কোরোনার তৃতীয় ঢেউ সামলাতে শিশুস্বাস্থ্য রক্ষায় প্রশিক্ষিত হচ্ছেন ৬০ হাজার আশা কর্মী
বিশেষজ্ঞদের একাংশের আশঙ্কা, এই তৃতীয় ঢেউয়ে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হতে পারে শিশুরা। তাই কার্যত পাড়ায় পাড়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা ও নজরদারি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে শহর ও গ্রামীণ আশাকর্মীদের সামনের সারিতে রাখছে রাজ্য সরকার।

করোনার তৃতীয় ঢেউ সামাল দিতে রাজ্যজুড়ে ময়দানে নামানো হচ্ছে প্রশিক্ষিত আশাকর্মীদের। বিশেষজ্ঞদের একাংশের আশঙ্কা, এই তৃতীয় ঢেউয়ে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হতে পারে শিশুরা। তাই কার্যত পাড়ায় পাড়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা ও নজরদারি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে শহর ও গ্রামীণ আশাকর্মীদের সামনের সারিতে রাখছে রাজ্য সরকার। এজন্য তাঁদের রীতিমতো প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্যদপ্তর। ১৪ জুলাই থেকে দু’দফায় ওই প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য সমস্ত জেলাকে নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। প্রতিটি ব্লক ও পুরসভা স্তরে ওই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। স্বাস্থ্য প্রশাসনের হিসেব মতো, করোনার (Covid 19) তৃতীয় ঢেউ আসার আগেই শহর ও গ্রাম মিলিয়ে প্রায় ৬০ হাজার আশাকর্মী (ASHA workers) ময়দানে নেমে পড়বেন।
ঠিক কী কাজ করবেন এই প্রশিক্ষিত কর্মীরা? স্বাস্থ্যভবনের ৬ জুলাইয়ের অর্ডার অনুসারে, শিশু আছে এমন প্রতিটি বাড়িতে নজরদারি করবেন তাঁরা। রোগলক্ষণ যাচাই, বাড়িতে থেকে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া এবং প্রয়োজন বোধে হাসপাতালে রেফারের ব্যবস্থাও আশাকর্মীরা করবেন। সংশ্লিষ্ট পুরসভা বা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক ও এএনএমদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে এই কাজ তাঁদের করতে হবে। সর্বোপরি, রাজ্য সরকার একটি কমিউনিটি ভিত্তিক প্রতিরোধ প্রাচীর গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে। স্বাস্থ্যদপ্তরের মতে, এতেই সুষ্ঠু পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হবে। তবে পাশাপাশি হাসপাতালের পরিকাঠামোর উন্নতির উপরে জোর দেওয়ার কথাও ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে। বিশেষ করে হাসপাতালগুলিতে আইসিইউ এবং এইচডিইউ ব্যবস্থা উন্নত করার কথা বলা হয়েছে।
করোনার প্রথম সংক্রমণের পর্ব থেকে আশাকর্মীদের সরকার ময়দানে নামিয়েছিল। কিন্তু তাঁদের কাজ কেবল নজরদারির উপরেই সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছিল। কিন্তু তৃতীয় ঢেউয়ের (Covid Third Wave) আশঙ্কায় একধাপ এগিয়ে ভাবছে রাজ্য সরকার। আর সেই কারণে দু’ধরনের আশাকর্মীদেরই প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাতে শুরু নজরদারিই নয়, প্রাথমিক পর্বের চিকিৎসা পরামর্শটুকুও তাঁরা সরবরাহ করতে পারে। সেক্ষেত্রে শিশুদের শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা মাপা, তাদের শারীরিক পরিস্থিতি যাচাই করা, শ্বাসজনিত সমস্যার গতিপ্রকৃতি নির্ণয় করার দায়িত্বও আশাকর্মীদের দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞতার ওই কাজে তাঁদের প্রাথমিক জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য পদক্ষেপ করেছে সরকার।
স্বাস্থ্য প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, প্রথম দফায় ভার্চুয়াল ট্রেনিং দিয়ে আশাকর্মীদের প্রশিক্ষক তৈরি করা হবে। ৯ ও ১৩ জুলাই দু’দফায় ওই ট্রেনি টিচারদের প্রশিক্ষণ হবে। প্রাথম দিন রাজ্যের প্রতিটি ব্লকের বিএমওএইচ, সমস্ত এএনএম (নার্স) ও মেডিক্যাল অফিসারকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ১৩ জুলাই পুরসভার হেলথ অফিসার, পুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মেডিক্যাল অফিসার, এএনএম এবং স্টাফ নার্সদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। দ্বিতীয় দফায় এই প্রশিক্ষিতরা আশাকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেবেন। ১৪ ও ১৬ জুলাই দু’দিন আশাকর্মীদের প্রশিক্ষণ হবে।
এই প্রশিক্ষণ অবশ্য নির্দিষ্ট স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে হাতেকলমে দেওয়া হবে। এই ট্রেনিং কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছে, ‘পেডিয়াট্রিক কোভিড ম্যানেজমেন্ট ট্রেনিং’। শুধু ট্রেনিং দেওয়ার নির্দেশিকাই নয়, ট্রেনিংয়েও নজরদারি রাখছে স্বাস্থ্যদপ্তর। প্রত্যেক দিনের প্রশিক্ষণ নিয়ে পরদিনই রিপোর্ট পাঠাতে বলা হয়েছে। ফলত, করোনার তৃতীয় ঢেউ থেকে শিশুদের নিরাপদ রাখতে কোমর বেঁধেই নামছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দপ্তর ও সরকার।