কলকাতা পুরভোটের আগে ভোটার স্লিপ বিলি করতে ব্যর্থ বিজেপি
কলকাতা পুরভোটে আরও বেআব্রু হল বিজেপির সাংগঠনিক দৈন্যদশা। আজ রবিবার ভোট। তার আগে শহরের অধিকাংশ এলাকায় দলের তরফে ভোটার স্লিপ বিলি করতে পারেনি গেরুয়া পার্টি। শুধু তাই নয়, অর্ধেকের বেশি বুথে আজ বিজেপি এজেন্ট দিতে পারছে না। এবার কলকাতা পুরভোটে ১৪৪টি ওয়ার্ডে মোট বুথের সংখ্যা ৪ হাজার ৯৫৯টি। সেই সূত্রে, একজন এজেন্ট এবং তার রিলিভার মিলিয়ে মোট ৯ হাজার ৯১৮ জন বুথ কর্মী প্রয়োজন বিজেপির। কিন্তু ভোটের আগের দিনও তার অর্ধেক বুথ এজেন্ট জোগাড় করতে পারেনি দল। বোরো ভিত্তিক বুথ এজেন্টদের হিসেব চেয়ে বারবার তাগাদা দিচ্ছেন রাজ্য নেতারা। বহু ক্ষেত্রে ভুয়ো বুথ এজেন্টের নাম জমা পড়েছে বলে স্বীকার করে নিয়েছেন বিজেপির এক শীর্ষ পদাধিকারী। এক্ষেত্রে ভোটের দিন ‘মুখ পোড়া’ রুখতে শনিবার থেকে শুরু হয়েছে বিকল্প ব্যবস্থা। বোরো ভিত্তিক বিজেপির বুথ এজেন্টের নাম, টেলিফোন নম্বর, বাড়ির ঠিকানা দিয়ে লিখিত তালিকা চাওয়া হয়েছে। তাতে ‘জল’ আছে কি না ধরতে দলের ‘কল সেন্টারের’ কর্মীদের দিয়ে ফোন করে ‘প্রকৃত’ বুথ এজেন্টদের তথ্য তালাশ চলছে। সবমিলিয়ে আজ শহরের কত বুথে বিজেপির এজেন্ট দেখা যাবে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না রাজ্য নেতারা।
এ প্রসঙ্গে দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁর প্রতিক্রিয়া মেলেনি। দলের মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের কথায়, এ ধরনের তথ্য আমার কাছে নেই। তবে বিধানসভা ভোট পরবর্তী হিংসায় দলের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতৃত্ব সাধ্যমতো দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে। কলকাতা পুরভোটে শাসক তৃণমূল আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করেছে, যাতে বিরোধী দল ও জনতা বুথে যেতে না পারে। সম্প্রতি কলকাতা পুরভোট নিয়ে এক জরুরি বৈঠকে বুথ এজেন্ট বসানো নিয়ে এই সমস্যার কথা আগাম আলোচনা হয়েছিল। সেখানে প্রস্তাব দেওয়া হয়, কেন আগে থেকে বুথ এজেন্টদের তালিকা তৈরি করা হবে না? কেন বিকল্প এজেন্টদের নিয়ে আগাম প্রস্তুতি সেরে রাখা হবে না? পুরভোটের কয়েক দিন আগে দলের ১৭ জন বিধায়ককে এভাবে হঠাৎ করে একটি করে বোরোর দায়িত্ব দেওয়ার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল। যদিও রাজ্য পার্টির সংগঠনের দায়িত্বে থাকা নেতারা বুথ এজেন্ট কিংবা ভোটার স্লিপ বিলি সংক্রান্ত এই ব্যর্থতা ঢাকার দাওয়াই দিতে পারেননি।
দলের এক নেতার দাবি, বিধানসভা ভোটে আমরা প্রায় ৯০ শতাংশ বুথ এজেন্ট দিতে পেরেছিলাম। কিন্তু তার কৃতিত্ব ছিল জাতীয় নির্বাচন কমিশনের। কেন? জবাবে ওই নেতা বলেন, বিধানসভায় আমরা ওই নির্বাচনী ক্ষেত্রের যেকোনও প্রান্ত থেকে লোক জোগাড় করে বুথে বসিয়ে ছিলাম। কিন্তু পুরসভা ভোটে তা করা যাবে না। কারণ, নিয়ম অনুযায়ী, কাউন্সিলর নির্বাচনে নির্দিষ্ট পার্টের অর্থাৎ বুথের ভোটারকেই এজেন্ট হতে হয়। কলকাতার প্রতিটি বুথে এই মুহূর্তে আমাদের কর্মী খুঁজে পাওয়াই কঠিন। তারপরও বিধানসভা ভোট পরবর্তী হিংসাত্মক অভিজ্ঞতার পর বিজেপি প্রার্থীর হয়ে কেউ বুথে বসতে চাইছে না। দলের তরফে প্রত্যেক বুথ এজেন্টের জন্য নগদ এক হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে। বিজেপির এক প্রার্থীর সরল স্বীকারোক্তি, আমি পাঁচ হাজার টাকা অফার করেছিলাম। তাও বুথ এজেন্ট হতে অনেকে রাজি হচ্ছে না।