রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

সরকারি হাসপাতালে কাজ না করে প্রাইভেটে অপারেশন বরদাস্ত নয়: স্বাস্থ্য অধিকর্তা

November 12, 2021 | 2 min read

আম-জনতার চিকিৎসার সুবিধার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee) রাজ্যে স্বাস্থ্যসাথী পরিষেবা চালু করেছেন। এক কার্ডেই মুশকিল আসান! কিন্তু সেই স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের ছিদ্রপথ ধরেই অপচয় হচ্ছে সরকারি অর্থ। এমনই অভিযোগ তুললেন খোদ স্বাস্থ্যকর্তা অজয় চক্রবর্তী। এই অর্থের অপব্যয় নিয়ে বেসরকারি হাসপাতাল, নার্সিংহোম তো বটেই, স্বাস্থ্যকর্তার নিশানায় সরকারি চিকিৎসকদেরও একাংশ। প্রকল্পের আড়ালে সরকারি অর্থ ‘লুট’ করা বন্ধ না হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্তা।

বুধবার এক বৈঠকে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের কড়া বার্তা দিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা। তাঁর বক্তব্য, সরকারি হাসপাতালে সময় না দিয়ে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের লভ্যাংশের বিনিময়ে বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করছেন সরকারি চিকিৎসকদের একাংশ। অজয় চক্রবর্তী বলেন, “আমাদের হাসপাতালের যিনি চোখের ডাক্তারবাবু আছেন, তিনি হাসপাতালে অপারেশন করছেন না। অথচ বাইরে গিয়ে প্রচুর অপারেশন করছেন। এখান থেকে আপনি মাইনে নেবেন, অথচ সরকারি পরিষেবা দেবেন না। এটা তো প্রতারণা মানুষের সঙ্গে। এটা হতে পারে না কেউ সরকারি হাসপাতালে চাকরি করছেন অথচ কাজটা এখানে ফাঁকি পড়ছে। দু’ জায়গায় কাজ করুন, সমান ভাবে করতে হবে। কিন্তু হাসপাতালে কিছুই করবেন না, সারা বছরে চারটে অপারেশন করেছেন। সেই তিনিই বাইরে গিয়ে প্রাইভেটে যে কত অপারেশন করেছেন তার হিসাব নেই। এটা চলবে না।”

একই সঙ্গে বেসরকারি নার্সিংহোমগুলোর জন্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তীর বার্তা, “খুব সামান্য কিছু ক্ষেত্রে আমরা দেখছি টাকাটা এদিক ওদিক হয়ে যাচ্ছে। এমন হচ্ছে রোগীকে বেশিদিন ধরে যুক্তিহীন ভাবে রেখে দেওয়া হচ্ছে। প্যাকেজ একটা এমন করা হচ্ছে যেটার দরকার নেই, রোগীর যা রোগ দেখানো হচ্ছে অন্য রোগ! সকলে মিলে আমরা যদি সচেতন না হই, নিজেদের প্রতি একটা বিশ্বাস, ভাল অভ্যাস নিজেরা যদি না তৈরি করি তা হলে এই পরিকল্পনাটা বন্ধ হয়ে যাবে। এখন আমরা একটা দু’টো প্যাকেজ বন্ধ করছি। আগামিদিনে আরও অনেকগুলো হয়তো প্যাকেজ বন্ধ হয়ে যাবে।”

যোগ্য নার্সিংস্টাফ ও চিকিৎসকের উপস্থিতি নিয়েও কঠোর অবস্থান ব্যক্ত করেন তিনি। অজয় চক্রবর্তী বলেন, “আমরা এমনও দেখছি একেক নার্সিংহোমে একজনও কোয়ালিফায়েড নার্সিং স্টাফ নেই। সেই নার্সিংহোম বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া আমাদের আর কোনও উপায় থাকবে না। কারণ, ওই মানুষটার হাতে তো আমরা রোগীর ভার ছাড়তে পারব না। কোনও নার্সিংহোম রোগীকে মারবে, তার কোয়ালিফায়েড নার্সিংস্টাফ থাকবে না, এরকম চিকিৎসা পরিষেবা আমরা চলতে দিতে পারব না। এ ব্যাপারে আমরা কঠোর। এক দু’জন আরএমও যেন সবসময় থাকেন। এটা অত্যাবশ্যক। একই সঙ্গে যদি ডাক্তার না থাকেন সেটাও মানা হবে না। তিনি অন্য জায়গায় আছেন, কল দিলে তিনি এলেন, এটা হবে না।”

স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, এই মুহূর্তে প্রতিদিন আট কোটি টাকা করে ক্লেম হচ্ছে। মাসে ২৪০ কোটি টাকা ক্লেম হচ্ছে। সরকারকে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের জন্য এই টাকাটা ব্যয় করতে হচ্ছে। স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের বক্তব্য, এখন প্রায় ২৫০ কোটি টাকা খরচ হলেও তা ৩০০ থেকে ৩৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যয় করা সম্ভব। তার বেশি হয়ে গেলে এই প্রকল্পের নিশ্চয়তা প্রশ্নের মুখে পড়তেও পারে। তাই স্বাস্থ্যদফতর চাইছে কোনও ভাবেই এই প্রকল্পের টাকা অপচয় করা যাবে না। সেক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল দু’পক্ষকেই এগিয়ে আসতে হবে।

উল্টোদিকে বেসরকারি হাসপাতালগুলি বলছে, সরকার নজরে রাখুক তাঁদের দিকে, যাঁরা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের সুবিধা নিচ্ছেন। সেখানে সরকারি নিয়ন্ত্রণ চাইছে তারা।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#hospital, #Swasthasathi Card

আরো দেখুন