মধ্যাহ্নভোজে ছিলাম না, ক্ষোভপ্রকাশ নিশীথ-সৌমিত্রের

আরও একবার পরিস্থিতি উত্তপ্ত হল কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ের সরকারি বাসভবনে আয়োজিত এক ‘মধ্যাহ্নভোজ’ ঘিরে।

July 30, 2020 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi
ছবি সৌজন্যেঃ উত্তরবঙ্গ সংবাদ

দিল্লিতে রাজ্য বিজেপির পাঁচদিনের রণকৌশলী সভা সমাপ্ত হলেও এখনও তার রেশ রয়ে গেছে রাজধানীতে। এইদিন, আরও একবার পরিস্থিতি উত্তপ্ত হল কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ের সরকারি বাসভবনে আয়োজিত এক ‘মধ্যাহ্নভোজ’ ঘিরে। সূত্রের খবর বুধবার দুপুরে বাবুলের বাড়িতে এক লাঞ্চে আমন্ত্রণ পেয়ে উপস্থিত হন দলীয় সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত, অর্জুন সিং, সৌমিত্র খাঁ, নিশিথ প্রামাণিক ও জগন্নাথ সরকারের মত নেতারা। অথচ ওই মধ্যাহ্নভোজে বিষয়ে কোন খবর পাননি প্রদেশ বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ। জল্পনা উস্কেছে দিলীপের অ্যান্টি-লবি ও মুকুল ঘনিষ্ঠদের ওই মধ্যাহ্নভোজে ডাকা হয়।

উল্লেখ্য দিল্লিতে রাজ্য বিজেপির পাঁচদিনের সাংগঠনিক বৈঠক মূলত আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন ও দলের সাংগঠনিক কার্যাকলাপ সম্পর্কিত পর্যালোচনার জন্য ডাকা হলেও, পরবর্তীতে তা মুকুল রায় বনাম দিলীপ ঘোষের দ্বৈরথে পর্যবসিত হয়। বৈঠক শেষ হলে দিলীপ ও বৈঠক চলাকালীনই কলকাতায় ফিরে আসেন মুকুল রায়। বৈঠক সমাপ্ত হলেও মুকুল, দিলীপকে নিয়ে এখনো চর্চা সব মহলেই। চর্চা রাজ্য বিজেপির অন্দরেও। জানা গেছে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাজিয়াকে কেন্দ্র করে মূলত দু-ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে দল। একদল দিলীপের অনুগত তো অন্য দল মুকুলের সমর্থনে হাজির। এবার সেই বিতর্কে ঢুকে পড়লেন বাবুল সুপ্রিয় ও স্বপন দাশগুপ্ত। দলীয় সূত্রের দাবী, দীর্ঘদিন ধরেই এনারা দিলীপের নেতৃত্বের উপর ভরসা রাখতে অনাগ্রহী। বেশ কয়েকবার তৈরি হয়েছে সংঘাতের আবহ। দলীয় বৈঠকে মুকুলের সঙ্গে দিলীপের বাদানুবাদ ও মন কষাকষির সূত্র ধরে আরও একবার সক্রিয় হয়ে উঠেছেন বিজেপির মুকুলপন্থীরা। বুধবার নতুন করে বিতর্ক উস্কালো বাবুলের মধ্যাহ্নভোজের আসর নিয়ে। উঠেছে অভিযোগ যে ওই মধ্যাহ্নভোজ আসলে মুকুলের সমর্থনে দলবাঁধার ফিকির। কিন্তু এই অভিযোগ নস্যাৎ করেছেন নিশিথ প্রামাণিক ও সৌমিত্র খাঁ র মত সাংসদেরা। তারা সরাসরি জানান, ওই ভোজসভায় তাঁদের উপস্থিতি নিয়ে জল্পনা মাথা চাড়া দিচ্ছে। কিন্তু তারা আজ ওই মধ্যাহ্নভোজে ছিলেন না। আমন্ত্রণ পাওয়া সত্ত্বেও দলের কাজে আরেক রাজ্য বিজেপির নেতা সায়ন্তন বসুর সঙ্গে দিল্লির অপর প্রান্তে অন্য একটি বৈঠকে ছিলেন।

কোচবিহার সাংসদ নিশিথ প্রামাণিকের দাবি, “আমরা ওই বৈঠকে ছিলাম না। অন্য এক মিটিংয়ে ছিলাম। তা সত্ত্বেও আমাদের নাম জড়ানো হচ্ছে।” বিষ্ণুপুর সাংসদ সৌমিত্র খাঁ এই প্রসঙ্গে বলেন, “উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে কেউ বা কারা দলের মধ্যে বিভাজন তৈরির চেষ্টা করছে।” কে করছে সেই প্রশ্নের উত্তরে সৌমিত্র বলেন – “আমাদের দূর্বলতার সুযোগ অনেকেই নিতে পারে। এমনকি শাসক দলও। সামনে নির্বাচন। এই সময় দলের মধ্যে বিভাজন আসলে তাতে দলের ক্ষতি। আর দলের ক্ষতি হলে লাভবান একটা পার্টিই হবে।”
নিশিথ বলেন, “আমাদের কাছে দিলীপ-মুকুল দুজনেই সমান শ্রদ্ধেয়। দুই জনে দলের বড়নেতা। কারো প্রতি কম বা বেশি পক্ষপাতিত্বের কোন জায়গাই নেই।” নাম না করলেও সৌমিত্রের ইঙ্গিত যে তৃণমূল কংগ্রেসের দিকে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক দলের এক শীর্ষ সাংগঠনিক নেতা বলেন, মধ্যাহ্নভোজে যে কেউ ডাকতে পারেন। আমন্ত্রণও করতে পারেন যাকে খুশি তাকে। কেউ তাতে অংশ নিতে পারেন, কেউ নাও নিতে পারেন। তার কী মানে ব্যাক্তিগত সম্পর্ক খারাপ হয়ে গেছে? এই ধরনের মনগড়া প্রচারে কোনো লাভ হবে না। রাজ্য বিজেপির সেই নেতার দাবি, প্রত্যেক দলে উনিশ-বিশ হয়েই থাকে। কিন্তু তা নিয়ে এরকম চর্চা হওয়া উচিত না। দিলীপ-মুকুল নিজেদের মত আছেন। তারা প্রবীণ ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন নেতা। তাদের নিয়ে এইসব জল্পনা না করাই শ্রেয়। এই বিষয়ে অবশ্য বাবুল বা স্বপন বাবুর তরফে কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। প্রশ্ন উঠেছে, মুকুল-দিলীপ সংঘাতের জেরে সত্যিই কী দুইভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে রাজ্য বিজেপি? নাকি পুরোটাই দল ভাঙাভাঙির খেলা? নেপথ্যে রয়েছে কী অন্য কেউ? প্রথমে দলীয় রণকৌশলী সভা ও আজ বাবুল সুপ্রিয়ের ডাকা মুকুলপন্থী-দের ভোজসভা কেন্দ্র করে সেই জল্পনা পুনরায় মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে রাজ্য বিরোধী রাজনীতির অভ্যন্তরে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen