টানা ১০ কিঃমিঃ হেঁটে হাঙ্গেরি হয়ে দেশে ফিরল হাওড়ার যুবক

রোহন ও তাঁর বন্ধুরা চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নে ইউক্রেন গিয়েছিলেন। মাত্র তিনমাস বাকি ছিল ফাইনাল পরীক্ষার। আপাতত ডাক্তার হওয়ার আশা বিশ বাঁও জলে। রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ শুরুর পর প্রাণ বাঁচিয়ে দেশে যে ফিরতে পেরেছেন তার জন্য নিজের কপালকে ধন্যবাদ দিচ্ছেন রোহন।

March 6, 2022 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi
সংগৃহীত ছবি

কারফিউ শেষমেশ উঠলে ২৮ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে আটটায় হোস্টেলের বাঙ্কার ছেড়ে বাইরে পা দেন রোহন ও তার বন্ধুরা। ভারতীয় দূতাবাসের কোনওরকম সাহায্য পাননি। অসহায় অবস্থায় প্রবল ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় নামেন। গাদাগাদি করে একটানা ন’ঘণ্টার ট্রেন জার্নি। কোনওরকমে ‘লিভ’ স্টেশনে পৌঁছন রোহনরা। খাওয়া জোটেনি সেভাবে। অন্যদিকে প্রচণ্ড ঠান্ডা। একপ্রকার ধুঁকতে ধুঁকতে এক রাত কাটাতে হয়েছে খোলা আকাশের তলায়। তারপর একটি বাসে চেপে হাঙ্গেরির সীমান্তবর্তি স্টেশন ‘চপ’ এ নামা। সেখান থেকে দশ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে হাঙ্গেরির সীমান্ত। প্রাণ হাতে নিয়ে এতটা পথ পেরনোর পর অবশেষে যোগাযোগ করতে পারেন ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে। ততক্ষণে অবশ্য জীবনশক্তি প্রায় নিঃশেষ। সীমান্ত পেরিয়ে হাঙ্গেরি ঢুকতে অবশ্য সাহায্য করে ভারতীয় দূতাবাস। তারপর বাসে বুদাপেস্ট এয়ারপোর্ট। সেখান থেকে বিমান ধরে শুক্রবার রাতে কলকাতা বিমানবন্দর। দেশে ফেরার পর হাওড়া জেলা প্রশাসন গাড়ি করে বাড়িতে পৌঁছে দেয় রোহনকে।

রোহন ও তাঁর বন্ধুরা চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নে ইউক্রেন গিয়েছিলেন। মাত্র তিনমাস বাকি ছিল ফাইনাল পরীক্ষার। আপাতত ডাক্তার হওয়ার আশা বিশ বাঁও জলে। রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ শুরুর পর প্রাণ বাঁচিয়ে দেশে যে ফিরতে পেরেছেন তার জন্য নিজের কপালকে ধন্যবাদ দিচ্ছেন রোহন।

ইউক্রেনের কিভ মেডিকেল ইউনিভার্সিটির ষষ্ঠ বর্ষের ছাত্র রোহন আজাদ লস্কর (২৬)। শুক্রবার গভীর রাতে বাড়ি ফিরেও একরাশ দুশ্চিন্তা কুরে কুরে খাচ্ছে তাঁকে। এরপর কী হবে? কঠিন পরিশ্রম করে পড়াশুনার পরও মেডিকেল ডিগ্রি কি অধরাই থেকে যাবে? নরেন্দ্র মোদী সরকার কী তাঁদের মতো ছাত্রাছাত্রীদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে ইউনিভার্সিটির সঙ্গে আলোচনায় উদ্যোগী হবে। নাকি দেশে ফেরানোর বিষয়ে যে অমানবিক মনোভাব দেখিয়েছে কেন্দ্র, সেরকম নিষ্ঠুর মনোভাবই বজায় রাখবে মোদী সরকার?

ডোমজুড়ের নতিবপুরের মেধাবী ছাত্র রোহন আজাদ লস্কর(২৬) বছর ছয়েক আগে ডাক্তারি পড়তে ভর্তি হন কিভ মেডিকেল ইউনিভার্সিটিতে। ২৪ ফেব্রুয়ারির পর ইউক্রেনের পরিস্থিতি বদলে যায়। ঘনঘন সাইরেন এবং বোমার শব্দে কিভের মাটি কেঁপে ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারতীয় ছাত্ররা হোস্টেলের বাংকারে কাটায় রাতের পর রাত। ইউক্রেন সেনার সতর্কবার্তা উপেক্ষা করে বাইরে বেরনোর কোন উপায় ছিল না। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে ফেরার পরেও রোহনের চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ। প্রাণ বাঁচিয়ে যে বাড়ি ফিরতে পেরেছেন এটাই অনেক। বাড়ির ছেলে ঘরে ফিরে আসায় হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন। রোহনের আক্ষেপ, মেডিকেল কোর্স সম্পূর্ণ হলো না। তাঁর মতো ইউক্রেনে ডাক্তারি পড়ুয়ারা চাইছেন, ওই দেশের ইউনিভার্সিটির সঙ্গে আলোচনায় বসে সমাধানসূত্র খুঁজুক কেন্দ্রীয় সরকার। পরীক্ষা দেওয়ার বিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হোক। তাহলে ভবিষ্যত সুরক্ষিত থাকবে মেধাবী পড়ুয়াদের।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen