কেন্দ্রীয় ফরমান, টাকার অপচয় করে মোদীকে ৭৫ লক্ষ চিঠি লিখতে হবে পড়ুয়াদের

কেন্দ্রের এই ফরমানে প্রশ্ন উঠছে, জনগণের করের টাকা এভাবে নষ্ট করার অর্থ কী? একটি পোস্টকার্ডের দাম ৫০ পয়সা। কিন্তু তা ছাপাতে ও ডাক মারফত নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছে দিতে সরকারের খরচ হয় অনেক বেশি।

December 3, 2021 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

পড়ুয়াদের দিয়ে ফের ‘মোদী পুজো’র আয়োজন করল কেন্দ্রীয় সরকার। স্কুল পড়ুয়ারা এবার মোদীকে চিঠি লিখবে। আর সেই চিঠি লেখানোর ভার নেবে যোগাযোগ মন্ত্রক। এই গোটা প্রক্রিয়ায় সাহায্য করতে ‘বাধ্য থাকবে’ স্কুলগুলি। মোট ৭৫ লক্ষ পোস্টকার্ডে চিঠি লিখতে হবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নামে। কেন্দ্রের এই ফরমানে প্রশ্ন উঠছে, জনগণের করের টাকা এভাবে নষ্ট করার অর্থ কী? একটি পোস্টকার্ডের দাম ৫০ পয়সা। কিন্তু তা ছাপাতে ও ডাক মারফত নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছে দিতে সরকারের খরচ হয় অনেক বেশি। সেই ক্ষতি সামালাতে পোস্টকার্ড ছাপানো কমিয়ে দিয়েছে ডাক বিভাগ। কর্তারা বলছেন, ফের সেই খরচের ভার যোগাযোগ মন্ত্রকের ঘাড়ে চাপাতে উঠেপড়ে লেগেছেন মোদী।

এবার উপলক্ষ স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি। চতুর্থ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে চিঠি লিখতে পারবে। দু’টি বিষয় স্থির হয়েছে। প্রথমটি হল, ‘২০৪৭ সালে আমি দেশকে কোথায় দেখতে চাই’। আর অন্যটি, ‘বিস্মৃতির অতলে থাকা স্বাধীনতা সংগ্রামী’। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রতিটি জেলায় মহকুমা স্তরে নোডাল অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। অনলাইন ক্লাস, স্কুলের ওয়েবসাইট ও ক্যাম্পাসে এ বিষয়ে লাগাতার প্রচার চালানো হচ্ছে। ছাত্রছাত্রীদের বলা হচ্ছে, ডাকঘর থেকে পোস্টকার্ড না কিনলেও চলবে। স্কুলেই ব্যবস্থা থাকছে। আর সেই দায়িত্ব নিয়েছেন নোডাল অফিসাররাই। সেখান থেকে পোস্টকার্ড কিনে পড়ুয়ারা প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখবে। প্রতিটি স্কুল ১০টি করে পোস্টকার্ড বাছাই করবে। জানা গিয়েছে, দেশ থেকে সেরা ২০ জন পড়ুয়াকে বেছে নেওয়া হবে। তারা সুযোগ পাবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে করমর্দনের। এক হাজার পোস্টকার্ড দিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে। পড়ুয়াদের চিঠি লেখায় উৎসাহ দিতে বরাবরই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে ডাক বিভাগ। কিন্তু তার থেকে এই উদ্যোগ সম্পূর্ণ আলাদা বলেই মনে করছেন ডাক বিভাগের কর্তারা। এখানে প্রধানমন্ত্রীর স্তুতি গাইবার প্রচ্ছন্ন সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগ আনছেন অনেকেই। বেঁধে দেওয়া হচ্ছে টার্গেট। তাঁরা বলছেন, আসলে পোস্টকার্ডের সংখ্যা ৭৫ লক্ষ নয়, তার চেয়ে অনেক গুণ বেশি। কারণ, স্কুলগুলি যেহেতু ১০টি করে সেরা পোস্টকার্ড বাছাই করবে, তাই আরও বেশি সংখ্যক পড়ুয়াকে চিঠি লিখতে হবে। এই উদ্যোগকে নেহাতই অপচয় হিসেবে দেখছেন ডাক-কর্তাদের একাংশ।

মোদীর নামে জয়ধ্বনি দিয়ে পোস্টকার্ড পাঠানোর আয়োজন অবশ্য নতুন নয়। প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনে তাঁকে পাঁচ কোটি পোস্টকার্ড পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল ডাক বিভাগের তরফে। সেই উদ্যোগে খামতি থাকায় এ রাজ্যেই পোস্ট মাস্টারদের সাসপেন্ড হতে হয়। ফের জনগণের টাকায় পোস্টকার্ড পাঠানোর উদ্যোগ কিন্তু ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen