করোনা রুখতে রাজ্যগুলির বরাদ্দ কমিয়ে এনেছে কেন্দ্র

করোনা সংক্রমণে জর্জরিত রাজ্যগুলিকে যে আর্থিক অনুদান দিচ্ছিল কেন্দ্র, তাও এখন তলানিতে এসে ঠেকেছে। ফলে আরও গভীর হচ্ছে সঙ্কট।

October 30, 2020 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

দেশের অর্থনীতির কোমর ভেঙেছে করোনা। সাধারণ মানুষের রোজগার তলানিতে। অর্থনীতির বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা নিতে পারে কেন্দ্রীয় সরকার। তারা যত বেশি টাকা খরচ করবে, অর্থনীতি তত দ্রুত চাঙ্গা হবে। কেন্দ্র উন্নয়ন খাতে খরচ বাড়ালে, তা সরাসরি বা ঘুরপথে পৌঁছবে সাধারণ মানুষের হাতে। মানুষ জিনিস কিনলে বাড়বে পণ্যের চাহিদা। দেশের কলকারখানায় উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। গতি আসবে কর্মসংস্থানে। নরেন্দ্র মোদি সরকার গোড়া থেকেই বলে আসছে, দেশ বাঁচাতে তারা খরচের বহর বাড়াবে। সেই প্রতিশ্রুতির তুবড়ি এখনও জ্বলছে। অথচ হিসেব বলছে, গত বছরের তুলনায় এবার সরকারি খরচ কমিয়ে ফেলেছে কেন্দ্র। সবচেয়ে বেশি কোপ পড়েছে শহুরে গরিব মানুষের উন্নয়নের ওপর। এখানেই শেষ নয়। করোনা সংক্রমণে জর্জরিত রাজ্যগুলিকে যে আর্থিক অনুদান দিচ্ছিল কেন্দ্র, তাও এখন তলানিতে এসে ঠেকেছে। ফলে আরও গভীর হচ্ছে সঙ্কট।

করোনা সংক্রমণ রোখার ক্ষেত্রে কেন্দ্রের বরাদ্দ কমে যাওয়ায় তাজ্জব বিশেষজ্ঞ মহল। ‘সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমি’র হিসেব বলছে, গত জুলাই মাসে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে ২১ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা দিয়েছিল। আগস্ট মাসে তা নেমে আসে ৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকায়। বরাদ্দ কমানোর এই হিসেব দেখলে মনে হতে পারে করোনা বোধহয় দেশ থেকে বিদায় নিয়েছে। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি কী, তা জানেন সকলেই। সংক্রমণের গোড়ার দিকে করোনা মোকাবিলায় রাজ্যগুলিকে আর্থিক প্যাকেজ দিয়েছিল কেন্দ্র। সেখানে অন্যান্য অনেক রাজ্যের তুলনায় অনেকটাই কম বরাদ্দ জুটেছিল বাংলার ভাগ্যে। সংক্রমণের হার বেশি থাকা সত্ত্বেও। এই মারণ রোগ নিয়ে কেন্দ্রের তরফে রাজনীতির গন্ধ পেয়েছিলেন অনেকে। কিন্তু এবার সার্বিক বরাদ্দই এতটা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, চমকে গিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

‘সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমি’র পরিসংখ্যানে উন্নয়ন খাতে বড় কোপের ছবিটা বেশ স্পষ্ট। দেখা যাচ্ছে, গত জুলাইতে মূলধনী খাতে কেন্দ্র খরচ করেছে মোট ২৩ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। যা ২০১৯ সালের এই সময়ের তুলনায় ৪৭.১ শতাংশ কম। চলতি বছরের আগস্ট মাসে এই খাতে খরচ আরও নেমেছে। যার পরিমাণ ২২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। গত বছর আগস্টের নিরিখে প্রায় ২১ শতাংশ কম। এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত উন্নয়ন খাতে ব্যয় হয়েছে মোট ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১.৩ শতাংশ কম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলতি অর্থবর্ষের গোড়ায় কিছু বেশি খরচ করেছিল কেন্দ্র। কিন্তু ক্রমশ তাতে ভাটা এসেছে।

শহরাঞ্চলের গরিব মানুষের উন্নয়নে বরাদ্দ কমেছে সর্বাধিক। গত এপ্রিল থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত এই খাতে কেন্দ্রীয় সরকার খরচ করেছে সাত হাজার কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে হিসেবে প্রায় ২৭ শতাংশ কম। একই সময়ে রেলের বিভিন্ন প্রকল্পেও প্রায় পাঁচ শতাংশ খরচ কমিয়েছে মোদি সরকার। তবে জোর দেওয়া হয়েছে রাস্তা তৈরিতে। এই ক্ষেত্রে ব্যয় বৃদ্ধি প্রায় ৯০ শতাংশ। লকডাউনের পর দেশকে আর্থিকভাবে চাঙ্গা করতে একটি উপায় বাতলেছিল কেন্দ্র। ‘আত্মনির্ভর ভারত’। সেখানেও সরকারি খরচ নামমাত্র। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০ লক্ষ কোটি টাকার যে আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন, তার সিংহভাগই ঋণ। তাতে বিরাট লাভ হয়েছে বলে মনে করছে না সাধারণ কোনও মহল। এই সঙ্কটকালে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর গুরুদায়িত্ব থেকে বহু দূরে সরে গিয়েছে মোদি সরকার। প্রমাণ মিলেছে প্রতি পদে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen