ট্রেনের টিকিটে প্রবীণদের জন্য ভাড়া ছাড়ের সুবিধা তুলে দিচ্ছে বিজেপি সরকার?
করোনা পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক রেল পরিষেবা বন্ধ হওয়ার সময় ট্রেনের ভাড়ায় দেওয়া অধিকাংশ ছাড়ই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এখন রেল করোনাকালের আগের নিয়মে ফিরে গেলেও বন্ধ হয়ে যাওয়া ছাড় নতুন করে চালু হয়নি। সূত্রের খবর, প্রবীণ নাগরিক-সহ যে সব ক্ষেত্রে ছাড় এখন বন্ধ রয়েছে সেগুলি নতুন করে চালু না করার পক্ষে রেলবোর্ড। সম্প্রতি রেল বিষয়ক সংসদীয় কমিটিও টিকিটে ছাড়ের জন্য রেলের যে ক্ষতি হচ্ছে তা বন্ধ করা যায় কি না তা বিবেচনার কথাও বলেছে। প্রবীণদের জন্য ছাড় এখনই চালু হচ্ছে না বলে সংসদে জানিয়েছেন স্বয়ং রেলমন্ত্রী অশ্বিন বৈষ্ণো। তবে পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া বা নতুন করে চালু না করার ব্যপারে তিনি কিছু বলেননি। লোকসভায় এক লিখিত উত্তরে তিনি শুধু জানিয়েছেন, করোনা অতিমারি এবং সে জন্য সরকারের প্রোটোকল অনুযায়ী এখনই টিকিটে ছাড় চালু করা যাচ্ছে না। তবে রেল সূত্রে খবর, প্রবীণদের অনেকেই ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও ছাড়ের সুযোগ নেন। কর্তৃপক্ষ সেই সুযোগ তুলে দেওয়ার পক্ষে। তবে পড়ুয়া, রোগী ও প্রতিবন্ধীদের ছাড়ের বিষয়টি রাখার পক্ষেই মত রেলকর্তাদের।
প্রসঙ্গত রেল মোট ৫৩ রকম ছাড় দিয়ে থাকে। দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পরে ২০২০ সালের ২২ মার্চ অধিকাংশ ছাড় দেওয়া স্থগিত রাখা হয়। প্রতিবন্ধী, রোগী এবং ছাত্রছাত্রীদের জন্য ১৫ রকমের ছাড় চালু থাকে। এখনও সেই ব্যবস্থাই চলছে। হিসাব বলছে টিকিটে সবচেয়ে বেশি ছাড়ের সুবিধা পান প্রবীণ নাগরিকরা। রেলের নিয়ম অনুযায়ী মহিলাদের ক্ষেত্রে ৫৮ বছর ও পুরুষের ক্ষেত্রে ৬০ বছরের বেশি বয়স হলেই এই ছাড়া দেওয়া হয়। মহিলাদের ক্ষেত্রে ভাড়ার ৫০ শতাংশ এবং পুরুষের ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ ছাড় পাওয়া যায়। যা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে।
কত যাত্রী এই সুবিধা নেন তার আন্দাজ পাওয়া যায় একটি রিপোর্ট থেকে। সম্প্রতি মধ্যেপ্রদেশের এক ব্যক্তি তথ্যা জানার অধিকার আইনে রেলের কাছে জানতে চেয়েছিলেন করোনাকালে কত প্রবীণ নাগরিক ছাড় ছাড়াই ট্রেনে চড়েছেন। সেই প্রশ্নের উত্তরে রেল জানায়, ২০২০ সালের ২২ মার্চ থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট তিন কোটি ৭৮ লাখ ৫০ হাজার ৬৬৮ জন প্রবীণ নাগরিক পুরো ভাড়া দিয়ে রেলে সফর করেছেন।
প্রবীণ নাগরিকদের ভাড়ায় ছাড় বন্ধ করে দেওয়া নিয়ে অতীতেও অনেক আলোচনা হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে রেলের কাছে তা বন্ধ করার প্রস্তাবও আসে। একটা সময় পর্যন্ত প্রবীণ নাগরিকরা দূরপাল্লার ট্রেনের টিকিট কাটলে আপনাআপনিই ছাড় পেয়ে যেতেন। ২০১৬ সালে এই ছাড়কে ঐচ্ছিক করে দেওয়া হয়। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে রেল নতুন ব্যবস্থা চালু করে। তাতে কোনও প্রবীণ নাগরিক চাইলে ছাড়ের পুরো বা আংশিক টাকা প্রত্যাখ্যান করতে পারেন। তবে তাতে খুব একটা সুবিধা হয়নি। ২০১৯ সালের ক্যাগ রিপোর্ট থেকে জানা যায়, মোট প্রবীণ নাগরিক যাত্রীদের মধ্যে মাত্র ১.৭ শতাংশ অর্ধেক ভাড়া এবং ২.৪৭ শতাংশ পুরো ভাড়া প্রত্যাখ্যান করেছেন।
রেল যাতে আগামী দিনে সব রকমের ছাড় দেওয়া নিয়ে পর্যালোচনা করে সে প্রস্তাব দিয়েছে সংসদীয় কমিটিও। গত ৩০ নভেম্বর বিজেপি সাংসদ রাধামোহন সিংহের নেতৃত্বাধীন কমিটি যে রিপোর্ট দিয়েছে তাতে বলা হয়েছে, ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষে ছাড় বাবদ রেলের আয় কমে ১,৬৭০ কোটি টাকা। এর পরে ২০১৭-১৮ এবং ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে ক্ষতির পরিমাণ যথাক্রমে ১,৮১০ ও ১,৯৯৫ কোটি টাকা। এই তথ্য দিয়েই কমিটি জানিয়েছে, বছরে বছরে বেড়ে চলা এই ক্ষতি কমানোর জন্য ভাবনাচিন্তা করুক রেল। ভাড়ায় ছাড়ের অপব্যবহার হচ্ছে কি না সেটাও খতিয়ে দেখা হোক। ট্রেনের ভাড়ায় ছাড় দেওয়া পান যুদ্ধ মৃতের স্ত্রী থেকে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষকরা। ক্রীড়াবিদ, কৃষক, শিল্পীরাও ছাড় পেয়ে থাকেন। এ সবই এখন বন্ধ রয়েছে। রেল সূত্রে খবর, নতুন করে এর কোনওটাই আর চালু নাও হতে পারে।