বুলেটের বদলা ব্যালটে নিতে শীতলকুচিতে দল বেঁধে ভোট দিল জনতা

ভোট পরিচালনা করতে সকাল থেকে এলাকায় আঁটোসাঁটো নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছিল। শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন সকলেই।

April 30, 2021 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

বৃহস্পতিবার সকালে শীতলকুচি (Sitalkuchi) বিধানসভা কেন্দ্রের আমতলি মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের সেই ১২৬ নম্বর বুথে ভোট দিতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়লেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে নিহত তিন তৃণমূল (Trinamool) কর্মীর পরিবারের সদস্যরা। ভোট দিয়ে তাঁরা বলেন, বুলেটের জবাব ইভিএমেই দিলাম। নিহতদের মধ্যে একজনের অবশ্য সেদিন ঘটনার আগেই ভোট দেওয়া হয়ে গিয়েছিল।

প্রসঙ্গত, এদিন দুপুরে বুথে একসঙ্গে ভোট দিতে আসেন নিহত তিন তৃণমূল কর্মীর পরিবারের লোকজন। নিরাপত্তা কর্মী সহ নির্বাচন দপ্তরের আধিকারিকদের অনুমতি নিয়ে তিনটি পরিবারের লোকজনকে টোটোয় করে বুথের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। মাঠে টোটো আসতেই কেঁদে ফেলেন তাঁরা। তাঁদের বুথে নিয়ে যেতে সাহায্য করেন নিরাপত্তা কর্মীরা। নিহতদের পরিবারের সদস্যরা বলেন, ‘সেদিনের মর্মান্তিক ঘটনার জবাব দিতেই আমরা বুথে এসেছি’। ভোট দিয়ে বেরিয়ে এসে বলেন, ‘ওঁদের কথা মনে করেই ভোট দিলাম’।

প্রসঙ্গত, ১০ এপ্রিল শীতলকুচি বিধানসভার জোরপাটকি গ্রাম পঞ্চায়েতের আমতলি মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের এই বুথে ভোট চলাকালীন লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা তিনজনকে লক্ষ্য করে গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে। বাহিনীর গুলিতে ওই বুথ চত্বরেই আরও একজনের মৃত্যু হয়।

স্থানীয়দের দাবি, নিহতদের তিনজন ১২৬ নম্বর বুথের ভোটার। এছাড়া ঘটনার সময় রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় গুলির শব্দ শুনে মাঠ দিয়ে পালাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন পাশের বুথের এক ভোটার। সেদিন অবশ্য তাঁর ভোট হয়ে গিয়েছিল। এর পরেই এলাকার পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ঘটনার পরই ওই বুথে ভোটগ্রহণ স্থগিত করে দেয় নির্বাচন কমিশন। এদিন ওই বুথে পুনর্নির্বাচন হয়। ১০ এপ্রিল কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে নিহত হন মণিরুজ্জামান মিঁয়া, ছামিউল মিঁয়া, হামিদুল মিঁয়া ও নুর আলম মিঁয়া। নিহত নুর আলম পাশের বুথের ভোটার ছিলেন।

এদিন ভোট দিতে এসে কান্না ভেজা গলায় মণিরুলের বাবা আমজাদ হোসেন বলেন, ছেলেকে সেদিন নির্মমভাবে গুলি করে মারে কেন্দ্রীয় বাহিনী। সেদিনের অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাতে এদিন পরিবারের সকল সদস্যকে নিয়ে ভোট দিলাম। অভিযুক্তদের শাস্তি চাই। হামিদুলের বাবা দিল মহম্মদ মিঁয়া বলেন, আমার একটি মাত্র ছেলে ছিল, ওকে হারিয়েছি। ছেলেকে যারা মেরেছে, তারা যাতে শাস্তি পায়, সেজন্য ভোট দিলাম।
এদিন মৃতদের পরিবারের লোকজন বুথে আসতেই লাইনে দাঁড়ানো অধিকাংশ ভোটার কান্নায় ভেঙে পড়েন। মৃত ছামিউল মিঁয়ার মা ছালেমা বিবি কাঁদতে কাঁদতে ভোট দিয়ে বুথ থেকে বেরিয়ে আসেন। তিনি শুধু বলতে থাকেন, ‘আমার ছেলেটা আর কোনওদিন মা বলে ডাকবে না’।

সন্ধ্যা পর্যন্ত এই বুথে ৯৬৬টি ভোটের মধ্যে ৮১৪টি ভোট পড়ে। এ ব্যাপারে মাথাভাঙা-১ ব্লকের বিডিও সম্বল ঝা বলেন, শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে। ভোট পরিচালনা করতে সকাল থেকে এলাকায় আঁটোসাঁটো নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছিল। শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন সকলেই।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen