আজ ফলহারিণী কালী পুজো, জেনে নিন এই তিথির মাহাত্ম

জগতের স্থিতি সৃষ্টি প্রলয়ের কর্তৃ চৈতন্য রূপী কালী। এই কালী আবার জীবের কর্মফল দানকারী। কর্মফল অনুযায়ী ভালো-মন্দ ফল দান করেন। মহাকালী একধারে ভয়ংকরী, অন্যদিকে অপার করুণাময়ী।

June 9, 2021 | 3 min read
Published by: Drishti Bhongi

কালকে যিনি হরণ করেন তিনি কালী। কালের কবলে পড়ে বিনাশ হয়নি এমন বস্তু এই জগতে নেই। তাই কালের সঙ্গে কালীর সম্পর্ক চিরন্তন চিরসত্য এবং চির মাধুর্যময়। এই কালকে শাসন ও নিয়ন্ত্রণ করেন যিনি সেই কালিকা দেখতে ভয়ঙ্কর হলেও তিনি আমাদের কাছে অত্যন্ত কাছের, অতি আপন, আমাদের ভালোবাসার ও শ্রদ্ধার জগতের মঙ্গলময়ী মা। দশমহাবিদ্যার প্রথম রূপ কালী স্বয়ং ব্রহ্মশক্তি। স্বয়ং মহাকাল শিব মায়ের পদতলে বিরাজ করছেন। তিনি সব রূপে নির্গুণ। পরমসত্তা তাঁর উপর দণ্ডায়মান। জগতের স্থিতি সৃষ্টি প্রলয়ের কর্তৃ চৈতন্য রূপী কালী। এই কালী আবার জীবের কর্মফল দানকারী। কর্মফল অনুযায়ী ভালো-মন্দ ফল দান করেন। মহাকালী একধারে ভয়ংকরী, অন্যদিকে অপার করুণাময়ী।

মায়ের কাছে শ্রদ্ধা-ভক্তি প্রেম বিবেক বৈরাগ্য প্রার্থনা করতে হয়। এই এই দেবী কালিকার বিভিন্ন নাম। কোথাও নিত্যকালী, কোথাও মহাকালী, কোথাও ভদ্রকালী, কোথাও শ্যামাকালী, কোথাও রক্ষাকালী, কোথাও সিদ্ধেশ্বরী কালী, কোথাও শ্মশানকালী, কোথাও রটন্তীকালী, আবার কোথাও ফলহারিনী কালী। বিভিন্ন নামে তিনি পূজিতা হন। জৈষ্ঠ মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশীতে ফলহারিনী কালী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। ব্রহ্মময়ী কালী একদিকে যেমন সৃষ্টি স্থিতি বিনাশ করছেন, সমস্ত কিছু শক্তি, জ্ঞান, ইচ্ছা ও কর্ম শক্তিরূপে বিরাজিতা।

বাঙালি জীবনে ফলহারিণী কালী পুজোর তাৎপর্য লুকিয়ে রয়েছে শ্রীরামকৃষ্ণের জীবনে। রামকৃষ্ণ এই দিনেই স্ত্রী সারদা দেবীকে পুজো করেছিলেন জগৎ কল্যাণের জন্য। ১২৮০ বঙ্গাব্দে জ্যৈষ্ঠ মাসের অমাবস্যা তিথিতে তিনি দক্ষিণেশ্বরে আদ্যাশক্তি সগুণরূপের পুজো করেছিলেন। তিনি ফলহারিণী কালী পুজোর দিন শ্রীমা সারদাকে ষোড়শীরূপে পুজো করেছিলেন বলে আজও রামকৃষ্ণমঠ ও আশ্রমে এই পুজো ‘ষোড়শী’ পুজো নামে পরিচিত। শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁর মোক্ষপ্রাপ্তির জন্য এই নিয়মে পুজো করলেও এই দিনটিতে হিন্দু ধর্মাবলাম্বী মানুষ নানাবিধ ফল দিয়ে কালীর পুজো করে থাকেন।

জ্যৈষ্ঠমাসে আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল ইত্যাদি নানারকম ফলের মরসুমি ফল পাওয়া যায়। সাধক তাঁর ইষ্টদেবীকে বিভিন্ন ফল দিয়ে প্রসাদ নিবেদন করে থাকেন। শাস্ত্রে বলা হয়, জীবনেয সর্বস্ব। অর্থাৎ একদিকে ফলহারিণী যা সাধকের কর্মফল হরণ করেন। অপর দিকে কর্মফল হরণ করে সাধককে তাঁর অভীষ্টফল, মোক্ষফল প্রদান করেন। মহামারী, অনাবৃষ্টি বা বন্যার হাত থেকে রক্ষা পেতে মানুষ রক্ষাকালী পুজো করে। কার্তিক মাসে দক্ষিণাকালীর পুজোয় সকলের সার্বিক কল্যাণ হয়। আর ফলহারিণী কালীপুজো করলে আমাদের প্রত্যেকের বিদ্যা, কর্ম ও অর্থভাগ্যের উন্নতি ঘটে। প্রেম-প্রণয়ে বাধা দূর হয়। দাম্পত্য সাংসারিক জীবনেও সুখশান্তি লাভ হয়।

ফলহারিণী কালী কথাটি এসেছে যিনি আমাদের কর্মফল হরণ করেন এবং মোক্ষ দান করেন। কর্মফল হরণ করে তিনি আমাদের মুক্তি দেন। আমাদের জীবনের সমস্ত বিপদ, দুঃখ, দৈন্য, ব্যাধি ও সর্ব অশুভ শক্তির বিনাশ করেন তিনি। ঐশ্বর্য্য, আরোগ্য, বল, পুষ্টি, কীর্তি, বংশগৌরব মুখ্য সবই প্রদান করেন। এক কথায় পরম প্রাপ্তি ও পরমাত্মা দুটোই লাভ করা যায়। এই ফলহারিণী কালী পুজোয় সাধকের মনে আধ্যাত্ম্য চেতনার দ্রুত বিকাশ ঘটে। ১৮৭৩ সালে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ মা সারদা দেবীকে ষোড়শী রূপে পূজা করেন। রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠার পর বিভিন্ন শাখায় এই দিনটি ধুমধাম করে পালন করা হয়। দশমহাবিদ্যার যে দশটি রূপ কালী, তারা, ষোড়শী, ভুবনেশ্বরী, ভৈরবী, ছিন্নমস্তা, বগলা, ধূমাবতী, মাতঙ্গী, কমলা – ষোড়শীর রূপটি সেই আদিশক্তি মহামায়ার রূপ। এই দিন রামকৃষ্ণদেব সারদাদেবীকে বিদ্যা এবং শ্রীবিদ্যাদাতৃরূপে পূজা করেন।

২০২১ সালের ফলহারিণী আমাবস্যা সময় হচ্ছে বুধবার ইংরেজির ৯ জুন দিবা ১টা ৩৪ মিনিট থেকে ১০ জুন বৃহস্পতিবার দিবা ৩টে ২৯ মিনিট পর্যন্ত। বুধবার ১৬টি কলা ও ৫টি ফল, ফুল, ক্ষীরের মিষ্টি, বস্ত্র, দক্ষিণা-সহ সহ কোনও কালী মন্দিরে পুজো দেওয়া উচিত। মনের যে কোনও একটি ইচ্ছা পূরণ করতে মা কালীর চরণে একটি ফল দিন আর সারা বছর ওই ফলটি খাবেন না। এছাড়াও মা কালীর মন্দিরে পাঁচটি ফল দিন। মাতৃস্থানীয়া কোনও মহিলাকে পাঁচটি ফল দিন আর প্রণাম করে আশীর্বাদ নিন। আর্থিক কষ্ট দূর করার জন্য মা কালীর মন্দিরে ক্ষীর দিয়ে পুজো দিন। ক্ষীরের অভাবে ক্ষীরের প্যারা দিয়েও পুজো দিতে পারেন। মনে রাখতে হবে, কালী নারীশক্তির প্রতীক। তাই নারী জাতির প্রতি কুদৃষ্টি রাখে যারা বা নারী জাতিকে অবজ্ঞার চোখে দেখে যারা, তারা কালীর পুজো করলেও কোনও ফল পাবে না।পাশাপাশি একটি সরষের তেলের প্রদীপ জ্বেলে দিতে ভুলবেন না কিন্তু।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen