পতঞ্জলির মধুতে মিলল ভেজাল

সুনীতা জানান, সীমাশুল্ক দপ্তরের চোখে ধুলো দিতে ওই চিনা সিরাপ ভারতে আমদানি করা হতো রঙের পিগমেন্ট হিসাবে।

December 3, 2020 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

করোনা আবহে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে আপনি কি বড় দোকান থেকে নামজাদা ব্র্যান্ডের মধু কিনে খাচ্ছেন? জেনে রাখুন, ৭৭% জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের মধুতেই রয়েছে চিনির রসের ভেজাল। এই চাঞ্চল্যকর দাবি করেছে সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট (সিএসই)।

বাজারে বিভিন্ন নামজাদা সংস্থা তাদের জনপ্রিয় ব্র্যান্ডে যে মধু (Honey) বিক্রি করে, তা পরীক্ষা করে সিএসই দেখেছে, ওই মধু ভেজাল এবং তাতে চিনির সিরাপ মেশানো রয়েছে। বাজারে বিক্রি হচ্ছে এমনই ১৭ বিভিন্ন বড় ও মাঝারি ব্র্যান্ডের ২২টি নমুনা পরীক্ষা করে সিএসই দেখতে পেয়েছে, ১৭টি ব্র্যান্ডের বা ৭৭% মধুতেই চিনির সিরাপ ভেজাল দেওয়া হয়েছে! ওই নমুনাগুলিতে মধুর বিশুদ্ধতা প্রথমে গুজরাটে ন্যাশনাল ডেয়ারি ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (এনডিডিবি) সেন্টার ফর অ্যানালিসিস অ্যান্ড লার্নিং ইন লাইভস্টক অ্যান্ড ফুড (কাফ) পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করা হয়। মাত্র ৫টি ব্র্যান্ড সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। সিএসই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘ডাবর, পতঞ্জলি, বৈদ্যনাথ, হিটকারি, এপিস হিমালয়াজ-এর মতো সংস্থাগুলির মধুর নমুনাও এনএমআর (নিউক্লিয়ার ম্যাগনেটিক রেসোন্যান্স) পরীক্ষায় পাশ করতে পারেনি।’ সিএসই’র রিপোর্ট নিয়ে সংস্থাগুলিকে প্রশ্ন করা হলে তাদের কাছ থেকে কোনও জবাব পাওয়া যায়নি।

সিএসই (CSE) জানিয়েছে, ‘মধুর বিশুদ্ধতা নির্ধারণের জন্য প্রাথমিক সি৪ সুগার টেস্ট (চিনির ভেজালের প্রাথমিক পরীক্ষা) সবক’টি বড় ব্র্যান্ডের নমুনা উত্তীর্ণ হতে পারলেও তারা এনএমআর টেস্ট (আন্তর্জাতিক স্তরে বর্তমানে এই ল্যাবরেটরি পদ্ধতিতে মডিফায়েড সুগার সিরাপ টেস্ট করা হয়) পাশ করতে পারেনি।’

সিএসই’র দাবি, জার্মানির একটি ল্যাবরেটরিতে পাঠানো ১৩টি নমুনার মধ্যে মাত্র তিনটি ওই এনএমআর টেস্টে সফল হয়েছে।’ এই ফলাফল সম্পর্কে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি মন্তব্য করেছে, ‘এই রিপোর্টে আমরা স্তম্ভিত। এই রিপোর্ট এটাই প্রমাণ করে যে আমাদের দেশে খাদ্যপণ্যে ভেজাল কোন স্তরে পৌঁছেছে। ভেজাল মেশানোর পদ্ধতিও কত উন্নত হয়েছে যে ওই ভেজাল খাদ্যপণ্য দেশে নির্ধারিত পরীক্ষা সহজেই পাশ করে যাচ্ছে।’

সংস্থাটির ফুড সেফটি অ্যান্ড টক্সিনস টিমের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর অমিত খুরানা বলেন, ‘আমাদের উদ্বেগ কেবল মধুতে ভেজাল মেশানো নিয়ে নয়। আমাদের আশঙ্কা হল, ওই ভেজাল ধরা দিন কে দিন কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠছে। বস্তুত, ওই মধুতে যে সুগার সিরাপ মেশানো হয়েছিল সেই সিরাপ এমনভাবে বানানো হয়েছে যে তা সাধারণ পরীক্ষায় সনাক্ত করা প্রায় অসম্ভব।’ সিএসই আরও জানিয়েছে যে তারা এমন বেশ কিছু চিনা ব্যবসায়িক পোর্টালের হদিশ পেয়েছে যারা ‘পরীক্ষায় ভেজাল ধরা যাবে না’ এই বিজ্ঞাপন দিয়ে ফ্রুকটোজ সিরাপ বিক্রি করছে। ওই সিরাপ তারা ভারতেও রপ্তানি করেছে বলে সিএসই জানতে পেরেছে। সিএসই’র দাবি, এই সিরাপ সি৩ ও সি৪ সুগার টেস্টকে সহজেই বুড়ো আঙ্গুল দেখাতে পারে।

সিএসই’র ডিরেক্টর জেনারেল সুনীতা নারিন জানান, এই তথ্য জানতে পারার পর সংস্থাটি একটি গোপন অনুসন্ধান শুরু করে। তাঁর দাবি, ‘চিনা সংস্থাগুলি সিএসইকে জানিয়েছে যে মধুর সঙ্গে তাদের সিরাপ ৫০-৮০% মেশালেও ওই ভেজাল সি৩ এবং সি৪ টেস্টে ধরা যাবে না। সুনীতা জানান, সীমাশুল্ক দপ্তরের চোখে ধুলো দিতে ওই চিনা সিরাপ ভারতে আমদানি করা হতো রঙের পিগমেন্ট হিসাবে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen