যিনি বদলেছিলেন ধ্বনির সংজ্ঞা: জন্মবার্ষিকীতে অমর গোপাল ‘বোস’

November 2, 2025 | 2 min read
Published by: Raj

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৩.৪০: ১৯২০র দশকে তরুণ বাঙালি বিপ্লবী ননী গোপাল বসু স্বদেশের স্বাধীনতার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তাঁর দেশপ্রেম আর সক্রিয় ভূমিকার কারণে ব্রিটিশ শাসকের চোখে তিনি হয়ে ওঠেন বিপজ্জনক। গ্রেফতার, নির্যাতন ও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে পড়ে শেষ পর্যন্ত তিনি দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। সামান্য সঞ্চয় আর অদম্য সাহস নিয়ে তিনি পাড়ি জমান আমেরিকায়, নতুন জীবনের খোঁজে।

ফিলাডেলফিয়ায় গিয়ে শুরু হয় এক সংগ্রামী অধ্যায়। সেখানে তিনি বিয়ে করেন শিক্ষিকা শার্লট মেকলিনকে এবং শুরু করেন সাদামাটা এক সংসার। এই দম্পতির সন্তান অমর বসুর জন্ম হয় ১৯২৯ সালে, ২রা অক্টোবর। মন্দার কঠিন সময়ে বেড়ে ওঠা অমর ছোটবেলাতেই দেখেছিলেন তাঁর বাবা-মায়ের প্রাত্যহিক লড়াই। পরিবারের আর্থিক সংকট মেটাতে কৈশোরেই তিনি বাড়ির বেসমেন্টে বসে রেডিও মেরামতির কাজ শুরু করেন। মাত্র তেরো বছর বয়সে গড়ে তোলেন ছোট্ট এক ব্যবসা, যেখানে সহপাঠীদের নিয়ে ইলেকট্রনিক যন্ত্র মেরামত করে উপার্জন শুরু করেন।

অ্যাবিংটন স্কুল থেকে পড়াশোনা শেষ করে অমর ভর্তি হন ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজিতে। সেখান থেকে তিনি বৈদ্যুতিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং অবশেষে ১৯৫৬ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। গবেষণার বিষয় ছিল ননলিনিয়ার সিস্টেমস্, তবে সেই সময় থেকেই তিনি শব্দবিজ্ঞান ও ধ্বনিবিজ্ঞানের প্রতি গভীর আগ্রহী হয়ে ওঠেন। পরে এমআইটির অধ্যাপক হিসেবে তিনি প্রায় পঁয়তাল্লিশ বছর কাজ করেন এবং গবেষণার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠা করেন নিজের সংস্থা। বিশ্ববিখ্যাত বোস কর্পোরেশন।

ডক্টরেট শেষ করার পর তিনি নিজেকে উপহার দেন এক দামি সাউন্ড সিস্টেম, কিন্তু সেটির শব্দ তাঁকে ভীষণ হতাশ করে। তিনি লক্ষ্য করেন, যন্ত্রটি প্রযুক্তিগতভাবে নিখুঁত হলেও তার সুরে প্রাণ নেই। এর থেকেই জন্ম নেয় তাঁর অনুসন্ধান, কেন নিখুঁত ইঞ্জিনিয়ারিংও ভালো শ্রবণ অভিজ্ঞতা দিতে ব্যর্থ হয়? সেই প্রশ্নই ১৯৬৪ সালে তাঁকে বোস কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠায় অনুপ্রাণিত করে।

১৯৬৮ সালে সংস্থার ৯০১ মডেলের স্পিকার বিশ্ববাজারে আলোড়ন তোলে, কারণ সেটি ছিল সম্পূর্ণ নতুন ধারণার ফল। পরে ১৯৭৮ সালে বিমানে ভ্রমণের সময় অমর বোসের মনে আসে শব্দনিরোধক বা নয়েজ ক্যান্সেলিং হেডফোনের ভাবনা। সেই উদ্ভাবনই পরবর্তীতে বিপ্লব ঘটায় আধুনিক অডিও প্রযুক্তিতে।

অমর বসু জীবদ্দশায় তাঁর প্রতিষ্ঠানকে কখনও শেয়ারবাজারে আসতে দেননি। ২০১১ সালে তিনি সংস্থার বেশিরভাগ শেয়ার দান করেন এমআইটিকে, যাতে তার লভ্যাংশ শিক্ষা ও গবেষণায় কাজে লাগে।

২০১৩ সালের ১২ই জুলাই তিনি প্রয়াত হন, বয়স হয়েছিল তিরাশি। তবুও তাঁর উদ্ভাবনী চিন্তা আজও অনুপ্রেরণা দেয় বিশ্বের সাউন্ড প্রযুক্তিকে। বোস নামটি এখনও গুণমান, নিষ্ঠা ও কৌতূহলের প্রতীক হয়ে জ্বলজ্বল করছে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ফলো করুন :

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen