গরম আসতেই ব্যস্ততা বেড়ে যায় জামবনীর ‘হাতপাখার’ গ্ৰাম বলে পরিচিত দুবড়ায়

জামবনী ব্লকের দুবড়া প্রত্যন্ত গ্ৰাম। গাছপালার মাঝে মাটির দেওয়াল ও অ্যাসবেসটসের ছাউনি দেওয়া ছোট ছোট ঘর

March 19, 2025 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: গরমের দিনে বাঙালির একসময় একমাত্র ভরসা ছিল তালপাতার পাখার মিষ্টি বাতাস। গরমের দুপুরে লোডশেডিংয়ের সময় শীতলপাটিতে শুয়ে তালপাতার পাখার হাওয়া খাওয়াটা ছিল এক স্বর্গীয় অনুভূতি। সেই গ্রিক রোমান সভ্যতার যুগ থেকে চলে আসছে এই হাত পাখার ব্যবহার। এখন এসব অতীত। তবে এখনও এই ঐতিহ্য বজায় রেখেছে জামবনী ব্লকের দুবড়া গ্রাম। ‘হাতপাখার’ গ্ৰাম নামে পরিচিতি পেয়েছে।

জামবনী ব্লকের দুবড়া প্রত্যন্ত গ্ৰাম। গাছপালার মাঝে মাটির দেওয়াল ও অ্যাসবেসটসের ছাউনি দেওয়া ছোট ছোট ঘর। বাসিন্দাদের বেশিরভাগই আন্ত্যজ সম্প্রদায়ের। বাড়ির পুরুষরা বছরের বেশিরভাগ সময় দিনমজুর, অন্যের বাড়িতে খাটাখাটনি করে সংসার চালান। ফাল্গুন-চৈত্র মাস এলেই উঠোনো কিংবা বাড়ির সামনে বসে নানা বয়সের পুরুষ ও মেয়েরা তালপাতা দিয়ে পাখা বানাতে শুরু করে দেন। জৈষ্ঠ্য মাসের শেষ পর্যন্ত চলে এই ব্যস্ততা। ঝাড়গ্রাম ছাড়াও তালপাতা পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলোতে বিক্রির জন্য যায়। পাইকাররা ১২ টাকা পিস ধরে এক একজনের কাছে হাজারের ওপর তালপাতা কিনে নিয়ে যান। খোলা বাজারে বিক্রি করলে তালপাতার দাম ১৫ টাকা মেলে।

তালপাতা সংগ্রহের পর রোদে শুকাতে দেওয়া হয়। তারপর জলে ভিজিয়ে নরম করতে হয়। পাতার ডাটির জায়গায় সতর্কভাবে কাটতে হয়। না হলে ভালো পাখা তৈরি হয় না। বাঁশের ছিলা দিয়ে পাখার চারপাশ বাঁধা হয়। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করলে দিনে একশোটা পাখা তৈরি করা যায়। দুবড়ার কালিন্দী পাড়ার বাসিন্দা রঞ্জিত বৈঠা বলেন, ফাল্গুন মাস থেকে গ্ৰামের ঘরে ঘরে তালপাতার পাখা তৈরি শুরু হয়ে যায়। জঙ্গল থেকে তালপাতা সংগ্ৰহ করে আনা হয়। আবার কারও জমিতে তাল গাছ থাকলে টাকা দিয়ে তালপাতা সংগ্ৰহ করি। পাতা প্রথমে রোদে শুকাতে হয়। তারপর জলে ভিজিয়ে নরম করা হয়। পাতার গোঁড়ায় লেগে থাকা ডাটির অংশ সতর্কভাবে কাটতে হয়। বাঁশের লম্বা ছিলা পাতার চারপাশে সুতো দিয়ে বাঁধতে হয়। পাখা তৈরি হলে পাইকারদের কাছে বিক্রি করা হয় । বেশিরভাগ তালপাতা টাটা ও খড়গপুরে বিক্রির জন্য যায়। তালপাতার পাখা তৈরিই আমাদের মূল পেশা। প্লাস্টিকের পাখাও বাজারে বিক্রি হয়। কিন্তু তালপাতার পাখার চাহিদা কিন্তু কমেনি। সরকার যদি আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে তাহলে আরও বেশি তালপাতা তৈরি করা সম্ভব হবে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen