কোচবিহারের শীতলপাটির জন্য জিআই তকমা পেতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চান, বাংলার শিল্প-সংস্কৃতির সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকা শীতলপাটিকে বিশ্বের দরবারে নিয়ে যেতে

October 22, 2021 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

বাংলার রসগোল্লা আগেই জিআই স্বীকৃতি পেয়েছে। এবার সেই তালিকায় শীতলপাটির নাম তুলতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য। উৎসব পর্ব মিটলেই জিআই স্বীকৃতির জন্য আবেদন জানানো হবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চান, বাংলার শিল্প-সংস্কৃতির সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকা শীতলপাটিকে বিশ্বের দরবারে নিয়ে যেতে। এই স্বীকৃতি পেলে বাংলার মুকুটে আরও একটি পালক যুক্ত হবে, তা বলাই বাহুল্য। মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই এই স্বীকৃতি আদায়ের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছেন। ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন, শীতলপাটির সঙ্গে বাংলার মাটির গন্ধ মিশে রয়েছে। ফলে এই হস্তশিল্পকে শুধু বাঁচিয়ে রাখাই নয়, একে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

নামেই পরিচয় শীতলপাটির। এই পাটিতে শুয়ে থাকলে শীতল অনুভূতি মেলে, এই বিশ্বাস বদ্ধমূল হয়েছে সমাজে। শুধু মেঝেতে নয়, গরমকালে বিছানার উপরেও এই পাটির ব্যবহার দেখতে পাওয়া যায়। পূর্ব বাংলায় বিশেষ করে বাংলাদেশে শীতলপাটির ব্যবহার ব্যাপক। এ বঙ্গে সুনাম কেড়েছে কোচবিহারের শীতলপাটি। বাজারে সিন্থেটিক মাদুর এলেও, প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি শীতলপাটির কদর কিন্তু বিন্দুমাত্র কমেনি। এই বাংলার হস্তশিল্পের গরিমা অক্ষুন্ন রেখে তার পথ আরও প্রশস্ত করতে চাইছে রাজ্য সরকার। ‘জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন’ বা ‘জিআই’ তকমা আদায়ের জন্য প্রশাসনিক কাজকর্ম শুরু হয়েছে।

বাংলায় শীতলপাটির আঁতুড়ঘর হচ্ছে কোচবিহার। কয়েক হাজার শিল্পী এই কাজে জড়িত। এই শীতলপাটিই ছড়িয়ে পড়ে বাংলার সর্বত্র। কীভাবে এই শিল্পের প্রসার ঘটানো যায়, তা নিয়ে ছোট, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পদপ্তরের একাধিক ভাবনা রয়েছে। আর তাতেই উঠে এসেছে ‘জিআই’ স্বীকৃতির প্রসঙ্গ। দপ্তরের অধীন খাদি গ্রামীণ শিল্প পর্ষদের সিইও মৃত্যুঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, শীতলপাটির জিআই স্বীকৃতির জন্য আমরা আবেদন করতে চলেছি। বাংলার নিজস্ব প্রোডাক্ট শীতলপাটি। এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। জিআই স্বীকৃতি পওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে। অধ্যাপক দিব্যেন্দুবিকাশ দত্ত যাবতীয় নথি সংগ্রহের কাজ করছেন। ইতিমধ্যেই তিনি কোচবিহার ঘুরে এসেছেন। কোচবিহারের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে একটি রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা হয়েছে তাঁর। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ৫০ হাজার কারিগর শীতলপাটি তৈরির কাজে যুক্ত। বছরে কয়েক কোটি টাকার রপ্তানি বাণিজ্য হয়। দিব্যেন্দুবাবু জানিয়েছেন, বাংলার মাটির সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য লুকিয়ে রয়েছে শীতলপাটির মধ্যে। মাদুর ছাড়াও ব্যাগ, বসার আসন সহ একাধিক জিনিস তৈরি হয়। প্রাকৃতিক উপাদান নির্ভর এই শীতলপাটিকে বিশ্ব আঙ্গিনায় তুলে ধরতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

দেশ ভাগের আগে শীতলপাটি বাংলার নিজস্ব প্রোডাক্ট ছিল। কোচবিহারের পরিবেশের সঙ্গে তা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে। জিআই স্বীকৃতি পেলে শীতলপাটির ব্যবসা আরও বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে। বাংলার বিভিন্ন গ্রামের শিল্পীদের হাতে তৈরি জিনিস ছড়িয়ে পড়ছে রাজ্যের সর্বত্র। শীতলপাটিকেও সেই আঙিনায় তুলে ধরার প্রয়াস। এর আগে ২০১৭ সালে ওড়িশাকে হারিয়ে বাংলার রসগোল্লা পেয়েছে জিআই ট্যাগ। শীতলপাটিও জিআই স্বীকৃতি পাবে, আশা আধিকারিকদের। বাংলার মসলিনের জন্যও জিআই স্বীকৃতির আবেদন করা হয়েছে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen