্য, শিবাজি ও গুরু গোবিন্দ সিং, টিপু সুলতান ও ঝাঁসির রানি লক্ষ্মীবাঈ, জাতির পিতা গান্ধী ও তাঁর ডান্ডি মার্চ , গান্ধিজির নোয়াখালি ভ্রমণ, দাঙ্গার সময়, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ও আজাদ হিন্দ ফৌজের লড়াই, ভারতের বাইরে থেকে ভারত, হিমালয়ের দৃশ্য, মরুভূমির দৃশ্য, সমুদ্রের দৃশ্য। সব মিলিয়ে মোট বাইশটি ছবি।

ধর্ম, ঐক্য, বোধ, সমাজ, ত্যাগ, ঐতিহ্য, জাতীয়তাবাদ, দেশের গঠন, জাতির স্বপ্ন সব কিছুর সম্পর্ক রয়েছে এই চিত্রগুলির সঙ্গে। যেমন যে পাতায় রয়েছে জরুরি অবস্থার কথা, সেই ১৫৪ নম্বর পৃষ্ঠার ছবির বিষয় হল গান্ধিজির নোয়াখালির দাঙ্গা কবলিত এলাকা ভ্রমণ। যেখানে রয়েছে কর্মোদ্যম দিয়ে দেশ গঠনের প্রসঙ্গ সেখানে এসেছে সম্রাট আকবরের ছবি। বাণিজ্যের প্রসঙ্গে এসেছে মহাবলীপুরমের সেই ছবি যেখানে রয়েছে গঙ্গা অবতারণের দৃশ্য, মানে নদীপথ তৈরি হচ্ছে। এরকম অসাধারণ চেতনা চিত্রে ভারতের সংবিধান চিত্রিত। যার মূল অবদান নন্দলাল বসু’র।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen