বিশ্বাস নয় যুক্তি, Blood Moon’-এর আলোয় ভাঙল শহরের কুসংস্কারের অন্ধকার
রবিবার রাতেই বিরল মহাজাগতিক দৃশ্যের সাক্ষী থাকল শহর।

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ০৮:০০: রবিবার রাতেই বিরল মহাজাগতিক দৃশ্যের সাক্ষী থাকল শহর। আকাশে ভেসে উঠল পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ, গাঢ় লাল আভায় মোড়া চাঁদ-যাকে বলা হয় ‘ব্লাড মুন’। আর এই দৃশ্য ঘিরেই যুক্তির আলোয় কুসংস্কার ভাঙার উদ্যোগ নিল পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ।
শহরের নানা প্রান্তে আয়োজন করা হয়েছিল বিশেষ চন্দ্রদর্শন কর্মসূচি। বাঘাযতীনের রায়পুর গার্লস হাইস্কুল, সিথির কাঠগোলা মাঠ, কসবা, তিলজলা, পার্ক সার্কাস, ঢাকুরিয়া, বেহালা-সহ একাধিক জায়গায় বসানো হয়েছিল আইপিসে। শত শত মানুষ, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই ছাত্র-ছাত্রী, চাঁদে চোখ রাখেন।
চন্দ্রগ্রহণ মানেই কুসংস্কার- খাবার না খাওয়া, জল না ছোঁয়া, গ্রহণ শেষে স্নান- এই পুরনো বিশ্বাস ভাঙতেই আয়োজন ছিল চা, বিস্কুট, মুড়ি-মাখা, এমনকি রাতের খাবারেরও। বিজ্ঞান মঞ্চ স্পষ্ট জানায়, চন্দ্রগ্রহণ কোনও অলৌকিক ঘটনা নয়, এটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া। তাই খাবারে বিষক্রিয়া হয় না, রান্না ফেলে দেওয়ার দরকার নেই, গঙ্গায় স্নানেও মুক্তি মেলে না।
পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দীর্ঘদিন ধরেই তারা বিজ্ঞানমনস্কতা ও যুক্তিবাদ প্রসারে কাজ করছে। এদিনও লিফলেট ও প্রচারের মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হয়েছিল, চন্দ্রগ্রহণ প্রকৃতির নিয়ম, কোনও অলৌকিকতা নয়, জানাই আমাদের মুক্তির পথ।
বিরল জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক দৃশ্য পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ শুরু হয় রাত ৮টা ৫৮ মিনিটে, চলে টানা ৮২ মিনিট, শেষ হয় রাত ১২টা ২২ মিনিটে। আকাশে গাঢ় লাল চাঁদের দৃশ্য মুগ্ধ করে সকলকে।
ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্সের অধিকর্তা সন্দীপকুমার চক্রবর্তী জানান, এত দীর্ঘ সময় ধরে চাঁদের লাল রূপ দেখা বিরল ঘটনা। চাঁদের গায়ে প্রায়ই উল্কা আছড়ে পড়ে, কিন্তু সাধারণ সময়ে চাঁদের উজ্জ্বলতার কারণে তা চোখে ধরা যায় না। তবে পূর্ণগ্রাসের সময় সেই দৃশ্য ধরা পড়লে জ্যোতির্বিজ্ঞানের গবেষণায় এক নতুন দিগন্ত খুলে যেতে পারে।
কলকাতার আকাশে ব্লাড মুনের সেই দৃশ্য শুধু মহাজাগতিক সৌন্দর্যই নয়, কুসংস্কার ভাঙার প্রতীক হয়ে রইল। ছাত্রছাত্রীদের ভিড়ই জানিয়ে দিল-ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বিশ্বাস নয়, যুক্তির পথেই হাঁটতে চাইছে।