মকর সংক্রান্তির দিন কেন পালন করা হয় সোঁদো ব্রত?

মকর সংক্রান্তির দিন ‘সুয়ো-দুয়ো’ সাজিয়ে পুজো হয়। তারপরের দিন নদীতে সেটা ভাসিয়ে দিতে হয় । নারী পুরুষ নির্বিশেষে এই লৌকিক উৎসবটি পালন করেন।

January 15, 2024 | 3 min read
Published by: Drishti Bhongi

নিউজ ডেস্ক,দৃষ্টিভঙ্গি: ব্রত কথাটির অর্থ নিয়ম বা সংযম। বাংলা জুড়ে বারো মাসে তেরো পার্বণ। এমন মাস খুবই কমই আছে, যে মাসে কোনও ব্রতের অনুষ্ঠান হয় না। এরকমই পৌষ মাসে লক্ষ্মীর ব্রতের সাথে সাথে সুয়ো-দুয়োর ব্রত। সুয়ো-দুয়োকে চলতি কথায় বলা হয় ‘সোঁদো’। মকর সংক্রান্তির দিন ‘সুয়ো-দুয়ো’ সাজিয়ে পুজো হয়। তারপরের দিন নদীতে সেটা ভাসিয়ে দিতে হয় । নারী পুরুষ নির্বিশেষে এই লৌকিক উৎসবটি পালন করেন। কীভাবে প্রচলন হল এই ব্রত, তা নিয়ে রয়েছে একটি লৌকিক কাহিনি

এক দেশে এক সওদাগর ছিল। তার সাত ছেলে এক মেয়ে। মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বিয়ের পর থেকে সে আর বাপের ঘরে আসে না। বাপ মা-ও খোঁজ নেয় না মেয়ের। কিছু বছর পরে সওদাগর মারা গেল। তার সাত ছেলে সপ্তডিঙি ধন নিয়ে বেরল বাণিজ্যে। যেতে যেতে পাঁচ মাস কেটে গেল। একদিন তারা পথে আশ্রয় নিল এক ব্যক্তির বাড়িতে। সে তাদের খুব খাতির করে রান্নার জোগাড় দিয়ে গেল। চাল, ডাল, একটা হাঁড়ি আর কাঠ। সওদাগরের ছেলেরা দেখতে পেল না যে হাঁড়ি আসলে ফুটো, আর কাঠও সব ভিজে।

তারা যখন রান্নার তোড়জোড় করছে এমন সময় এক পরমা সুন্দরী স্ত্রীলোক এল তাদের কাছে। জিজ্ঞেল করল, “তোমরা, কোত্থেকে আসছ?” ছেলেরা তাদের পরিচয় দিল। সেই শুনে কাঁদতে কাঁদতে সেই স্ত্রীলোকটি বলল, “ তোমরা আমার ভাই। ফিরে গিয়ে মাকে বলো আমি এখনও মরিনি। তোমরা এখানে আর থেক না। আমার স্বামী ডাকাত” এই বলে সে চলে গেল।

খানিক পরেই ডাকাতের মা এসে তাদের বলল, “তোমরা এখানে কেন এলে! এক্ষুনি আমার পাঁচ ছেলে এসে তোমাদের থেকে সব কিছু কেড়ে মেরে ফেলব! তোমরা শিগগির কিছু ফুটিয়ে খেয়ে নিয়ে এখান থেকে চলে যাও” সাত ভাই ভিজে কাঠে ফুটো হাঁড়িতে কোনওরকমে চাল আধসেদ্ধ ফুটিয়ে সেই বৃদ্ধাকে প্রণাম করে মাঠের মাঝখান ধরে প্রাণপনে ছুট লাগালো। তারা নদীর তীরে এসে মাঝিদের বলল উত্তর পানে পাল তুলে দিতে। এদিকে তারা চলে যাওয়ার পর বৃদ্ধা ঘরের খড়ে আগুন লাগিলে দিয়ে চিৎকার করে তার ডাকাত ছেলেদের ডাকতে লাগল। তারা আসতেই সে বলল, ঘরের অতিথিরা আগুন লাগিয়ে দক্ষিণ দিকে চলে গিয়েছে। পাঁচ ডাকাত তখন দক্ষিণে দৌড় লাগালো তাদের ধরতে। কিন্তু পথ চলতে আর পারে না, গাছপালা তাদের পথ আগলায়। পায়ে গাছপালা আটকে তারা পড়ে গেল।

এদিকে সওদাগরের ছেলেরা ডাকাতের হাত থেকে বেঁচে এসে পৌঁছল এক নতুন দেশে। সেখানে সাতজনে সাত কন্যাকে বিয়ে করে চোদ্দ ডিঙা ধন নিয়ে মায়ের কাছে ফিরে এল। ঘাটে নাও ভিড়তেই তারা দেখল তাদের মা এয়ো-মেয়ে দাঁড়িয়ে। বরণ করে ছেলে-বউ ঘরে তুলল। তারা সুয়ো-দুয়োকে প্রণাম করে যে যার ঘরে গেল।

একদিন ছেলেরা কথায় কথায় মাকে জিজ্ঞাসা করল, “ মা আমাদের কি কোনও বোন নেই?” মা বললে, “ হ্যাঁ বাবা আছে বৈকি। তোমাদের বোন পিসির বাড়ি থাকত। আর পিসি এক ডাকাতের সঙ্গে তার বিয়ে দিয়েছে। সেইজন্য আমরা আর তাকে ঘরে আনতে পারিনি।” ছেলেরা তখন সেই ডাকাত আর তাদের বোনের সঙ্গে দেখা হওয়ার ঘটনা তাদের মাকে জানালো। সব শুনে মা খুব কাঁদতে লাগলো। তখন সাত ভাই জামাই বাড়ি নিমন্ত্রণ করল। জামাই, মেয়ে আর তার শাশুড়ি এল তাদের বাড়ি। গিন্নি মেয়ে বুকে জড়িয়ে খুব কাঁদতে লাগল। তারপর মেয়ে-জামাইকে খাইয়ে-দাইয়ে, সপ্তডিঙি ধন দিয়ে পাঠিয়ে দিল। যাবার সময় সেই ডাকাত জামাই আর তার চারভাই বলল, “মা! আমরা যা পাপ করেছি তার ক্ষয় হবে কী করে?”

সাত সাগরের মা বলল, তোমরা মকরসংক্রান্তির দিন, কলার পেটোর ডিঙি করে গাঁদা ফুল দিয়ে সাজিয়ে, জোড়া পান, জোড়া কলা, সুপুরি, পৈতা ও কড়ির তারা দিয়ে সাজিয়ে সুয়ো-দুয়োর পুজো করবে। সেদিন গোটা দিন উপোস করবে। পরেরদিন পেটোতে ঘিয়ের প্রদীপ জ্বেলে নদী আর পুকুরে ভাসিয়ে দেবে। তা হলেই সমস্ত পাপ থেকে উদ্ধার পাবে। তাই শুনে তারা দেশে চলে গেল। তারপর থেকে প্রতি মকর সংক্রান্তিতে এই ব্রত করতে লাগল। এরপর থেকে সুয়ো- দুয়োর ব্রত করে তারা বেশ সুখে দিন কাটাতে লাগলো। তাদের দেখাদেখি গ্রামবাসীরাও এই ব্রত পালন করতে শুরু করল।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen