ই-কমার্স নজরদারিতে নতুন আইন প্রণয়নের পথে কেন্দ্র

পাশাপাশি গত বছরই ই-কমার্স ক্ষেত্রে সরকারের নয়া বৈদেশিক বিনিয়োগ নীতি চালু করেছিল কেন্দ্র

July 7, 2020 | 3 min read
Published by: Drishti Bhongi

কেন্দ্রের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পে সাড়া দিয়ে আগামী দিনের ডিজিটাল ইন্ডিয়ায় দেশের সংস্থাগুলিকে এগিয়ে আসার ডাক দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু ১৩৮ কোটির দেশে যেখানে প্রতিদিন গড়ে ৫০ কোটির বেশি মানুষ ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের নিয়মিত ব্যবহারকারী, যেখানে দেশের সর্বক্ষেত্রে ক্রমশ বাড়ছে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার, সেখানে এতদিন নির্বিচারে তাদের ‘ট্যাঁকের জোর’ খাটিয়ে দাদাগিরি করে গিয়েছে বিদেশি বহুজাতিক সংস্থাগুলি। প্রতিপক্ষে থাকা অসহায় ভারতীয় স্টার্ট-আপগুলির পক্ষে কোনও ভাবেই তাদের সঙ্গে পাল্লা টানা সম্ভব না হওয়ায়, এতদিন কেন্দ্র সরকারের কাছে কাতর আবেদন জানানো ছাড়া কিছু করতে পারেনি দেশীয় সংস্থাগুলি।

তবে সংবাদসংস্থা ব্লুমবার্গের হাতে কেন্দ্রের নয়া ই-কমার্স নীতির যে ১৫ পাতার খসড়া এসেছে, তাতে দেশীয় সংস্থা এবং দেশবাসীর স্বার্থরক্ষায় একাধিক পদক্ষেপ করার প্রস্তাবনা করা হয়েছে। পাশাপাশি, সার্ভারে থাকা দেশবাসীর ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে তাঁদের অজান্তেই অন্য কাজে লাগানোর একাধিক অভিযোগ নানা সময়ে উঠেছে বিদেশি সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে। নয়া খসড়ায় অ্যামাজন-গুগল-ফেসবুকের মতো বৃহৎ বিদেশি সংস্থাগুলিকেও আরও বেশি নজরদারিতে ঘেরার কথাও জানানো হয়েছে। উল্লেখ্য, গত দু’বছর ধরেই দেশে নতুন ই-কমার্স নীতি প্রণয়ন করার চেষ্টা চালাচ্ছে কেন্দ্র। নতুন এই খসড়া প্রস্তুত করেছে বাণিজ্য মন্ত্রকের অধীনে থাকা দপ্তর ‘ডিপার্টমেন্ট ফর প্রোমোশন অফ ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড ইন্টারনাল ট্রেড’। পাশাপাশি গত বছরই ই-কমার্স ক্ষেত্রে সরকারের নয়া বৈদেশিক বিনিয়োগ নীতি চালু করেছিল কেন্দ্র।

নতুন খসড়ায় প্রস্তাব করা হয়েছে, দেশের বিস্তীর্ণ ই-কমার্স ক্ষেত্রে কোনও বিশেষ সংস্থা বা কতিপয় সংস্থা নিয়ম ভেঙে ব্যবসা করে বাকিদের বাজার ব্যাহত করছে কি না, তা দেখার জন্য ‘রেগুলেটর’ নিয়োগ করা হবে। পাশাপাশি বিদেশি সব ই-কমার্স সংস্থাকে তাদের সার্ভারে থাকা অধিকাংশ তথ্য এই ‘রেগুলেটর’-এর নাগালে রাখতে হবে। বাজার নিয়ামক হিসেবে নির্দিষ্ট সময় অন্তর যা খতিয়ে দেখে বাজারে সুস্থ প্রতিদ্বন্দ্বিতা বজায় থাকা নিশ্চিত করবেন তিনি। পাশাপাশি, তিনি কোনও নির্দিষ্ট তথ্য চাইলে, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সংস্থা কর্তৃপক্ষকে তা দিতেই হবে। এই নিয়ম ভাঙলে শাস্তি এবং জরিমানার প্রস্তাবনা করা হয়েছে খসড়ায়।

তবে শুধু গ্রাহকতথ্যই নয়, নতুন আইনে অনলাইনে ভারতে ব্যবসা করা সংস্থাগুলির প্ল্যাটফর্মের ‘সোর্স কোড’ এবং ‘অ্যালগরিদমের’ উপর নজরদারি চালানোর জন্য প্রয়োজনে তা দেখতে চাইতেও পারেন রেগুলেটর। যার ফলে, আড়ালে-আবডালে নিয়ম ভেঙে প্রতিদ্বন্দ্বী এবং বাকিদের উপর নজরদারি বজায় রেখে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া শক্ত হয়ে পড়বে বৃহৎ বিদেশি সংস্থাগুলির পক্ষে, মত বিশেষজ্ঞদের। পাশাপাশি এইসব ই-কমার্স ওয়েবসাইটগুলি যে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অ্যালগরিদম ব্যবহার করে থাকে, সেগুলি প্রয়োজনাতিরিক্ত এবং আইনবর্হিভূত তথ্য সঞ্চিত করছে কি না, সেটা দেখার ‘অনুমতি’ও কেন্দ্র নিয়োজিত নিয়ামককে দিতে হবে।

ই-কমার্স নজরদারিতে নতুন আইন প্রণয়নের পথে কেন্দ্র। সংগৃহীত চিত্র

খসড়ায় কী কী প্রস্তাবনা করা হয়েছে, তা সংশ্লিষ্ট সবপক্ষকে দেখার সুযোগ করে দিতে এবং প্রত্যেকের থেকে এ বিষয়ে মতামত চাওয়ার জন্য পুরো খসড়াটি শীঘ্রই সরকারি ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত কিন্তু নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক আধিকারিক।

তবে বিদেশে সংস্থার মূল সার্ভারে তথ্য রেখে অসাধু উপায়ে ব্যবসা চালানোর বিরুদ্ধে যে দাবি সংস্থাগুলির সম্পর্কে করেছিল দেশীয় সংস্থাগুলির সংগঠন ‘সিএআইটি’, তাতে সরাসরি কোনও প্রস্তাবনা করা হয়নি এই খসড়ায়। শুধু জানানো হয়েছে, সংশ্লিষ্ট সবপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে কোন কোন ক্ষেত্রে সংস্থার সার্ভার দেশের মধ্যেই রাখা প্রয়োজন, সে সম্পর্কে শীঘ্রই সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্র।

এর পাশাপাশি গ্রাহকস্বার্থে যে যে পদক্ষেপ করার কথা বলা হয়েছে এই খসড়ায়, সেখানে দেখা যাচ্ছে, বিদেশে পণ্য হলে, তা আদতে তৈরি কোথায় এবং ভারতে তার কোন পরিমার্জন ও সংস্করণ করা হয়েছে, তা স্পষ্ট ভাষায় জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ই-কমার্স সংস্থাগুলিকে। পাশাপাশি, দেশীয় পণ্যের ক্ষেত্রে, প্রস্তুতকারক সংস্থার ঠিকানা-ফোন নম্বরের পাশাপাশি পণ্য সম্পর্কে কোনও নালিশ-মন্তব্য থাকলে, কোথায় তা জানাতে হবে, তাও গ্রাহককে পরিষ্কার করে জানাতে হবে নতুন আইন কার্যকর হলে।

শুধু ই-কমার্সের পণ্যই নয়, লাইভ স্ট্রিমিং পরিষেবা দেওয়া সংস্থাগুলি, যারা অনলাইনে আর্থিক লেনদেন গ্রহণ করে গ্রাহকদের থেকে, সেইসব পেমেন্ট গেটওয়েগুলিকেও দেশের নয়া প্রস্তাবিত আইন মেনে চলতে হবে বাধ্যতামূলক ভাবে, জানানো হয়েছে খসড়ায়।

পুরো বিষয়টি সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি বিদেশি কোনও সংস্থা কর্তৃপক্ষই।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen