এই মেলায় গেলে টাইম মেশিনে চেপে চলে যেতে পারেন ফেলে আসা শৈশবের জগতে

একটা ট্রেনের মতো দেখতে টাইম মেশিনে চেপে বাল্য আর কৈশোরের দুনিয়াটায় পা পড়েছে হঠাৎ। সেই মেলায় সকালে ঢুকলে ঘুরতে ঘুরতে বিকেল গড়িয়ে যায়।

January 28, 2023 | 3 min read
Published by: Drishti Bhongi
দক্ষিণ বিষ্ণুপুরে মেলা

সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেককেই দেখা যায় পুরনো দিনের স্মৃতি নিয়ে নানা রকম পোস্ট করতে। পুরনো সব জিনিস নিয়ে অনেকেই নস্টালজিয়ায় ভোগেন। পুরনোদিনের সাদাকালো টিভি, ইয়াসিকা ক্যামেরা, কলের গান, ঝর্ণা কলম ইত্যাদির ছবি হরদম পোস্ট করেন। এই সব ছোট বেলার কথা মনে করিয়ে দেওয়া জিনিসপত্র যদি কোথাও একসাথে দেখতে পাওয়া যায় তাহলে কেমন হয়?

দক্ষিণ বিষ্ণুপুরে মেলা

কোনও সকালে শিয়ালদহ স্টেশন থেকে দক্ষিণ শাখার লক্ষ্মীকান্তপুর বা নামখানা লোকালে উঠে মথুরাপুর রোড স্টেশন। নেমে খানিক হাঁটা। তারপর দক্ষিণ বিষ্ণুপুরের মেলার মাঠ। মেলায় ঢোকার পর মনে হবে ট্রেন নয় টাইম মেশিনে চড়ে চলে আসা হয়েছে বিষ্ণুপুরে। এখানকার স্থানীয়রা বলেন ভাঙা বা পুরনো মেলা। সেখানে দাদু-ঠাকুরদার মুখে শোনা গল্পের মতো ক্যামেরা, সাদাকালো টিভি, আবলুস বার্নিস করা কাঠের আসবাব, বই, সংবাদপত্র, ঘড়ি, বাদ্যযন্ত্র, লন্ঠন থেকে বোতাম টেপা ভিডিও গেমস, কী নেই! এখানে এলে মনে হবেই হবে, ছোটবেলার দুনিয়াটা এখানে থমকে। একটা ট্রেনের মতো দেখতে টাইম মেশিনে চেপে বাল্য আর কৈশোরের দুনিয়াটায় পা পড়েছে হঠাৎ। সেই মেলায় সকালে ঢুকলে ঘুরতে ঘুরতে বিকেল গড়িয়ে যায়।

সে এক সময় ছিল। তখন আড়াই ফুট লম্বা গ্র্যান্ড ফাদার ক্লকটি কাকভোরে ছ’বার ‘গং’ শব্দ তুলতো। ঘুম ভাঙত গোটা গ্রামের। সেই ঘড়িটি আছে। গ্যাসের বাতি জ্বলত কলকাতার রাস্তায়। তার হালকা আলোয় আলোকিত ধর্মতলা। সেরকম একটি বাতিও আছে। পাথরের নটরাজ। কে জানে সেটির বয়স কত, সেটিও আছে। আর আছে খবরের কাগজ।

জনশ্রুতি আছে দক্ষিণ বিষ্ণুপুরের উপর দিয়ে বয়ে যেত গঙ্গা। এখনও সেখানে ছোট ছোট ঘাট। এককালে চৈতন্যদেব এই নদীপথে ওড়িশা গিয়েছিলেন। সেবার এখানেই পৌষ সংক্রান্তির রাত কাটিয়েছিলেন তিনি। মেলা শুরু তখন থেকেই। আবার কেউ বলেন, এককালে গঙ্গাসাগর যাত্রীরা কোনও কারণে এখানে আটকে পড়েছিলেন। তারা সেই গঙ্গাতেই মকর সংক্রান্তির পূণ্যস্নান সারেন। তখন থেকে শুরু হয় মেলা। এখনও দক্ষিণ বিষ্ণুপুর মহাশ্মশানের ওই ঘাটে পূণ্যস্নান সারেন অনেকে। সবাই বলেন, এই মেলা ফুলেফেঁপে উঠেছে গত ২০০ বছর ধরে। ক্রমে বাড়ছে জনপ্রিয়তা। এই মেলা পায়ে হেঁটে একদিনে ঘোরা অসম্ভব। আড়ে বহরে বিশাল মেলাটি বসে ১০০ একর জায়গা জুড়ে। ১৫ দিন মেলা চালানোর অনুমতি দেয় প্রশাসন। তবে মেলা চলে প্রায় একমাস ধরে। প্রায় তিনহাজার দোকান এবার বসেছে। এই মেলায় গেরস্থালির জিনিসপত্র থেকে শুরু করে ঘর সাজানোর প্রায় সবকিছু মেলে। চাহিদা রয়েছে পুরনো জুতো, সাইকেল, লম্বা টর্চ, পোশাক, খাট-চৌকি-পালঙ্কের। পাওয়া যায় পুরনো বাইক। এখানে যাঁরা স্টল দেন তাঁরা সারাবছর ধরে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে পুরনো মালপত্র সংগ্রহ করেন। এঁদের মধ্যে কেউ কেউ জিনিস কিনতে যান রাজ্যের বাইরেও।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen