১০/১১ দিল্লি বিভীষিকা: বন্ধুদের আড্ডা থেকে একমাত্র রোজগেরে, মুহূর্তে সব শেষ

November 11, 2025 | 3 min read
Published by: Saikat

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ২০:০৫: ১০ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টা ৫২ মিনিট। দিল্লির লালকেল্লার সামনে ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ। সোমবারের সেই ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা দেশকে। বিস্ফোরণে নিহতদের পরিবারের কান্নায় ভরে উঠেছিল রাজধানীর বাতাস। মঙ্গলবার সকাল থেকে সেখানে ভিড় করেছেন নিহত ও গুরুতর আহতদের আত্মীয়রা। হাসপাতালের গেটের বাইরে কান্না, অসহায়তা আর হতাশার ছবি ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে।

এখনও পর্যন্ত এই বিস্ফোরণে মৃতের সংখ্যা ১৩। তবে কয়েকটি দেহের পরিচয় এখনও নিশ্চিত করা যায়নি। যাঁদের পরিচয় জানা গেছে তাঁদের মধ্যে রয়েছেন উত্তরপ্রদেশের আমরোহা জেলার অশোক কুমার, দিল্লির অমর কাটারিয়া, হাসানপুরের লোকেশ আগরওয়াল, মেরঠের মহসিন এবং শামলির নোমান।

পরিবারের একমাত্র ভরসা ছিল, কিন্তু আর নেই অশোক। দিল্লি ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশনের বাস কন্ডাক্টর অশোক কুমার ছিলেন পরিবারের একমাত্র রোজগেরে। মঙ্গলবার তাঁর চাচাতো ভাই পাপ্পু হাসপাতালের বাইরে দাঁড়িয়ে বলেন, “আমি খবর পড়ে বিশ্বাসই করতে পারিনি। লিস্টে নামটা দেখেই অবাক হয়ে যাই। ফোন করে খোঁজ নিলাম। ওর বাইকটাও এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি।”

অশোকের পরিবারে স্ত্রী আর চার সন্তান। তাঁরা থাকেন জগতপুরে, দুর্ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে। পাপ্পুর কথায়, “ওর বড় ভাই অসুস্থ, তাই পরিবারের সব দায়িত্ব ওর ওপরই ছিল।” অশোকের বোন ভুরি কান্না চেপে বললেন, “ও তিনটে বাচ্চা রেখে চলে গেল। এটা সন্ত্রাসী হামলা, দোষীদের শাস্তি চাই।”

বন্ধুত্বের দেখা মিলল না, একসঙ্গে হল মৃত্যু। অশোকের ঘনিষ্ঠ বন্ধু লোকেশ আগরওয়াল ছিলেন হাসানপুরের সার বিক্রেতা। অসুস্থ আত্মীয়ের খোঁজে সোমবার দিল্লিতে এসেছিলেন তিনি। ফেরার পথে বন্ধুর সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল, কিন্তু ভাগ্য সেদিন অন্য কিছু লিখেছিল।

রিকশা চালকের মা’র আর্তি- “আমার ছেলের বিচার চাই”। মেরঠের মহসিন ই-রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতেন। তাঁর দুই ছোট সন্তান। মা সজিদা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “আমার ছেলেটার বিচার চাই… ওর ছোট বাচ্চাগুলো এখন কী করবে?”

মহসিনের ভাই জানান, “রাত দেড়টা নাগাদ খবর পাই। হাসপাতালে পৌঁছে দেখি দেহটা পড়ে আছে। আমাদের ভেতরে ঢুকতেও দেওয়া হয়নি।”

বাজারে গিয়ে আর ফেরেননি নোমান। শামলির ব্যবসায়ী নোমান সোমবার দিল্লিতে এসেছিলেন দোকানের জিনিসপত্র কিনতে। কিন্তু রাতে ফোন আসে- দুর্ঘটনা ঘটেছে। হাসপাতালে গিয়ে পরিবার জানতে পারে, তিনি আর নেই। তাঁর এক আত্মীয় বলেন, “ওর একটা কসমেটিকস দোকান ছিল। বাজারে গিয়েছিল জিনিস আনতে। আমরা কঠোর শাস্তি চাই।”

বিস্ফোরণে নোমানের ২১ বছরের এক আত্মীয়, আমানও গুরুতর জখম হন। এখনও পর্যন্ত কয়েকজন নিহতের পরিচয় শনাক্তকরণের কাজ চলছে। পুলিশ ও প্রশাসন তদন্ত শুরু করেছে। কিন্তু যাদের প্রিয়জন হারিয়েছেন, তাদের কাছে এখন একটাই চাওয়া-“দোষীরা যেন শাস্তি পায়, আর কারও জীবন যেন এমনভাবে থেমে না যায়।”

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen