সত্যেন বোস – বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চার প্রসারে অগ্রণী
স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় তিনি বিপ্লবীদের সমর্থন জুগিয়েছেন।

‘বোস আইনস্টাইন স্ট্যাটিসটিক্স’ নামটি হয়তো অনেকের জানা। ‘বোসন’ কণার নামও শুনেছেন কেউ। কিন্তু ‘বোসন’-এর সেই ‘বোস’-এর ব্যক্তি জীবন জানেন ক’জন? জন্মের ১২৬ বছর পরও যিনি বাঙালির অন্যতম সেরা এক আইকন।
সত্যেন্দ্রনাথের শিক্ষাজীবন শুরু নর্মাল স্কুলে। পরে বাড়ির কাছে নিউ ইন্ডিয়ান স্কুলে ভর্তি হন। শোনা যায়, সেই স্কুলে মেধাবী ছাত্র সত্যেন্দ্রনাথের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় কোনও উপযুক্ত সহপাঠী না থাকায় এন্ট্রান্স ক্লাসে সত্যেন্দ্রনাথকে হিন্দু স্কুলে ভর্তি করে দেন তাঁর বাবা। হিন্দু স্কুলে অঙ্ক শেখাতেন সে সময় কলকাতার নামকরা শিক্ষক উপেন্দ্রনাথ বক্সি। তাঁর খুব প্রিয় ছাত্র ছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ। তিনিই একবার অঙ্কে সত্যেন্দ্রনাথকে একশোতে একশো দশ দিয়েছিলেন। কারণ, সত্যেন্দ্রনাথ প্রশ্নপত্রে যতগুলো অঙ্ক ছিল সবগুলোরই উত্তর দিয়েছিলেন। এই গল্পটা অনেকেরই জানা। শুধু অঙ্ক নয়, সত্যেন্দ্রনাথ সব বিষয়েই ভালো ছিলেন। টেনিসন বা রবীন্দ্রনাথের কবিতা অনর্গল বলতে পারতেন। কালিদাসের মেঘদূত-ও তাঁর কণ্ঠস্থ ছিল।
স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় তিনি বিপ্লবীদের সমর্থন জুগিয়েছেন। অনুশীলন সমিতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ ছিল। স্বাধীনতা আন্দোলনের সশস্ত্র বিপ্লবীদের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগও রাখতেন তিনি। সংস্কৃত-সহ বেশ কিছু ভাষা তাঁর জানা ছিল। ফরাসি সাহিত্য ভালোবাসতেন। গৌতম বুদ্ধের দর্শনের প্রতি ছিল বিশেষ ঝোঁক। চমৎকার এস্রাজ বাজাতেন। ঢাকায় থাকাকালীন প্রতিভা বসু এবং বুদ্ধদেব বসুর পরিবারের সঙ্গে বিশেষ ঘনিষ্ঠতা ছিল তাঁর। যে পরিচিতি পরবর্তীকালেও ছিল।
সত্যেন্দ্রনাথের চাকরি জীবনেও রয়েছে নানা গল্প। শোনা যায়, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক পদ সত্যেনের জোটেনি। কারণ, আশুতোষের সঙ্গে তাঁর বনিবনা হচ্ছিল না। একবার আশুতোষের করা প্রশ্নপত্রে একটা অঙ্কের ভুল নিয়ে দু’জনের প্রবল তর্ক হয়। অতঃপর, তিনি নবপ্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যার রিডার হিসাবে যোগদান করেন। ঢাকা থেকে মেঘনাদকে চিঠিতে লিখলেন সত্যেন, ‘মাসখানেকের উপর তোমাদের দেশে এসেছি। এখানকার কাজ এখনও আরম্ভ হয়নি। তোমাদের ঢাকা কলেজে জিনিস অনেক ছিল, কিন্তু অযত্নে তাদের যে দুর্দশা হয়েছে তা বোধ হয় নিজেই জানো।’
প্রতিবেদনটি লিখেছেন ঋতপ্রভ বন্দ্যোপাধ্যায়।