‘ডবল ইঞ্জিন’ ওড়িশায় ভয়াবহ হিংসা! বাঙালি গ্রামের ১৫০টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ! ঘরছাড়া হাজার, জারি কার্ফু

December 9, 2025 | 2 min read
Published by: Ritam

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৮:২২: ভোটার তালিকায় সংশোধন বা ‘SIR’ ঘিরে রাজনীতির পারদ চড়ছিলই, তার মধ্যেই ভয়াবহ হিংসার সাক্ষী থাকল ডবল ইঞ্জিন ওড়িশার (Odisha) মালকানগিরি জেলা। আদিবাসী ও বাঙালিদের দীর্ঘদিনের সংঘাত এবার চরম আকার ধারণ করল। এক আদিবাসী মহিলার মুণ্ডহীন দেহ উদ্ধারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাঙালি অধ্যুষিত একটি গোটা গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল স্থানীয় আদিবাসীদের বিরুদ্ধে। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে এলাকায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং জারি করা হয়েছে কার্ফু।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, সম্প্রতি রাখালগুড়া গ্রামের ৫১ বছর বয়সি এক আদিবাসী মহিলা নিখোঁজ হয়ে যান। গত ৪ ডিসেম্বর নদীর ধার থেকে তাঁর মুণ্ডহীন দেহ উদ্ধার হয়। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, জমি নিয়ে বিবাদের জেরে ওই মহিলাকে খুন করা হয়েছে। এই ঘটনায় শুভরঞ্জন মণ্ডল নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতারও করে পুলিশ। কিন্তু গ্রেপ্তারির পরেও ক্ষোভ প্রশমিত হয়নি। অভিযোগ, এই ঘটনার প্রতিশোধ নিতেই বাংলাভাষীদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়।

 


রবিবার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। অভিযোগ, মালকানগিরির এমভি-২৬ (MV-26) এলাকায় প্রায় ৫০০০ আদিবাসী মানুষ তির, ধনুক, কুড়ুল ও বর্শা নিয়ে চড়াও হয়। হামলাকারীরা গ্রামে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর চালানোর পাশাপাশি প্রায় ১৫০টি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পুলিশের উপস্থিতিতেই এই ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। প্রাণভয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছেন প্রায় ১০০০ মানুষ। ঘরবাড়ির পাশাপাশি বহু গাড়ি ও সম্পত্তি নষ্ট করা হয়েছে।

হিংসা রুখতে সোমবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে ২৪ ঘণ্টার জন্য উপদ্রুত দুটি গ্রামে কার্ফু জারি করা হয়েছে। পাঁচজনের বেশি মানুষের জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গুজব আটকাতে বন্ধ রাখা হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা। জেলা পুলিশ সুপার বিনোদ পাটিল, ডিজিপি ও অন্য উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। রাস্তায় টহল দিচ্ছে বিশাল পুলিশ ও আধা-সামরিক বাহিনী।

 


ওড়িশার মালকানগিরি জেলায় অশান্তির আবহে বাঙালি সমাজের পক্ষ থেকে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। সংগঠনের সভাপতি গৌরাঙ্গ কর্মকার জানিয়েছেন, বারবার স্থানীয় প্রশাসনকে সতর্ক করা সত্ত্বেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাঁর অভিযোগ, অশান্তি বাঁধানোর চেষ্টা আগেই চোখে পড়েছিল।

গৌরাঙ্গ কর্মকার বলেন, “কামওয়াড়া পঞ্চায়েতে এর আগে একই ঘটনা ঘটে। কিন্তু আমরা শান্তি বজায় রাখার চেষ্টা করছিলাম। এবার হিংসা সব সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে।” এই পরিস্থিতিতে মালকানগিরি বাঙালি সমাজ তাণ্ডবকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে। সংগঠনের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করতে হবে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির জন্য ক্ষতিপূরণের দাবিও তোলা হয়েছে।

এই ঘটনা প্রসঙ্গে বিজু জনতা দলের বিধায়ক রণেন্দ্র প্রতাপ সোয়েইন (Ranendra Pratap Swain) বলেন, “মালকানগিরি ওড়িশার অবিচ্ছেদ্য অংশ। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২১ (জীবনের অধিকার), অনুচ্ছেদ ২৫ (ধর্মীয় স্বাধীনতা) এই মুহূর্তে বিপদের মুখে। হিংসা, অগ্নিসংযোগ, লুঠ, খুন বাড়ছে ওড়িশায়। পরিস্থিতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট চাওয়া উচিত স্পিকারের।”

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen