আখড়ার একমাত্র মেয়ে থেকে এখন বিশ্বজয়ী তপস্যা গাহলোত
শৈশবে যখন বাকি আর সাধারণ বাচ্চারা খেলাধুলায় মগ্ন, তখন তপস্যা ছিল গ্রামের আখড়ায় একমাত্র মেয়ে।

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১২:৪৮: বুলগেরিয়ার সামোকভে অনুষ্ঠিত জুনিয়র বিশ্ব কুস্তি প্রতিযোগিতায়(Wrestling Junior World Championships in Samokov, Bulgaria) সোনার পদক জিতে দেশকে গর্বিত করেছেন ১৯ বছরের তরুণী তপস্যা গাহলোত(Tapasya Gahlawat)। কিন্তু তার ঘরে এখনো আনন্দের বদলে শোকের আবহ। মাত্র এক সপ্তাহ আগে হঠাৎ হৃদরোগে চলে গিয়েছেন তার প্রিয় দাদু। দাদুর শেষ ইচ্ছেই যেন তপস্যাকে নতুন শক্তি জুগিয়েছে—তিনি নাতনিকে বলেছিলেন, “বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়ে বাড়ি ফিরতে।”
দিল্লির জাতীয় শিবিরে অনুশীলনের মাঝেই দাদুর মৃত্যুসংবাদ পান তপস্যা। সেই খবর শুনেই দ্বিধায় পড়েছিলেন, বাড়ি ফিরবেন নাকি খেলার প্রস্তুতি চালিয়ে যাবেন। বাবা প্রমেশ গাহলওত তখন মনে করিয়ে দেন দাদুর সেই শেষ কথা। আর সেই প্রেরণাই তাকে ইতিহাস গড়ার পথে এগিয়ে দেয়।
জাপানের অপরাজিত বিশ্বচ্যাম্পিয়ন সাওয়াকা উচিদার বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে শেষ মুহূর্তে দুর্দান্ত জয় এনে দেন তিনি। মাত্র ৪-৩ ব্যবধানে নাটকীয় জয়। ফাইনালে লিথুয়ানিয়ার ফেলিসিতাস ডোমাজেভাকে ৫-২ হারিয়ে নিশ্চিত করেন ভারতের প্রথম সোনা।
তবে তপস্যার যাত্রা সহজ ছিল না। জন্মের সময় পরিবারে অনেকে ‘মেয়ে জন্মেছে’ বলে হতাশা প্রকাশ করেছিলেন। বাবা প্রমেশও প্রথমে দুঃখ পেয়েছিলেন,তিনি চেয়েছিলেন ছেলে হবে, যাকে তিনি কুস্তিগীর বানাবেন। কিন্তু সবার কটাক্ষের জবাব দিতে তিনি মেয়েকেই বানালেন কুস্তিগীর। নাম রাখলেন তপস্যা, যার মানেই হল সাধনা।
শৈশবে যখন বাকি আর সাধারণ বাচ্চারা খেলাধুলায় মগ্ন, তখন তপস্যা ছিল গ্রামের আখড়ায় একমাত্র মেয়ে। শুরুতে নিজেও কুস্তি করতে চাইত না; পড়াশোনায় ভালো ছিল, ডাক্তার হতে চাইতেন। কিন্তু বাবার একনিষ্ঠ প্রচেষ্টা ও অবিচল বিশ্বাস ধীরে ধীরে তাকে কুস্তির পথে টেনে আনে। দশ বছর বয়সে রাজ্য স্কুল চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার পর পরিবারের সবার সমর্থন মিলতে শুরু করে। দাদু, যিনি একসময় বিরোধিতা করেছিলেন, পরে হয়ে ওঠেন তাঁর সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা।
২০১৯ সাল থেকে সোনেপতের যুধবীর আখড়ায় কুলদীপ রানা ও সমীক্ষা খারবের তত্ত্বাবধানে কঠোর অনুশীলন শুরু হয় তাঁর। বাবা প্রমেশ পেশায় কৃষক হলেও সব সময় নিজের মেয়ের জন্য সব রকম সুবিধা তৈরি করার চেষ্টা করছেন। এজন্য বাড়ি বদলেছেন, বদলে আখড়ার পাশে বাড়ি গড়েছেন।
ফলস্বরূপ গত কয়েক বছরে একের পর এক সাফল্য এসেছে তাঁর ঘরে। এশিয়ান আন্ডার-২০ চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা, ন্যাশনাল গেমস ও জাতীয় প্রতিযোগিতায় সোনা জিতে নিজের কৃতিত্ব প্রমাণ করেছে তপস্যা। এবার জুনিয়র বিশ্বজয়ের পর সামনে আরও বড় চ্যালেঞ্জ—সিনিয়র বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে দেশের হয়ে লড়াই।
প্রমেশের কণ্ঠে ভরসা ও স্বপ্ন—
“অভি আকে অউর জানা হ্যায়, অউর মেহনত করনি হ্যায়।”