এক‌ মলাটে ভারত-চীন, সাহিত্য-সংস্কৃতিতে নয়া অধ্যায় রচনা করেছিলেন রবি ঠাকুর

বির আন্তরিকতা এই দুই দেশের মধ্যে শিল্প-সাহিত্য-শিক্ষা সংস্কৃতির ক্ষেত্রে নিবিড় সেতুবন্ধনের সূচনা করেছিল।

May 8, 2024 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: কবিগুরু তাঁর জীবদ্দশায় বহুদেশ ভ্রমণ করেছেন। এই দেশে তিনি বক্তৃতা দিয়েছিলেন, ফিরে এসে লিখেছিলেন ভ্রমণ কাহিনী ‘চীনে মরণের ব্যবসা’। ১৯২৪ ও ১৯২৭ সালে রবীন্দ্রনাথের চীন ভ্রমণ ভারত ও চীন এই দুই দেশের মানুষের কাছে এক অতি সৌভাগ্য সমন্বয়ের উজ্জ্বল স্মারকচিহ্ন হয়ে রয়ে গেছে।

৮৩ বছর আগে ‘বিশ্বভারতীর মধ্যমণি’ চীনভবনের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। রবীন্দ্র-জীবনকালে শান্তিনিকেতনে প্রতিষ্ঠিত চীনভবনই বিশ্বভারতীর ‘একটি বিরাট হিয়ায়’ সর্বশ্রেষ্ঠ স্বতন্ত্র প্রাচ্য বিদ্যাকেন্দ্র।

শান্তিনিকেতনে চীনভবন প্রতিষ্ঠার আকাঙ্খা পল্লবিত হয়ে রূপ নেওয়ার পিছনে কবির বিশিষ্ট সহযোগী হিসেবে প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ তান-য়ুন-শানের নাম অবশ্যই চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। চীন-ভারত শিক্ষা সংস্কৃতি চর্চার অন্যতম রূপকার ‘ভারতবন্ধু’ অধ্যাপক তান চীনভবনে বহু লুপ্তপ্রায় মূল্যবান দুষ্প্রাপ্য বৌদ্ধগ্রন্থ উদ্ধার, সম্পাদনা এবং অনুবাদের কাজ করেছেন। তিনি উদ্ধার করেছেন বহু মূল্যবান নথিপত্রের। ভারত ও চীন এই দু’টি দেশের সাহিত্য-সংস্কৃতি-ঐতিহ্য ও সম্পর্ককে অধ্যাপক তান সারাজীবন ধরে বহন করে চলেছিলেন। তান ছিলেন সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধী ভারতের অকৃত্রিম বন্ধু।

১৯৬২ সালে আম্রকুঞ্জে বিশ্বভারতীর বার্ষিক সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিশিষ্ট মানুষজন ও আশ্রমিকদের সঙ্গে অনুষ্ঠানবেদীর সামনে প্রথম সারিতে বসেছিলেন তান য়ুন শান। বিশ্বভারতীর তদানীন্তন আচার্য ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু সমাবর্তনের মনোজ্ঞ ভাষণে নানা বিষয়ের মধ্যে বলেছিলেন যে, চীন ভারতকে আক্রমণ করেছে। 

এই কথা শোনামাত্র সামনে প্রায় ধ্যানস্থ বুদ্ধমূর্তির মতো বসে থাকা অধ্যাপক তানের দুই চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। এইরকম আবেগঘন মুহূর্তটিকে নেহেরু বিশেষভাবে লক্ষ্য করেন। বক্তৃতা শেষে পণ্ডিত নেহরু অনুষ্ঠানবেদী থেকে সরাসরি নেমে এসে তান য়ুন শানকে দু’হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরেন। নেহরু তাঁর ভাষণে চীন-ভারত সম্পর্ক স্থাপনে রবীন্দ্রনাথ ও তান-য়ুন-শানের কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।

১৯২৭ সালে কবির দ্বিতীয়বারের চীনযাত্রার সময়, রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তান-য়ুন শানের সাক্ষাৎ হয়। গুরুদেবের আমন্ত্রণে ১৯২৮ সালে সেপ্টেম্বর মাসের গোড়ার দিকে শান্তিনিকেতনে আসেন তিনি। যোগ দেন চীনাভাষার অধ্যাপক হিসেবে। সেই বছর থেকেই মাত্র পাঁচজন ছাত্র নিয়ে তিনি শান্তিনিকেতনে চীনাভাষার ক্লাস শুরু করেন। 

বিশ্বভারতীতে তিন বছর অধ্যাপনার পর, কবির আশীর্বাদ ও শুভকামনা নিয়ে অধ্যাপক তান ১৯৩১ সালে আবার চীনে ফিরে যান। ১৯৩৩ সালে চীনের নানকিনে ‘তান সাহেব’ প্রতিষ্ঠা করলেন ‘সিনো-ইন্ডিয়ান কালচারাল সোসাইটি’ বা ‘চীন-ভারত সংস্কৃতি সমিতি’। ভারতবর্ষে এই সমিতির সভাপতি হলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। এই সমিতির কর্মসূচি অনুযায়ী প্রধান ও প্রথম কাজ ছিল চীনভবন প্রতিষ্ঠার কর্মকাণ্ডকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে ত্বরান্বিত করা।

শান্তিনিকেতনে চীন ভবন প্রতিষ্ঠার জন্য চীন দেশ থেকে প্রায় যাবতীয় কাজ শেষ করে, সংগৃহীত সব অর্থ, লক্ষাধিক বহু দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থ নিয়ে ১৯৩৬ সালে তান-য়ুন-শান যখন শান্তিনিকেতনে ফিরলেন, তখন আশ্রমে ভরা বসন্তকাল। এরপর চীন ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হয়। ১৯৩৭ সালে ১৪ এপ্রিল নববর্ষের দিনে শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ আনুষ্ঠানিকভাবে চীনভবনের উদ্বোধন করেন। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ক্ষিতিমোহন সেন। সুদীর্ঘ ৫৫ বছর ভারতীয় আচার্যদের মতো অধ্যাপক তান শান্তিনিকেতনে বসবাস করে গিয়েছেন।

আশ্রমগুরু রবীন্দ্রনাথ চীন-ভারতের সাহিত্য-সংস্কৃতি-শিক্ষার সেতু বেঁধেছিলেন। আজকের চীন-ভারত অশান্তির আবহে ভারততীর্থের শ্রেষ্ঠ প্রবক্তা রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর বিশিষ্ট সহযোগী তান-য়ুন-শানের সশ্রদ্ধ ভূমিকার কথা প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen