১ আগস্টেও বন্ধ ১০০ দিনের কাজ! কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ফের হাইকোর্টের পথে খেতমজুররা
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই কেন্দ্র বাংলার জন্য ১০০ দিনের প্রকল্পের অর্থ বন্ধ করে দিয়েছে বলে অভিযোগ।

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৭.৪৫: কলকাতা হাইকোর্টের স্পষ্ট নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও ১ আগস্ট থেকে রাজ্যে চালু হল না ১০০ দিনের কাজের (MGNREGA) প্রকল্প। কেন্দ্রীয় অর্থের জোগান না থাকায় কার্যত অচল এই কর্মসংস্থান প্রকল্প। ফলে ফের আদালতের দ্বারস্থ হতে চলেছে মামলাকারী সংগঠন পশ্চিমবঙ্গ খেতমজুর সমিতি।
সংগঠনের পক্ষ থেকে আইনজীবী পূর্বায়ন চক্রবর্তী জানিয়েছেন, “হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল প্রকল্প চালুর। কিন্তু এখনও বহু এলাকায় ৪(ক) ফর্ম জমা নেওয়া হচ্ছে না। সোমবার আমরা বিষয়টি ফের আদালতে তুলব।” মামলার পরবর্তী নির্ধারিত শুনানি ১৮ আগস্ট হলেও তার আগেই বিষয়টি ‘মেনশন’ করা হবে বলে জানান তিনি।
বর্তমানে ‘এসএনএস স্পর্শ’ নামে একটি প্রযুক্তির মাধ্যমে ১০০ দিনের প্রকল্পের টাকা পাঠানো হয়। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের (RBI) মাধ্যমে সেই টাকা কেন্দ্র রাজ্যের হাতে তুলে দেয়। তবে অভিযোগ, এখনও পর্যন্ত সেই অর্থ রাজ্যে এসে পৌঁছায়নি। রাজ্য সরকার অবশ্য এই পদ্ধতির প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি আগেই সেরে রেখেছে।
১ আগস্ট ৪(ক) ফর্ম জমা দিতে রাজ্যের নানা প্রান্তে খেতমজুরদের মিছিল ও জমায়েত হলেও, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মালদা, দক্ষিণ দিনাজপুর-সহ একাধিক জেলায় অভিযোগ উঠেছে প্রশাসন ‘অনুমতি নেই’ বলে আবেদন গ্রহণ করেনি। এতে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে খেতমজুররা।
সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের রাজ্য সভাপতি তুষার ঘোষ জানিয়েছেন, “আমরা রাজপথে নামছি। কেন্দ্রকে স্পষ্ট বলতে হবে, কাজ না দিলে ভাতা দিতে হবে। নইলে আমরা আইনি লড়াই চালিয়ে যাব।” একইসুরে পশ্চিমবঙ্গ খেতমজুর সমিতির সম্পাদক সন্দীপ সিংহ বলেন, “ব্লকে ব্লকে কাজের আবেদন জমা নিচ্ছে না প্রশাসন। এটা আদালতের নির্দেশ অমান্য করা। কেন্দ্রও নীরব ভূমিকা নিচ্ছে।”
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই কেন্দ্র বাংলার জন্য ১০০ দিনের প্রকল্পের অর্থ বন্ধ করে দিয়েছে বলে অভিযোগ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) একাধিকবার কেন্দ্রকে আক্রমণ করে বলেছেন, “দুর্নীতির অজুহাতে গরিবের হক আটকে রাখা হচ্ছে।” অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) নেতৃত্বে একাধিকবার দিল্লিতে ধর্ণা-অবস্থান হয়েছে। পরে রাজ্য সরকার নিজে থেকে কিছুটা টাকা মিটিয়ে ‘কর্মশ্রী’ নামে বিকল্প প্রকল্প চালু করে, যেখানে গত বছর ৫৮ দিনের কাজ দেওয়া হয়েছিল। এবার তা বাড়িয়ে ৭০ দিন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court) কেন্দ্রকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিল, “চাইলে শর্ত আরোপ করুন, কিন্তু গরিব মানুষদের কাজ বন্ধ রাখা যাবে না।” কিন্তু কেন্দ্রীয় অনড় অবস্থানের ফলে এখনও পর্যন্ত প্রকল্প চালু হয়নি। আগামী সপ্তাহে ফের আদালতের হস্তক্ষেপেই হয়তো এই সংকটের সাময়িক সমাধান দেখা যাবে, এই আশায় রাজ্যের হাজার হাজার খেতমজুর।